আলোচিতগাজীপুর

ভাঙছে সংসার, বাড়ছে উদ্বেগ: গাজীপুরে এক বছরে বিয়ে ১৫৫৩২, বিচ্ছেদ ৯০৮২টি!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : গাজীপুরে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে বিবাহবিচ্ছেদ। গত এক বছরে এর সংখ্যা ৯ হাজার ৮২টি। অপরদিকে নিবন্ধিত বিয়ের সংখ্যা ১৫ হাজার ৫৩২টি। এখন প্রশ্ন উঠছে- এমন পরিবর্তনের আসল কারণ কী? ব্যক্তিসচেতনতা বেড়েছে নাকি সামাজিক অস্থিরতার প্রভাব? না টিভি সিরিয়ালের প্রভাব? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারণ যাই হোক এটি অশুভ লক্ষণ।

কাপাসিয়ার তামান্না আক্তার (ছদ্মনাম)। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াকালীন একটি টেলিকম কোম্পানিতে চাকরি করতেন। সহকর্মী গাজীপুরের শিমুলতলী এলাকার ইমরান আহমেদ তাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করেন। বিপত্তি ঘটে তামান্না গর্ভবতী হলে। সংসারে নতুন সদস্য আসুক তা চাননি স্বামী-শাশুড়ি। শুরু হয় তামান্নার গর্ভপাত ঘটানোর ষড়যন্ত্র। এতে বাধা দেওয়ায় তামান্নার শরীরে আগুনও দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত তিনি গর্ভের সন্তানকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হন। ওষুধ খাইয়ে তার গর্ভপাত ঘটানো হয়।

স্বামীর নির্যাতন ছাড়াও পরনারী ও মাদকে আসক্তির কারণে তাদের বিচ্ছেদ হয়। দেনমোহর ও ন্যায়বিচার চেয়ে আদালতে গিয়েও সমাধান মেলেনি। পরিবার পুনরায় বিয়ে করতে চাপ দিলেও তিনি সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পান। তিনি বলেন, যার সঙ্গে বিয়ে হবে তাকে চিনি না, জানি না। একবার এক্সিডেন্ট হয়েছে। দ্বিতীয়বার হলে মানতে পারব না। বেঁচে থাকাই অসম্ভব হবে। আর কখনো বিয়ে করব কিনা সেটাও জানি না।

কাশিমপুরের সুইটি আক্তার (ছদ্মনাম)। সৌন্দর্যই কাল হয়েছে তার। মাত্র দশ বছর বয়সে তাকে তুলে নিয়ে একজন বিয়ে করেন। বিভিন্ন কারণে সাত বছর আলাদা থেকেও শেষে ভাগ্যকে মেনে নিয়েছেন। প্রবাসী স্বামীর জমি কেনার আগ্রহে বিশ^স্ত কামাল হোসেনকে টাকা দেন। তিনি জমি কিনে দিতে পারেননি। জমির টাকা ফেরত পেতে গিয়ে কামাল ও তার বন্ধু সবুজের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন। এমনকি ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে তাকে ব্ল্যাকমেইল করা হতো। শেষে স্বামীকে ধর্ষণের ভিডিও পাঠানোয় তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। সমাধান পেতে গিয়ে পুনরায় ধর্ষণের শিকার হন। দুটি ধর্ষণ মামলা করলেও জটিলতায় বিচার পাওয়া নিয়ে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। প্রবাস থেকে সংসার গড়ার স্বপ্ন নিয়ে দেশে এসে বিয়ে করেন সুজন (ছদ্মনাম)। কিন্তু তার স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। ছুটি কাটিয়ে প্রবাসে ফেরার কিছুদিন পরই অর্থ-সোনা-গহনা আত্মসাৎ করে অন্যত্র পালিয়ে যান স্ত্রী। সব ভুলে জীবনকে নতুনভাবে সাজাতে দ্বিতীয়বার ছুটিতে এসে বিয়ে করেন। এ স্ত্রীও ছুটি কাটিয়ে প্রবাসে ফেরার পর একই পথে হাঁটেন। প্রবাসে খেটে অর্জিত সবকিছু দুই স্ত্রী আত্মসাৎ করায় তিনি এখন সর্বস্বান্ত। পুরুষদের এ সংক্রান্ত প্রতিকার আইন দুর্বল থাকায় তিনি কিছুই করতে পারেননি। শুধু এ তিনজনের জীবনে এমনটি ঘটেছে তা নয়। অসংখ্য মানুষের জীবনে এর চেয়েও করুণ কাহিনী রয়েছে।

