ড্রোন ওড়ানো: অনুমতি আছে, অনুমতি নেই?
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ঢাকায় আবারও অনুমতি ছাড়া ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ করেছে পুলিশ। তবে এর মধ্যেই বিদেশ থেকে ড্রোন আনা হচ্ছে, বিক্রি হচ্ছে এবং ড্রোন উড়িয়ে ছবি তোলা হচ্ছে।
ড্রোন ব্যবহার এবং বিক্রির সাথে যুক্ত কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ড্রোন নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় লাভবান হচ্ছে বিমানবন্দরের কিছু কর্মকর্তা। তারা ১০-১৫ হাজার টাকা করে নেন একেকটি ড্রোনের জন্য। বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ কেজি ওজনের ড্রোন আসে। এসব ড্রোনে ইনবিল্ট ক্যামেরা থাকে৷ ফটোগ্রাফার ও ভিডিও গ্রাফাররা সাধারণত এই ড্রোন ব্যবহার করেন। কেউ কেউ বিনোদনের জন্যও ব্যবহার করেন। এসব ড্রোনের দাম সর্বনিম্ন ৭০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা।
২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশে ড্রোন উড়ানোর জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)-এর অনুমতি লাগে। এই অনুমতির আবেদন করতে হয় বেবিচকের ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন বিভাগে। কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ব্যক্তি পর্যায়ে আবেদন করে অনুমতি পাওয়ার কোনো নজির নেই। আর ড্রোন আমদানির ব্যাপারে কোনো নীতিমালাও নেই৷ তবে ম্যানেজ করে আনা হচ্ছে।
বেবিচক ড্রোন উড়ানো ও আমদানির ব্যাপারে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে একটি সার্কুলার জারি করেছে। ১০ দফার এই সার্কুলারটি মূলত একটি গাইড লাইন। তাতে ড্রোন কোথায় উড়ানো যাবে, কোথায় যাবে না, কত উচ্চতায় উড়ানো যাবে , বয়স কত হতে হবে এসব বিষয়ের উল্লেখ আছে। আর আমদানির ব্যাপারে বলা হয়েছে, সরকারের প্রচলিত নীতি প্রযোজ্য হবে।
ড্রোন দিয়ে টাঙ্গুয়া হাওড়ের ছবি ভিডিও করে বেশ প্রশংসা পেয়েছেন ফটোগ্রাফার তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব। তিনি বলেন, ‘‘সরকার আসলে লুকোচুরি খেলছে৷আমার দুইটি ড্রোন আছে। এখন ড্রোনের ভিতরে যে সিস্টেম আছে তাতে সে নিজেই বোঝে কোথায় অপারেট করা যাবে না। ফলে ওইসব জায়গায় ড্রোন ওড়ে না। আর সরকার অনুমতি নেয়ার কথা বললেও ব্যক্তি পর্যায়ে ড্রোন উড়ানোর অনুমতি পাওয়া যায় না। কিন্তু এখন ড্রোনের মাধ্যমে সহজেই কম খরচে এরিয়েল ফটোগ্রাফি ও ভিডিওগ্রাফি করা যায়, যা আগে হেলিকপ্টার দিয়ে করতে অনেক খরচ হতো।”
তিনি বলেন, ‘‘ড্রোন আমদানির অনুমতিও দেয়া হয় না৷ কিন্তু বিমাবন্দরে কিছু খরচ করলেই ড্রোন আনা যায়।”
তাঁর মতে, ‘‘বিষয়গুলো স্বচ্ছ করা হলে যাঁদের প্রয়োজন তাঁরা সহজেই ড্রোন আনতে পারবেন ও ব্যবহার করতে পারবেন। এতে সরকার রাজস্বও পাবে।”
বাংলাদেশে সাধারণত চীন থেকে ড্রোন আনা হয়। ড্রোন বাংলাদেশ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গত চার বছর ধরে বাংলাদেশে ড্রোন বিক্রি করছে। তারা মূলত অনলাইনেই বিক্রি করে। ধানমন্ডিতে তাদের অফিস আছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে তারাই প্রধানত ড্রোন সরবরাহ করে। র্যাব ও পুলিশসহ বাংলাদেশের সব ধরনের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এখন ড্রোন ব্যবহার করে। এমনকি জেলা পর্যায়ের পুলিশও ব্যবহার করে। প্রত্যেক জেলার পুলিশ সুপার আফিসে এখন ড্রোন আছে।
ড্রোন বাংলাদেশের কামরান হাসান বলেন, ‘‘আমাদের এখনো ড্রোনের চাহিদা ভালোই। ঢাকায় নিরাপত্তার কারণে ড্রোন উড়ানো নিয়ে কিছু বিধিনিষেধ আছে। ঢাকার বাইরে তেমন বিধিনিষেধ নেই। আর গণহারে বিধিনিষেধ আরোপ করার কোনো মানেও হয় না।”
বিমান বোর্ডের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘‘ড্রোনের ব্যাপারে আমাদের স্বচ্ছ নীতিমালা করা প্রয়োজন। ওড়ানোর অনুমতি চাইলে পাওয়া যায় না। আবার অনুমতি ছাড়াই ওড়ানো হচ্ছে। প্রযুক্তির এই যুগে এটাকে প্রয়োজন অনুযায়ী সহজে ব্যবহার করতে দিতে হবে। সব দেশেই এখন এটার ব্যবহার আছে।”
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে বিভিন্ন দেশের নীতিমালা দেখে এখানেও নীতিমালা তৈরি করা দরকার।”
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ঢাকায় অনুমতি ছাড়া ড্রোন ওড়ানোর ওপর নতুন করে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তার কোনো সুর্নিষ্ট কারণ নেই বলে জানিয়েছেন ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অনুমদি ছাড়া ড্রোন উড়ানোয় তো আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা আছে। নিরাপত্তার দিক থেকে সেটাকে আমরা আবার মনে করিয়ে দিলাম।”
অনুমতি ছাড়া ড্রোন ওড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও শাস্তির কোনো সুনির্দিষ্ট বিধান নেই। ড্রোনের সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য বেবিচকের ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউকেই চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে