গাজীপুর

কালীগঞ্জে চাঁদার জন্য প্রবাসীকে তুলে নিয়ে হামলা-লুট: আসামিদের খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : কালীগঞ্জে চাঁদার জন্য হৃদয় (২৩) নামে এক প্রবাসীকে হাত-পা এবং চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও ছুরি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে নগদ টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণালংকার লুটের ঘটনায় করা মামলার ১ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো আসামিদের খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ!

আলোচিত এ ঘটনার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে এখনো রিমান্ডে নেয়নি পুলিশ। মামলার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও মামলার আরও ১৩ আসামি এখনো রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

বুধবার (১৪ জুলাই) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রমজান বলেন,”আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”

gazipurkontho
গ্রেপ্তার প্রধান আসামি শাকিল ও আহত হৃদয়।

হামলার শিকার প্রবাসী হৃদয় মোক্তারপুর ইউনিয়নের দড়িবাগুন এলাকার মৃত ইব্রাহিম খানের ছেলে। সে ৪ বছর পর মরিশাস থেকে সম্প্রতি দেশে ফিরে এই হামলার শিকার হয়েছে। হামলার শিকার হৃদয় বর্তমানে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এ ঘটনায় গত ৭ জুলাই আহত হৃদয়ের বোন মিম্মা আক্তার বাদী হয়ে জড়িত ১২ কিশোরসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন {মামলা নাম্বার ৭(৭)২১}।

মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র সহ বে-আইনী ভাবে আটক, চাঁদাদাবী, হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর, শ্লীলতাহানি, চুরি ও হুমকির অভিযোগে ১৪৩/৩৪২/৩২৩/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩৫৪/৩৭৯/৩৮৫/৫০৬/১৪৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযুক্তরা হলো, দড়িবাগুন এলাকার নুর ইসলামের ছেলে শাকিল(২৭), সাফিজ উদ্দিন সরকারের ছেলে জায়েদুল ইসলাম সরকার(২৭), আবুল হোসেনের ছেলে রুবেল(১৮), বড়গাঁও এলাকার মনু পালোয়ানের ছেলে জুবায়ের(২০), মৃত আলাউদ্দিন পালোয়ানের ছেলে শাকিল(২১) ও রকিব(১৮), মজিব পালোয়ানের ছেলে বাইতুল্লাহ(১৮), আসাদ পালোয়ানের ছেলে মুন্না(১৮), আকমল পালোয়ানের ছেলে মেহেদি(১৯), আমির উদ্দিনের ছেলে ছানাউল্লাহ(২২), ফাইজুদ্দিন ফকিরের ছেলে উমর ছানি(১৯), ছানাউল্লা ফকিরের ছেলে রফিকুল(২০), শাজাহান পালোয়ানের ছেলে সিয়াম(২১) এবং সাহাজুদ্দিন মোল্লার ছেলে হোসেন আলী(১৮)।

এদের মধ্যে প্রধান আসামি শাকিলকে ঘটনার দিন গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হৃদয় ৪ বছর প্রবাস থেকে সম্প্রতি দেশে ফিরে বাড়িতে বিল্ডিং নির্মানের কাজ করছে। অভিযুক্তরা হৃদয়ের কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে হুমকি দিচ্ছিল। কিন্তু হৃদয় দাবিকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যার হুমকি দেয় অভিযুক্তরা। এক পর্যায়ে অভিযুক্তদের পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দেয় হৃদয়। গত ৫ জুলাই (সোমবার) সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ আদায় করতে বাড়ি থেকে বের হয়ে দড়িবাগুন বড় মসজিদের দিকে রওনা হয় হৃদয়। সে সময় অভিযুক্তরা হৃদয়ের হাত-পা ও চোখ বেঁধে জোড়পূর্বক তাকে আটোরিক্সায় তুলে বড়গাঁও এলাকায় জনৈক হেকিম পালোয়ানের বাড়ির উত্তর পাশে থাকা একটি পাকা বেঞ্চে নিয়ে শুয়িয়ে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও ছুরি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে অভিযুক্তরা হৃদয়ের কাছে চাঁদার পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। তখন চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে হৃদয়কে হত্যার হুমকি দেয় তারা। সে সময় হৃদয়ের সঙ্গে থাকা আইফোন ও একটি স্বর্ণের চেইন ও নগদ টাকা লুট করে অভিযুক্তরা। খবর পেয়ে হৃদয়ের বোন মিম্মা আক্তার (১৮) ও তার চাচাতো বোন সুরাইয়া আক্তার (১৬) ঘটনাস্থলে গেলে তাদের মারধর ও শ্লীলতাহানি করে এবং স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয় অভিযুক্তরা। সে সময় আহতদের ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তাদের হত্যার হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায় অভিযুক্তরা। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে।

মামলার বাদী মিম্মা আক্তার বলেন, ”পাঁচ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে হামলা, লুট ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে আমি বাদী হয়ে জড়িত ১৪ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরো ১৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছি। ঘটনার পর পুলিশ প্রধান আসামি শাকিলকে আটক করেছে। অন্য আসামিরা আমাদের লাগাতার হুমকি দিচ্ছে। পুলিশ অন্য কোন আসামিকে গ্রেপ্তার করছে না। আহত হৃদয় বর্তমানে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন রয়েছে।”

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোঃ রমজান বলেন,”মামলার প্রধান আসামি শাকিলকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এখনো রিমান্ডের আবেদন করা হয়নি। অন্য আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button