গাজীপুর জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ড ও জেলার পাঁচ উপজেলা মিলিয়ে মুসলিম বিবাহ নিবন্ধকের (কাজী) সংখ্যা ১১৩ জন। ২০২০ সালে এসব এলাকায় বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে ৯ হাজার ৮২টি। একই সময়ে বিয়ে নিবন্ধন হয়েছে ১৫ হাজার ৫৩২টি। নিবন্ধন ফি আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৬৫ লাখ ১০ হাজার ৯৯৮ টাকা। এ খাত থেকে সরকার পেয়েছে ৮ লাখ ৫২ হাজার ৫৪১ টাকা। ২০১৯ সালে এসব এলাকায় বিয়ে নিবন্ধন হয়েছে ১৭ হাজার ১২৮টি। নিবন্ধন ফি আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৯০ লাখ ৪৪ হাজার ৯৮৫ টাকা। সরকার পেয়েছে ৮ লাখ ৫২ হাজার ৫৪১ টাকা। তবে ২০২০ সালে ১ হাজার ৫৯৬টি বিয়ে কমেছে। বিপরীতে ২০১৯ সালে কত সংখ্যক বিচ্ছেদ ঘটেছে এ তথ্য সংশ্লিষ্ট দফতর সংরক্ষণ না করায় জানা যায়নি।

এ পরিসংখ্যান মুসলিম ধর্মের বিবাহ নিবন্ধন ও বিচ্ছেদের। বছর শেষে এ পরিসংখ্যান তৈরি করে জেলা নিবন্ধকের কার্যালয়। অন্য ধর্মের বিবাহ নিবন্ধনের তথ্য প্রয়োজন না পড়ায় তা কখনো সংরক্ষণ করে না দফতরটি। এ হিসাব শুধু প্রাপ্তবয়স্ক নিবন্ধিত বিয়ের। এর বাইরেও নোটারির মাধ্যমে অসংখ্য নিয়মবহির্ভূত বিয়ে হচ্ছে। যেগুলোর কোনো আইনগত ভিত্তি ও হিসাব নেই। তথ্য বলছে, বাল্যবিবাহ, উদাসীনতা, মাদকাসক্তি, দীর্ঘ প্রবাস জীবন, যৌতুক, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, পরনারী বা পরপুরুষে আসক্তির কারণেই দিন দিন বিবাহবিচ্ছেদ বাড়ছে। এক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়কেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কেউ কেউ এজন্য টেলিভিশন সিরিয়ালকে দায়ী করছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সিরিয়ালের অন্যতম উপজীব্য পরকীয়া।

তথ্য বিশ্লেষণে জানা গেছে, গাজীপুর সদরে ৫ জন ও সিটি করপোরেশনের ৫৭ ওয়ার্ডে ৫৮ জন (২৮ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন কাজী), শ্রীপুর উপজেলায় ৯ জন ও শ্রীপুর পৌরসভায় ৫ জন, কালিয়াকৈর উপজেলায় ৯ জন ও পৌরসভায় ৫ জন, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৭ জন ও পৌরসভায় ৩ জন এবং কাপাসিয়া উপজেলায় (পৌরসভা নেই) ১২ জন বিয়ে নিবন্ধক (কাজী) রয়েছেন। নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০২০ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে ১০ হাজার ৫৪৬টি, গাজীপুর সদর উপজেলায় ৬৭৮টি, শ্রীপুর উপজেলায় ৮৬১টি ও শ্রীপুর পৌরসভায় ৮২০টি, কালিয়াকৈর উপজেলায় ৮৬৪টি ও পৌরসভায় ১১৪টি, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৭৪৬টি ও পৌরসভায় ১৪৬টি এবং কাপাসিয়া উপজেলায় (পৌরসভা নেই) ৭৬৭টি বিয়ে নিবন্ধন হয়েছে।

