গাজীপুর

কালীগঞ্জে ‘সরকারী স্কুল মাঠে’ অনুমোদন বিহীন মাসব্যাপী মেলার আয়োজন!

রেজাউল সরকার (আঁধার) নিজস্ব প্রতিবেদক : কালীগঞ্জ আর আর এন পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে মাসব্যাপী ‘তাঁতবস্ত্র ও হস্ত শিল্প মেলা প্রদর্শনী/বিক্রয় ২০১৯’ আয়োজনের অনুমোদনের জন্য আবেদন করেই মেলার প্রস্তুতি প্রায় সম্পূর্ণ করেছে তাঁতি সমিতি।

মেলার অনুমোদনের আবেদন পত্রে লেখা রয়েছে ‘বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় নিবন্ধিত তাঁতি সমিতির পরিচালনায় মাসব্যাপী ‘দেশিয় তাঁতবস্ত্র ও হস্তশিল্প বিক্রয় প্রদর্শনী মেলা, ২০১৯’। কিন্তু ব্যানারে আয়োজক হিসেবে লেখা রয়েছে ‘বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো মিলেনি মেলা আয়োজনের অনুমতি।

স্কুল মাঠে মেলা চত্বরে তৈরি করা হয়েছে প্রায় পঞ্চাশটির মতো স্টল এবং বিভিন্ন ধরনের বিনোদন মূলক রাইট যা সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক। আর প্রতি স্টলের ভাড়া দিন প্রতি এক হাজার থেকে পনের’শ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্টল তৈরির কাজে নিয়োজিত কয়েকজন শ্রমিক।

কিন্তু বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় মাসব্যাপী ‘দেশিয় তাঁতবস্ত্র ও হস্তশিল্প বিক্রয় প্রদর্শনী মেলা. ২০১৯’ এর কথা বলে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিকরণ করা হলেও সরকারের কোষাগারে জমা হয়নি কোন অর্থ।

বিনা অনুমতিতেই ‘সরকারী স্কুল মাঠে’ মাসব্যাপী মেলার আয়োজন করার জন্য নেওয়া হয়নি কোন ধরনের ইজারা। মাসব্যাপী আয়োজিত এই মেলা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে সরকারকে কয়েক লক্ষ টাকার রাজস্ব থেকে।

অথচ এই মাঠেই প্রতি বৎসর ‘পৌষ সংক্রান্তির মেলা’ এবং ‘গরুর হাট’ আয়োজন করা হয়ে থাকে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে। যা থেকে সরকারী কোষাগার জমা হয় কয়েক লক্ষ টাকার রাজস্ব।

মাসব্যাপী এই মেলা আয়োজনের জন্য গত ২৬ আগস্ট উপজেলা প্রশাসনের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল।

স্থানীয়রা জানান, কালীগঞ্জ আর আর এন পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠটিই উপজেলা সদরের একমাত্র উন্মুক্ত খেলার মাঠ। মেলার কারণে মাঠটি এখন সম্পূর্ণভাবে খেলাধুলার অনউপযোগী হয়ে গেছে। এতে করে যুবসমাজ বিপদগামী হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও এই মাঠে বিভিন্ন ধরনের খেলার টুর্নামেন্টসহ প্রশাসনের অনেক অনুষ্ঠান নিয়মিত ভাবেই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। মেলার কারণে প্রায় দেড় মাস এই মাঠে কোন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা এখন আর সম্ভব হবে না।

মেলার অনুমোদনের আবেদন পত্রে উল্লেখ্য রয়েছে, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের নিবন্ধিত সাঁথিয়া থানা মাধ্যমিক তাঁতি সমিতি এবং মিরপুর ৩ নং ওয়ার্ড প্রাথমিক তাঁতি সমিতির পরিচালনায় দেশের গরীব ও প্রান্তিক তাঁতিদের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী সরাসরি ক্রেতা সাধারণের কাছে বিপনণের উদ্দেশে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত ‘দেশিয় তাঁতবস্ত্র ও হস্তশিল্প বিক্রয় প্রদর্শনী মেলা ২০১৯’ আয়োজনে আগ্রহী। এজন্য আমরা কালীগঞ্জ আর আর এন পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে মোখিক অনুমতি পেয়েছি। উল্লেখ্য উক্ত মেলার পূর্বে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কালীগঞ্জ থানার ওসির পূর্ব অনুমতি গ্রহণ এবং শান্তি শৃঙ্খলা বিঘ্নিত না হয় তার জন্য অনুমতি প্রয়োজন।

এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের নিবন্ধিত সাঁথিয়া থানা মাধ্যমিক তাঁতি সমিতি এবং মিরপুর ৩ নং ওয়ার্ড প্রাথমিক তাঁতি সমিতির পরিচালনায় কালীগঞ্জ আর আর এন সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে মাসব্যাপী ‘দেশীয় তাঁত বস্ত্র ও হস্ত শিল্প বিক্রিয় প্রদর্শনী মেলা ২০১৯’ আয়োজন করার অনুমতি প্রদানের জন্য সবিনয় অনুরোধ করা হয় সাঁথিয়া থানা মাধ্যমিক তাঁতি সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান নয়ন এবং মিরপুর ৩ নং ওয়ার্ড প্রাথমিক তাঁতি সমিতির সদস্য জয়নাল আবেদীন স্বাক্ষরিত এক পত্রে।

মিরপুর ৩ নং ওয়ার্ড প্রাথমিক তাঁতি সমিতির সদস্য জয়নাল আবেদীন বিনা অনুমতিতে ‘সরকারী স্কুল মাঠে’ মাসব্যাপী মেলার আয়োজন কথা শিকার করে বলেন, ‘আমরা অনুমতির জন্য আবেদন করে মোখিক অনুমতি পেয়ে মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আর মেলা বাণিজ্যিকরণের বিষয়ে তিনি বলেন মেলার খরচ সকলে মিলে একসঙ্গে বহন করবো। স্টল প্রতি কোন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়নি’।

অপরদিকে সাঁথিয়া থানা মাধ্যমিক তাঁতি সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান নয়ন বলেন, ‘স্থানীয় ইউএনও, ওসি এবং এমপি’র সঙ্গে কথা বলেই মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছি। অনুমতির লিখিত কপি আমাদের সংগ্রহে রয়েছে। মেলা চত্বরে অনুমানিক ৬০-৭০ টির মতো স্টল তৈরি করা হবে এবং বিনোদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের রাইট রাখা হয়েছে। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রচারের জন্যই সারা দেশে এই মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে তাঁতি সমিতির পক্ষ থেকে। খরচ বাবদ প্রতি স্টল থেকে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হবে’।

কালীগঞ্জ থানার অফিস কক্ষে অফিসার ইনর্চাজ আবু বকর মিয়া এবং তাঁতি সমিতির সদস্য জয়নাল আবেদীন!

কালীগঞ্জ আর আর এন পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কে এম নুরুল ইসলাম আল-মোশারফ ইবনে কাদির বলেন, মেলার বিষয়ে আয়োজকরা আমার সঙ্গে আলোচনা করেছে মাত্র। অনুমতির দেয়ার এখতিয়ার আমার নেই।

গাজীপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির কালীগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আকিয়াব হোসেন বলেন, অনুমোদনের  বিষয়ে আমার জানা নেই। মেলা কর্তৃপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতেই সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম (ডিএসবি ও ডিবি) বলেন, কালীগঞ্জ আর আর এন পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে মেলা আয়োজনের  বিষেয়ে আমার কাছে কোন তথ্য নেই।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিবলী সাদিক জানান, তাঁতবস্ত্র ও হস্ত শিল্প বিক্রয় প্রদর্শনীর জন্য মেলার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। লিখিত কোন অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

মেলার বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম জানান, তাঁতবস্ত্র ও হস্ত শিল্প বিক্রয় প্রদর্শনী মেলার জন্য কেউ অনুমতি নেয়নি। এই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button