আইন-আদালতআলোচিত

নাশকতার মামলায় রেকর্ড!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় গত বছর নাশকতার মামলা হয়েছে রেকর্ড ১ হাজার ৮৩২টি। ২০১৭ সালে এ ধরনের মামলার সংখ্যা ছিল ৯২৮টি। আগের বছর ২০১৬ সালে ১ হাজার ৬১টি, ২০১৫ সালে ১ হাজার ৪৪৭ ও ২০১৪ সালে ১ হাজার ৩৩৪টি নাশকতার মামলা ছিল। পুলিশ সদর দপ্তরের অপরাধ বিভাগের ওয়েবসাইটে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা জানান, সাধারণত দাঙ্গা (রায়ট), পুলিশের ওপর হামলা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলাগুলোকে নাশকতা হিসেবে গণ্য করা হয়। এদিক থেকে ২০১৮ সালে সবচেয়ে ভয়ানক পরিস্থিতি ছিল ঢাকা মহানগর এলাকায়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ২০১৮ সালে ৫৭১টি নাশকতার মামলা দায়ের করে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩২৪টি বেশি। ২০১৮ সালে ডিএমপিতে দায়ের হওয়া নাশকতার মামলাগুলোর মধ্যে রায়টের ১৪, পুলিশের ওপর হামলার ২২৯ ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ৩২৮টি। তবে নাশকতার এসব মামলা রেকর্ডসংখ্যকভাবে বেড়ে যাওয়াকে আইনশৃঙ্খলার অবনতি বলে মানতে নারাজ পুলিশ।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (মিডিয়া অ্যান্ড প্ল্যানিং) এস এম রুহুল আমিন বলেন, ‘বছরের শুরুর দিকে নাশকতার কিছু ঘটনায় মামলা হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলার তেমন অবনতি হয়নি। সবকিছু পুলিশের নিয়ন্ত্রণেই ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশে মাদকের মামলা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিও ইতিবাচক হিসেবেই দেখি আমরা। তা ছাড়া ২০১৮ সালে সারা দেশে সার্বিকভাবে মামলার সংখ্যা অনেক কমেছে।’

ডিএমপিতে নাশকতার মামলার সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘এসব মামলা কীভাবে হয়েছে, সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ সেটা ভালো বলতে পারবে। গণমাধ্যম ও কিছু রাজনৈতিক নেতারা গায়েবি এবং মিথ্যা মামলা দায়েরেরও অভিযোগ তুলেছেন। ডিএমপি ওইসব অভিযোগ যাচাই করে দেখছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান বলেন, ‘পুলিশের দায়ের করা এসব নাশকতার মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি, মৃত ব্যক্তি বা প্রবাসীদের নামেও নাশকতার মামলা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে গায়েবি বা মিথ্যা মামলা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিদায়ী বছরটিতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও নির্বাচনের আগে বিরোধী মতের লোকজনকে চাপে রাখা ও কারাগারে নেওয়ার জন্য কৌশল হিসেবে এসব মামলা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’

মামলার সংখ্যা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গেল বছর দেশের বিভিন্ন থানায় দিনে ৫৭০টির বেশি মামলা হয়। এ সময় সারা দেশে ২ লাখ ৮ হাজার ২৬০টি মামলা হয়েছে, যা আগের বছর ছিল ২ লাখ ২১ হাজার ৫২৯টি।

গত বছর দেশে হত্যা মামলা হয়েছে ৩ হাজার ৫৮৩টি, যার দৈনিক গড় প্রায় ১০টি। গত বছর দেশে হত্যা মামলা হয়েছিল ৩ হাজার ৫৪৯টি। এর মধ্যে সর্বাধিক ৭৯৮টি হত্যা মামলা হয়েছে ঢাকা রেঞ্জে। এরপর চট্টগ্রাম রেঞ্জে হয়েছে ৬৭৮টি। শুধু ঢাকায় হত্যা মামলা হয়েছে ২০৬টি।

অপরাধ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সারা দেশে ৪২৫ বার হামলার শিকার হয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে শুধু ঢাকা মহানগরীতে হামলার শিকার হয়েছে ২২৯ বার, যা আগের বছরের তুলনায় ৯৭ বার বেশি। ঢাকায় ২০১৭ সালে পুলিশের ওপর হামলার মামলা হয় ১৩২টি। আর ২০১৬ সালে ৭২টি, ২০১৫ সালে ১১৮ ও ২০১৪ সালে ১০৪টি হামলার ঘটনা ঘটে। বিদায়ী বছরে চট্টগ্রাম রেঞ্জে ১৩৩ বার ও ঢাকা রেঞ্জে ১১০ বার হামলার শিকার হওয়ার মামলা হয়।

বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ঢাকা মহানগরীতে মামলা হয় ৩২৮টি, যা ২০১৭ সালে ছিল ১০৮টি, ২০১৬ সালে ৮৮, ২০১৫ সালে ১৯৫ ও ২০১৪ সালে ১০৪টি। গত বছর বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১৩০, ঢাকা রেঞ্জে ৫৬, ময়মনসিংহ রেঞ্জে ৮২, খুলনা রেঞ্জে ১৭১ ও রাজশাহী রেঞ্জে ৮৯টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।

গত বছর সর্বাধিক মামলা হয়েছে চট্টগ্রাম রেঞ্জে, যার সংখ্যা ৩৮ হাজার ২৬৪টি। একই সময় ঢাকা মহানগরীতে মামলা হয়েছে ২৫ হাজার ৫২২টি। বছরজুড়ে অস্ত্র উদ্ধার মামলার সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২৮৯টি।

২০১৮ সালে সারা দেশে ১ লাখ ১৪ হাজার ৩৩০টি মাদকদ্রব্যের মামলা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭ হাজার ১৭৭টি বেশি। এ ছাড়া ৪২৫টি অপহরণ মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বাধিক ৯০টি ছিল ঢাকা রেঞ্জে।

গত বছর শুধু ঢাকায় ১৪টি রায়ট মামলা হয়েছে। এ ছাড়া খুলনায় তিনটি, রাজশাহী মহানগরে দুটি, ময়মনসিংহ ও সিলেটে একটি করে মামলা হয়। ২০১৭ সালে ঢাকায় রায়ট মামলা হয়েছে ৭টি। ২০১৬ সালে একটি, ২০১৫ সালে ২৬টি ও ২০১৪ সালে এ ধরনের ৭টি মামলা হয়।

ঢাকা রেঞ্জে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের মামলা হয় ২১ হাজার ৪৬৪, ডিএমপিতে ১৫ হাজার ২৯৮, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ১২ হাজার ৭১৬ ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৪ হাজার ৪৪০টি।

বিদায়ী বছরে দেশে দ্রুত বিচার আইনে ৮৮১, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা ১৫ হাজার ৪০৭, সিঁধেল চুরির ২ হাজার ১০, চুরির ৫ হাজার ১৭৪ ও অন্যান্য মামলা হয় ৬৪ হাজার ৯২৪টি। এ ছাড়া অস্ত্র মামলা ২ হাজার ২৮৯, মাদকদ্রব্য আইনে ১ লাখ ৬ হাজার ৭২৮ ও চোরাকারবারির ৪ হাজার ২৩২টি মামলা রেকর্ড করা হয়।

 

সূত্র: দেশ রূপান্তর

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button