উদ্বেগের বিষয়- একই বছর গাজীপুর সিটি করপোরেশন (সদর ও টঙ্গীসহ) এলাকায় ৫ হাজার ৪২২টি, শ্রীপুরে ৭২৩টি, কালিয়াকৈরে ১ হাজার ৪৯৪টি, কালীগঞ্জে ৬৬৪টি ও কাপাসিয়ায় ৭৭৯টি বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। ২০১৯ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে ১১ হাজার ১৭টি, গাজীপুর সদর উপজেলায় ৮২৮টি, শ্রীপুর উপজেলায় ১ হাজার ৭৯টি ও শ্রীপুর পৌরসভায় ১ হাজার ৭৩টি, কালিয়াকৈর উপজেলায় ৯১২টি ও পৌরসভায় ৪৩২টি, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৭৭৩টি ও পৌরসভায় ১১১টি এবং কাপাসিয়া উপজেলায় (পৌরসভা নেই) ৯০৩টি বিবাহ নিবন্ধন হয়েছে। পক্ষান্তরে ২০১৯ সালের বিচ্ছেদের তথ্য সংরক্ষণে নেই। ২০২০ সালে বিবাহ নিবন্ধন ফি আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৬৫ লাখ ১০ হাজার ৯৯৮ টাকা। সরকারি খাতে জমা হয়েছে ৮ লাখ ৫২ হাজার ৫৪১ টাকা।

অর্থের পরিমাণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলা থেকে নিবন্ধন বাবদ ২ কোটি ৩৮ লাখ ৬৩ হাজার ৯৮৪ টাকা আদায়ের বিপরীতে সরকারি খাতে জমা হয়েছে ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৬৫৬ টাকা, শ্রীপুর থেকে আদায় ৪৮ লাখ ১৩ হাজার ১৫২ টাকা; সরকারি খাতে জমা ২৩ হাজার ৭৮৫ টাকা, কালিয়াকৈর থেকে আদায় ৩০ লাখ ৭৩ হাজার ৮৬৯ টাকা; সরকারি খাতে জমা ২১ হাজার ৯০০ টাকা, কালীগঞ্জ থেকে আদায় ২৩ লাখ ৭২ হাজার ৮৭১ টাকা; সরকারি খাতে জমা ১৪ হাজার এবং কাপাসিয়া থেকে বিবাহ নিবন্ধন ফি বাবদ ২৩ লাখ ৮৭ হাজার ১২২ টাকা আদায় হয়েছে এবং সরকারি খাতে জমা হয়েছে ১৩ হাজার ২০০ টাকা।

২০১৯ সালে বিবাহ নিবন্ধন ফি আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৯০ লাখ ৪৪ হাজার ৯৮৫ টাকা। যার মধ্যে সরকারি খাতে জমা হয়েছে ৮ লাখ ৫২ হাজার ৫৪১ টাকা। ওই বছরের অর্থের পরিমাণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলা থেকে বিবাহ নিবন্ধন বাবদ ২ কোটি ৫১ লাখ ৯৬০ টাকা আদায়ের বিপরীতে সরকারি খাতে জমা হয়েছে ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৬৫৬ টাকা, শ্রীপুর থেকে আদায় ৫৭ লাখ ২০ হাজার ১৪৬ টাকা; সরকারি খাতে জমা ২৩ হাজার ৭৮৫ টাকা, কালিয়াকৈর থেকে আদায় ৩০ লাখ ১৯ হাজার ৪৩২ টাকা; সরকারি খাতে জমা ২১ হাজার ৯০০ টাকা, কালীগঞ্জ থেকে আদায় ২৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৭৭ টাকা; সরকারি খাতে জমা ১৪ হাজার এবং কাপাসিয়া থেকে নিবন্ধন ফি বাবদ ২৮ লাখ ৯ হাজার ৬৭০ টাকা আদায় হয়েছে এবং সরকারি খাতে জমা হয়েছে ১৩ হাজার ২০০ টাকা।

তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২০ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে ১ হাজার ৫৯৬টি বিয়ে বেশি হয়েছে। বিবাহ নিবন্ধন ফি ২৫ লাখ ৩৩ হাজার ৯৮৭ টাকা বেশি আদায় হলেও সরকারি খাতে সমপরিমাণ অর্থ যোগ হয়েছে। তথ্যদাতা বলছেন, বিয়ের নিবন্ধন ফি যত বেশিই আদায় হোক না কেন, বছর শেষে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সরকারকে দিচ্ছেন কাজীরা। এতে সরকারের তুলনায় বিবাহ নিবন্ধকরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। নজরদারির অভাবে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।

