জানা গেল ইয়াবার নতুন রুট
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ‘‘বাংলাদেশে মাদকের কোনো উৎস নেই। এখানে যে মাদক পাওয়া যায়, তা কোনো না কোনোভাবে বিদেশ থেকে আসে৷ নতুন নতুন মাদকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে রুট হিসেবেই অধিকাংশ সময় ব্যবহার করা হচ্ছে।”
বলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের প্রধান উপদেষ্টা ও মাদকবিরোধী সংগঠন মানসের প্রতিষ্ঠাতা ডা. অরূপ রতন চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘‘কয়েকদিন আগে ‘খাট’ ও ‘গ্রিন টি’ নামে দুটি মাদক বাংলাদেশে পাওয়া যায়, এগুলো আফ্রিকা থেকে এসেছে। এখন আর আগের মতো মাদক স্থলপথে আসছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আকাশপথ ব্যবহার করা হচ্ছে।”
বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে ইয়াবা। ইয়াবার উৎস হিসেবে মিয়ানমারকে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু কক্সবাজারে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণের পর সেখানে হরহামেশা অভিযান চালাচ্ছে র্যাব। এই অভিযানে সেখানে অনেকে (র্যাব বলছে ইয়াবা ব্যবসায়ী) মারা গেছেন। ফলে মাদক ব্যবসায়ীরা নাফ নদীর এই রুটটিকে আর নিরাপদ মনে করতে পারছেন না। এই রুটে এখন ইয়াবা আসা অনেকটাই কমে গেছে।
এ মাসের শুরুতে রাজধানীর রামপুরা থেকে আব্দুস ছবুর নামে এক ভারতীয় নাগরিককে ১০ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাবাসাদ করে পুলিশ জানতে পারে ইয়াবার নতুন রুটের কথা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ‘‘ছবুরকে গ্রেফতারের পর আমরা জানতে পারি ইয়াবার নতুন রুট হয়েছে কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্ত। মিয়ানমার থেকে এই মাদক প্রথমে ভারতে যাচ্ছে, এরপর বাংলাদেশে ঢুকছে।”
ধৃত ছবুরকে বাহক বলছেন পুলিশ। সীমান্তের ওপারে প্রতি পিস ইয়াবা ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় কিনে এপারে এনে ৬৫ টাকায় বিক্রি করছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা মশিউর রহমান আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশে সবসময়ই বিপুল সংখ্যক বিদেশি অবস্থান করেন। এদের মধ্যে একটি গ্রুপ অপরাধকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। বিশেষ করে আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া ও ঘানার নাগরিকেরা বেশ কিছু অপরাধে জড়াচ্ছেন। শুধু মাদক নয়, জাল টাকা বা জাল ডলার তৈরি, ফেসবুকে বন্ধুত্ব করে প্রতারণাসহ নানা ধরনের অপরাধ করে যাচ্ছে।”
বিদেশি নাগরিকদের গ্রেপ্তার করা হলেও দূতাবাসের তৎপরতায় তাঁরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছেন বলে জানান মশিউর। তিনি বলেন, কেউ কেউ দেশে ফিরে গেলেও অনেকেই এখানে অবস্থান করে আবারও অপরাধে লিপ্ত হচ্ছেন।
পুলিশের সঙ্গে সুর মিলিয়ে অরূপ রতন চৌধুরীও বলেন, ‘‘এখানে অধিকাংশ মাদক ঢুকেছে আফ্রিকানদের হাত ধরে। ভারত থেকেও কিছু মাদক আসে। মূলত নতুন নতুন মাদক এ অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে বাংলাদেশকে রুট হিসেবে তারা ব্যবহার করছে। সরকারের অভিযান চলছে। তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে।”
গত জুনে জালিয়াতির মাধ্যমে এটিএম বুথ থেকে প্রায় ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ইউক্রেনের একটি চক্র। ওই চক্রের ছয় জনকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তাঁদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক কার্ড জালিয়াত চক্রের যোগাযোগ রয়েছে। ঈদের ছুটিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢিলে ঢালা থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওই জালিয়াত চক্র বুথ থেকে টাকা তুলে নেয়।
একটি ডলারকে দু’টি করে দেওয়ার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে ডলার হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গত তিন মাসে অন্তত ১০ নাইজেরিয়ানকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাঁদের কাছ থেকে জাল ডলার তৈরির মেশিনও উদ্ধার করা হয়েছে। কিছুদিন আগে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘‘ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও বিপুল সংখ্যক বিদেশি বাংলাদেশে অবস্থান করে নানা ধরনের অপরাধে লিপ্ত হওয়ার তথ্য আমাদের কাছে আছে। পর্যায়ক্রমে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।” এরপরই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করা বিদেশি নাগরিকদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে।
সূত্র: ডয়চে ভেলে