গাজীপুর

কালীগঞ্জে শহীদ ময়েজ উদ্দিনের রোপন করা গাছ বিক্রির অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির বাবা, ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ ময়েজ উদ্দিন আহমেদের হাতে রোপন করা গাছসহ শতাধিক গাছ কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সদস্যের বিরুদ্ধে।

১৯৭৫ সালে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার চান্দেরবাগ ও মুক্তারপুর এলাকায় রাস্তার দুই পাশে শহীদ ময়েজ উদ্দিন আহমেদ কিছু গাছের বীজবপন করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের দিকে অন্য গাছগুলো রোপন করেন বিভিন্নজন।

কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর বাজার, চান্দেরবাগ, মুক্তারপুর, নারগানা বাজার, দোলান বাজার ও জাঙ্গালীয়ার কাপাইশ এলাকায় রাস্তার দুই পাশের শিশু, মেহগনি, আকাশি ও নিমসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় শতাধিক গাছ কেটে স্থানীয় বড়গাঁও গ্রামের হাবু বেপারীরসহ কয়েক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেছেন জামালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।

কিছুদিন আগে স্থানীয়রা ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বখতিয়ার নূর সিদ্দিকীর কাছে অভিযোগ করেন, রাস্তার দুই পাশের সরকারি গাছ কেটে বিক্রয় করা হচ্ছে। পরে তিনি বিষয়টি তদন্তের জন্য মাসুম বিল্লাহ ও রফিকুল ইসলাম নামে দুই বন কর্মকর্তাকে ওই এলাকায় পাঠায়।

চান্দেরবাগ এলাকার নাসির উদ্দীনের স’মিলে রাখা গাছ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জামালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুবুল রহমান খাঁন ফারুক মাষ্টার ও কাপাইশ গ্রামের (১নং ওয়ার্ড) ইউপি সদস্য নূরুল ইসলাম শতাধিক গাছ স্থানীয় হাবু বেপারীর কাছে ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনমাস আগে বিক্রয় করেছে। ওই গাছগুলো বর্তমানে চান্দেরবাগ এলাকার নাসির উদ্দীনের স’মিল (করাত কল) রাখা আছে।

অপরদিকে দোলান বাজার এলাকার মোতাহারের স’মিলে কিছু গাছ ক্রয় করে রেখে দিয়েছে স্থানীয় হোসেন বেপারী নামে এক ব্যবসায়ী।

এছাড়াও স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, হোসেন বেপারী নিয়মিত রাস্তার দুই পাশের সরকারি গাছ কেটে বিক্রয় করেন।

জামালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুবুল রহমান খাঁন ফারুক মাষ্টার জানান, দোলান বাজার হতে জাঙ্গালীয়া রোডে চারটি মেহগনি গাছ চোরেরা কেটে নিয়ে গেছে। আমি সেখানে গিয়ে চারটি গাছের গুঁড়ি পেয়েছি। গোপন সূত্রে জেনেছিলাম স্থানীয় মোতাহারের সমিল সেগুলো রাখা আছে। কিন্তু স’মিলে তল্লাশী করে কোন গাছ পাইনি।

তিনি আরো বলেন, বিদ্যুতের লোকেরা প্রায় সময়ই দুর্ঘটনা এড়াতে গাছ কাটে। শতাধিক গাছ কাটা অকল্পনীয়। দুই বন কর্মকর্তা ভুল তথ্য পেয়ে এসেছিল। বন কর্মকর্তারা যে সব এলাকা থেকে গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ পেয়েছিল তা পরিদর্শন করেছে। কিন্তু তারা অভিযোগের সত্যতা পায়নি।

কাপাইশ গ্রামের (১নং ওয়ার্ড) ইউপি সদস্য নূরুল ইসলাম জানান, গত বৈশাখ মাসে ঝড়ে রাস্তার কয়েকটি শুখনো শিশু গাছ মানুষের জমির উপর পরেছিল। পরে তা কেটে বিক্রয় করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক আসবাবপত্র দোকানের মালিক জানান, হাবু বেপারী গাছ ক্রয় করেছে এটা সত্য। ঐগাছগুলো চান্দের বাজার এলাকার নাসির উদ্দীনের স মিলে (করাত কল) রাখা আছে।

গাছ ক্রয়কারী একজন ক্রেতা সত্যতা নিশ্চিত করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনমাস আগে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের কাছ থেকে সরকারি গাছ তা না জেনে ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে ক্রয় করেছি।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, জাঙ্গালীয়ার কাপাইশ এলাকায় ৪-৫টি গাছ কাটা হয়েছে জেনে বন বিভাগকে মামলা করে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। আর বাকী গাছ কাটার বিষয়গুলো জানাছিল না। আমি খোঁজ নিচ্ছি অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া এখন থেকে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বখতিয়ার নূর সিদ্দিকী মুঠোফোনে জানান, বিষটি তদন্তের জন্য মাসুম বিল্লাহ ও রফিকুল ইসলাম নামে দুই বন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। তাদের রিপোর্ট এখনও আমার হাতে আসেনি। রোববার বিষয়টি সম্পর্কে আমি বিস্তারিত বলতে পারবো।

এরকম আরও খবর

Back to top button