আলোচিত

কাশ্মীরে চলছে সংবাদমাধ্যমের ওপরে অঘোষিত নিয়ন্ত্রণ

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারত-শাসিত কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা প্রদানকারী ৩৭০ এবং ৩৫-এ ধারা দুটি প্রত্যাহার করে নেয়ায় সেখানকার মানুষ ক্ষোভে ফুটছে।

পাঁচ দিন ধরে কাশ্মীরের নানা প্রান্ত ঘুরে সেই ক্ষোভের আঁচ পেয়েছেন ভারতের কয়েকজন রাজনৈতিক আর সামাজিক কর্মী।

শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করারও পরিস্থিতি নেই সেখানে। সেই ক্ষোভ যাতে সামনে না আসে, তার জন্য একদিকে রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে চলছে সংবাদমাধ্যমের ওপরে অঘোষিত নিয়ন্ত্রণ।

ভারত-শাসিত কাশ্মীর থেকে ঘুরে এসে বুধবার দিল্লিতে সেই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন ওই রাজনৈতিক আর সামাজিক কর্মীরা।

পাঁচ দিনের সফর শেষে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন ওই রাজনৈতিক আর সামাজিক কর্মীরা, তার নাম দেয়া হয়েছে ‘কাশ্মীর কেজড,’ অর্থাৎ খাঁচাবন্দী কাশ্মীর।

তারা রাজধানী শ্রীনগরসহ রাজ্যের নানা প্রান্তে ঘুরে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছেন যে ৩৭০ ধারা বিলোপ করা এবং যেভাবে গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, তা নিয়ে একটা ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে মানুষের মধ্যে।

কিন্তু সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করার কোনও সুযোগ নেই।

ওই দলেরই সদস্য, অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রঁজ বলছিলেন, “শ্রীনগর হোক বা তার বাইরে, সব জায়গাতেই মানুষ ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, যেন একটা জেলখানায় তাদের রেখে দেয়া হয়েছে। খুব বেশী প্রতিবাদ করতে পারছেন না মানুষ।”

“সরকার নিষেধাজ্ঞা একটু শিথিল করলেই মানুষ প্রতিবাদ জানাতে বেরিয়ে পড়ছেন, তাই আবারও নিষেধাজ্ঞা বলবত হয়ে যাচ্ছে। আর সৌরার মতো যেখানে কিছুটা প্রতিবাদ হয়েছে, সেখানেই ছররা গুলি চালাচ্ছে।”

হাসপাতালগুলোতে ছররা গুলিতে আহত এরকম বেশ কয়েকজনকে তারা দেখতে পেয়েছেন বলে জানালেন মি. দ্রঁজ।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৬০০ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে আটক করে রাখা হয়েছে।

এছাড়াও শহরে বা গ্রামে যেখানেই তারা গেছেন, সেখানেই দেখেছেন তরুণ বা যুবক, এমনকি স্কুল ছাত্রদেরও আটক করে রাখা হয়েছে।

অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তাবাহিনী মাঝরাতেও বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি চালিয়ে আটক করছে। এক বৃদ্ধকে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই কেন রাস্তায় যেতে দিতে অনুরোধ করেছিলেন নিরাপত্তা বাহিনীকে, এই অভিযোগে ছররা গুলি ছোঁড়া হয়েছে এক যুবকের দিকে।

প্রতিনিধিদলটির আরেক সদস্য সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেত্রী মইমুনা মোল্লা জানান, “মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সর্বোচ্চ আর দ্বিতীয় পর্যায়ের নেতাদের তো আটক করা হয়েছে। কিন্তু প্রায় প্রতিটা গ্রাম থেকেই অনেক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।”

প্রতিবাদ বা বিক্ষোভ সংগঠিত করার দক্ষতা আছে, এমন লোকদেরই আটক করা হয়েছে। কত লোক যে জেলে আছে, কেউ জানে না, বলছিলেন মইমুনা মোল্লা।

অর্থনীতিবিদ অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রঁজ আরও জানালেন, সেখানে সংবাদমাধ্যমের ওপরে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে।

“কাশ্মীরি সংবাদমাধ্যম তো কোনও কাজই করতে পারছে না। তাদের কাছে কোনও সংবাদ পৌঁছচ্ছে না। তাদেরও খবর যোগাড় করার কোনও উপায় নেই।”

“একটা দুটো খবরের কাগজ হয়তো কোনোভাবে বেরচ্ছে। কখনও দু’পাতা, চার পাতার কাগজ ছাপছে। তাও সেই কাগজ বিক্রি করার সুযোগ বিশেষ নেই। তাদের ওপরেও খবরদারি চলছে।”

“আর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে হাতে গোনা কয়েকজন সাংবাদিকই আছেন, যারা সত্য চিত্রটা তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।”

তবে আন্তর্জাতিক মাধ্যমগুলো অনেকটা আসল ছবি তুলে ধরতে পারছে বলে মন্তব্য করেন মি. দ্রঁজ।

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে বেশীরভাগ ভারতীয় সাংবাদিকই শ্রীনগরের যে অংশ থেকে কাজ চালাচ্ছেন, সেখানে মাঝে মাঝে যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না, তা নয়।

কিন্তু সেটাকেই কাশ্মীরের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে আসছে বলে যে সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে, সেটা অসত্য।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button