Uncategorizedআন্তর্জাতিকআলোচিত

মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ: প্রায় ৯০০ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভের সময় প্রায় ৯০০ বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ১৮ এপ্রিল থেকে চলা বিক্ষোভে এসব শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়। বিক্ষোভকালে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ১৮ এপ্রিল থেকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে প্রথম বিক্ষোভে অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সেখানে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন মার্কিন স্পিকার মাইক জনসন।

ইসরায়েলবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের দ্য ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া (ইউএসসি) তার প্রধান স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাতিল করা হয়েছে অনুষ্ঠানটি। আগামী ১০ মে এটি হওয়ার কথা ছিল।

গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদকারীদের একটি ছাউনি পুলিশ ভেঙে দেয় এবং বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করে। এমন পরিস্থিতিতে বাতিল করা হয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠান। নিরাপত্তা বাতিল করা হয় মুসলিম শিক্ষার্থী আসনা তাবাসসুমের ভাষণ।

আটলান্টার ইমোরি ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা স্থান ছাড়তে রাজি না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার ২৮ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ইমোরি ইউনিভার্সিটির প্রতিবাদকারীরা জানান, তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তাদের বিক্ষোভ আয়োজন করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংলিশ অ্যান্ড ইনডিজেনাস বিষয়ের অধ্যাপক এমিল কেমেকে দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢোকার পরপরই সবাইকে জোর করে সরাতে থাকে। সশস্ত্র পুলিশ ও তাদের রাবার বুলেট এসব দেখে আমার মনে হচ্ছিল আমি কোনো যুদ্ধক্ষেত্রে আছি। আমাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ আমার পাশে এক শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে যায়, এক বৃদ্ধাকে ধাক্কা দেয়, এরপর আমাকেও ধাক্কা দেয়। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা জানান, তারা গাজার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছেন।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন সবকিছুতে বিনিয়োগ বন্ধ করে, যা গাজা যুদ্ধে ইন্ধন জোগায়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দুই নারী অধ্যাপককে আটক করতে দেখা যায়। এর মধ্যে এক অধ্যাপককে মাটিতে ঠেসে ধরে এক পুলিশ এবং আরেক পুলিশ তার হাত পিছমোড়া করে হাতকড়া পরায়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলে, ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশের পর ২৮ জনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে ২০ জনই ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য ছিলেন।

ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের ব্লুমিংটনের ইন্ডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ এক ইমেইল বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই ক্যাম্পাস থেকে ২৩ প্রতিবাদকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশের পাশাপাশি ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্য পুলিশ বিক্ষোভকারীদের জানিয়েছে, তারা ক্যাম্পাসের মধ্যে তাঁবু খাটিয়ে শিবির গড়তে পারবে না। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করে মনরো কাউন্টি জাস্টিস সেন্টার পাঠিয়েছে। গ্রেফতার শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বাধা দান ও অপরাধমূলক অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

গত শনিবার বোস্টনের নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি, ব্লুমিংটনের ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি এবং সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভ থেকে ২৯০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়া, জর্জিয়া এবং টেক্সাসের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি সদস্যরা শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের সমর্থন প্রকাশ করেছে, যেখানে তারা তাদের নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থার ভোটগ্রহণ করেছে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি অভিযান শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় প্রায় সাড়ে ৩৪ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button