অনুসন্ধান বলছে, গাজীপুরে ১১৩ জন কাজী থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। উপজেলা বা ইউনিয়ন নয় বরং প্রত্যেক গ্রামে একাধিক কাজী রয়েছেন। যারা কাজীর খেতাবে চললেও প্রকৃত কাজী নন। নিবন্ধিত বিবাহ রেজিস্ট্রারদের কাছ থেকে বালাম-বহি নিয়ে কথিত এসব কাজী বিয়ে রেজিস্ট্রি করে আসছেন। আসল নিবন্ধকরা তাদের ভুয়া কাজী বললেও তারা কাজীদের সহযোগী। কথিত কাজীরা প্রকৃত কাজীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বিবাহ রেজিস্ট্রির বালাম-বহি সংগ্রহ করে এ কাজ করছেন। নজির রয়েছে, কথিত কাজীরা বালাম-বহিতে তথ্য লিপিবদ্ধের বদলে সাদা কাগজে তথ্য লিখে বিয়ে পড়ান। এসব বিয়েতে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হলে বিয়ের প্রমাণই পাওয়া যায় না। এসব ছাড়াও হরহামেশাই আদালত চত্বরে কিছু অসাধু আইনজীবী মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নোটারির মাধ্যমে বাল্যসহ নিময়বহির্ভূতভাবে সব ধরনের বিয়ে পড়ান। নোটারির পর চুক্তিবদ্ধ কিছু ভাসমান কাজী অতিরিক্ত ফি নিয়ে নিবন্ধনের দায়িত্ব নিচ্ছেন। পরে এসব বিয়ের নকল বা কাবিননামার কপি সংগ্রহ করতে গেলে বিয়ের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে অসংখ্য নারী অধিকার বঞ্চিত হচ্ছেন।

এসব প্রসঙ্গে গাজীপুর কাজী সমিতির সভাপতি মো. শরীফ হোসেন বলেন, বিবাহ রেজিস্ট্রি করার বালাম-বহি নিবন্ধক ছাড়া অন্য কারও কাছে থাকার সুযোগ নেই। বিয়ে স্থানীয় ইমামসহ অনেকেই পড়াতে পারেন। কিন্তু নিবন্ধনের এখতিয়ার শুধু নিবন্ধিত কাজীর হাতে।

তিনি স্বীকার করে বলেন, অনেক সময় ব্যস্ততার কারণে কাজীরা প্রতিনিধি হিসেবে অন্য কাউকে বিয়ের কাজে পাঠান। এটি করা ঠিক নয়। বাল্যবিয়ে কারা পড়ান জানতে চাইলে তিনি বলেন, অসাধু কিছু আইনজীবী ও কাজীর সমন্বয়ে এসব বিয়ে হয়। কয়েকজন আইনজীবী ও ভুয়া কাজী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরাও পড়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে থানা, আদালতে মামলাও হয়েছে। কিন্তু তারা আইনের ফাঁকে বের হয়ে আবারও এ কাজে যোগ দিচ্ছেন। তবে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো চলমান রয়েছে।

মুসলিম বিবাহ ও তালাক বিধিমালা, ২০০৯-এর ২১ বিধি অনুযায়ী নিকাহ ও তালাক নিবন্ধন ফি বাবদ একজন নিকাহ রেজিস্ট্রার ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত দেনমোহরের ক্ষেত্রে প্রতি ১ হাজার টাকায় ১২ টাকা ৫০ পয়সা হারে বিবাহ নিবন্ধন ফি আদায় করতে পারবেন। দেনমোহরের পরিমাণ ৪ লক্ষাধিক হলে পরবর্তী প্রতি ১ লাখ টাকা দেনমোহরের জন্য ১০০ টাকা বিবাহ নিবন্ধন ফি আদায় করতে পারবেন। তবে দেনমোহরের পরিমাণ যাইহোক সর্বনিম্ন ফি ২০০ টাকার কম হবে না। একই বিধি অনুযায়ী তালাক নিবন্ধনের জন্য ৫০০ টাকা ফি গ্রহণ করতে পারবেন রেজিস্ট্রার। নকল প্রাপ্তি ফি ৫০ টাকা, যাতায়াত বাবদ প্রতি কিলোমিটার ফি ১০ টাকা ও তল্লাশি ফি ১০ টাকা গ্রহণ করতে পারবেন। বিয়ের নিবন্ধন ফি বর কর্তৃক পরিশোধ করতে হবে এবং তালাকের ক্ষেত্রে যে পক্ষের উদ্যোগে তালাক নিবন্ধন করা হবে সে পক্ষ কর্তৃক ফি পরিশোধ করতে হবে।

