আলোচিত

২৫ হাজার শ্রমিক চাকরিচ্যুত, ৪০ কারখানা বন্ধ

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে এখন দেশের তৈরি পোশাক শিল্প খাত। গত সাত মাসে ২৫ হাজার গার্মেন্ট শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। বন্ধ হয়ে গেছে অন্তত ৪০টি কারখানা।

তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেছেন, ‘‘আমরা আর পারছি না। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে৷ গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ২৫ হাজার শ্রমিককে বাদ দিয়ে বাধ্য হয়েছেন মালিকরা। এখন সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এ সেক্টরকে টিকিয়ে রাখা কঠিন।’

গত বৃহস্পতিবারও রাজধানীর তেজগাঁওয়ে নাসা মেইনল্যান্ড গার্মেন্টের শ্রমিকরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ করেন। সেখানে বিনা নোর্টিসে দেড়শ শ্রমিককে চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদ জানান তারা। গত ঈদুল আযাহার আগে একযোগে ২২টি গার্মেন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত আগস্টে এসএফ ডেনিম অ্যাপারেলস লিমিটেড নামে তেজগাঁওয়ের আরেকটি কারখানার ৭০০ শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হলে সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে।

এ পর্যন্ত ৪০টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন এই খাতের মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষই।

তবে পরিস্থিতি এতটা খারাপ নয় বলে দাবি করেছেন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার। তিনি বলেন, ‘‘এটা নিয়ে এক ধরনের প্রোপাগান্ডা হচ্ছে, আমাদের রপ্তানি কি কমেছে, একটুও কমেনি। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? আসলে বড় পুঁজির কাছে ছোট পুঁজির মালিকেরা মার খাচ্ছেন, ছোট কারখানাগুলো বন্ধ হচ্ছে। বড়দেরগুলো কিন্তু আরো বড় হচ্ছে। বিদেশে যে টাকা পাচার হচ্ছে এর মধ্যে গার্মেন্ট মালিকরাও আছেন। বিদেশে টাকা পাঠিয়ে এখন তারা বলছেন সব শেষ।”

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘‘বর্তমানে আমরা যে পরিস্থিতি পার করছি, সেখানে শুধু বিজিএমইএর পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়, সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। এমনকি শ্রমিকদেরও প্রতিষ্ঠানকে ভালোবাসতে হবে। কথায় কথায় আন্দোলন, ভাংচুর, প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলে হবে না। গার্মেন্টগুলো কমপ্লায়েন্স করতে গিয়ে মালিকরা হিমশিম খাচ্ছেন। আবার বায়াররাও দাম বাড়াচ্ছেন না৷ পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, চীনের সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। চীনের একজন শ্রমিক যে কাজ করেন, বাংলাদেশের তিনজন শ্রমিক সেই কাজ করেন, ফলে আমরা পিছিয়ে পড়ছি।”

বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হকও বলছিলেন, ‘‘বায়ারদের উপর সমন্বিতভাবে চাপ দিতে হবে। তারা কমপ্লায়েন্সের কথা বলবেন, কিন্তু পোশাকের দাম বাড়াবেন না, তাহলে আমরা কিভাবে টিকে থাকব? কয়েকদিন আগে জার্মান রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিল, তিনি বলছিলেন, সবাই মিলে চেষ্টা করলে বায়াররাও নিশ্চয় কথা শুনবেন। অক্টোবরে আমরা বাণিজ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি, সেখানে এইসব বিষয় নিয়ে কথা হবে।”

রানা প্লাজা দুর্ঘটনার আগে বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান ছিল প্রায় পাঁচ হাজার। ওই দুর্ঘটনার কমপ্লায়েন্সের জন্য প্রায় দেড় হাজার কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে বিজিএমইএর সদস্য তিন হাজারের কিছু বেশি। এই সেক্টরে কাজ করেন ৪০ লাখ শ্রমিক। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী শ্রমিক।

গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, ‘‘কারখানা বন্ধ হওয়ার জন্য শুধু শ্রমিকদেরই দায়ি করা হচ্ছে। অথচ শ্রমিকরাই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন প্রতিষ্ঠানকে। মালিকরা নিজেরা প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে দাম কমিয়ে ফেলছেন। কেউ যদি ১০ ডলারে কোনো পোশাক বিক্রি করেন, সেখানে অন্য একজন মালিক গিয়ে বলছেন, আমি তো ৭/৮ ডলারে তোমাকে এটা দিতে পারি। ফলে বায়াররাও কম টাকায় কেনার জন্য প্রতিষ্ঠান বদলাচ্ছেন। কারণ এখন তো সব ফ্যাক্টরিই কমপ্লায়েন্স।”

বাংলাদেশের শ্রমিকদের দক্ষতা চীন-ভিয়েতনামের চেয়েও বেশি বলে দাবি করেছেন জলি তালুকদার। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের শ্রমিকদের দক্ষতা কম থাকলে রপ্তানিও কমে যেত। ওইসব দেশের তুলনায় এখনও বাংলাদেশের শ্রমিকরা অনেক কম বেতন পান। পাশাপাশি কোন শ্রমিককে বেশিদিন একই প্রতিষ্ঠানে রাখেন না মালিকরা। কারণ তার প্রভিডেন্ট ফান্ড-গ্রাচুইটি বেশি হয়ে যায়। তাহলে আপনি দক্ষ শ্রমিকের কথা বলবেন, আবার এদের বাদ দিয়ে কম টাকায় নতুন শ্রমিক নেবেন। তাহলে কিভাবে ভালো সার্ভিস পাবেন।”

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button