গাজীপুর জেলায় ১০ জন হিন্দু বিবাহ নিবন্ধক রয়েছেন। হিন্দু বিবাহ রীতি সম্পর্কে গাজীপুর বিবাহ নিবন্ধন কল্যাণ সমিতির সভাপতি শংকর চন্দ্র দাস বলেন, প্রতি বছর গড়ে ২০-৩০টি হিন্দু বিয়ে নিবন্ধন হয়। বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে কোনো তথ্য সংরক্ষণে নেই। এ কারণে অনেকেই সমস্যায় পড়েন। বিয়ের নিবন্ধন না করলে পারিবারিকভাবে যখন অশান্তি শুরু হয়, তখন দেখা যায় অনেক পক্ষ বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করে।

তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, নজির রয়েছে ১২ বছর সংসার করার পর হঠাৎ বিচ্ছেদ হয়েছে। কিন্তু বিয়ের নিবন্ধন না হওয়ায় ভুক্তভোগী আদালতের দ্বারস্থ হয়েও সমাধান পাননি। এরকম অনেক ঘটনাই রয়েছে।

তিনি দায়িত্ব নিয়ে ভুল করেছেন জানিয়ে বলেন, হিন্দুবিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক না হওয়ায় বাল্যবিবাহ রোধ করা যাচ্ছে না। পুরোহিতরা অর্থের লোভে এবং অনেকেই নিরাপত্তার অভাবে কিশোরী মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন।

সরকার যদি হিন্দু বিবাহের ক্ষেত্রে বিয়ের পূর্বে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে তাহলে শতভাগ বিয়ে নিবন্ধনের আওতায় আসবে এবং বাল্যবিবাহ রোধ করা সম্ভব হবে। অপরদিকে গাজীপুর জেলায় দুজন খ্রিস্টান বিবাহ নিবন্ধক রয়েছেন। গত এক বছরে গাজীপুরে খ্রিস্টান ধর্মে কতসংখ্যক বিবাহ ও বিচ্ছেদ হয়েছে- এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বৌদ্ধ ধর্মের কোনো বিবাহ নিবন্ধকের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

সার্বিক বিষয়ে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক অসীম বিভাকর বলেন, বিয়ে ভাঙার মূল কারণ সহনশীলতার অভাব। দ্বিতীয়ত সহমর্মিতা ও শ্রদ্ধাবোধের অভাবে। আমরা পরমতকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের মতকে সব সময় বেশি গুরুত্ব দেই। জীবনসঙ্গীর মতকে প্রধান্য না দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই দূরত্বের সৃষ্টি হয়। ফলে বেশি দিন একসঙ্গে কাটানো যায় না।

বাবা-মায়ের বিচ্ছেদে সন্তানের প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, সন্তান যখন মা-বাবা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, তখন তার মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়। বাবা-মায়ের ভালোবাসার অভাবে তার মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এমন মানসিকতা নিয়ে সন্তান সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। ফলে সন্তান বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেক সময় বিভিন্ন নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। এতে করে বাবা বা মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি কমে গিয়ে সন্তান বিক্ষুব্ধ হয়।

করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, সুসম সমাজব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সমতান্ত্রিক সমাজে প্রতিনিয়ত মানুষের মধ্যে এক ধরনের লোভ কাজ করে। লোভ থেকে আমরা মুক্ত হতে না পারলে নিজেকে মানুষ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করতে পারব না।

বিচ্ছেদের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, মানুষের আত্মকেন্দ্রিকতা বেড়েছে। অনেক সময় দাম্পত্য কলহের জেরে হত্যাসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হয়। এক্ষেত্রে বলব মতের মিল না থাকলে আলাদা জীবন বেছে নেওয়াই উত্তম। কিন্তু আমাদের জীবনকে কেন্দ্র করে আরও জীবন তৈরি হয়। আমরা তাদের কথা চিন্তা করি না। আমরা ব্যক্তিগত পছন্দকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে সন্তানের জীবনটা শেষ করে দিচ্ছি।

 

সূত্র: খোলা কাগজ

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button