গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : রেলযাত্রায় ১০০ কিলোমিটারের অতিরিক্ত দূরত্বে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে আগামী ৪ মে। ওই দিন বা এর পরের যেকোনো সময়ে উল্লিখিত দূরত্বের বেশি ভ্রমণের জন্য এখনকার চেয়ে বাড়তি ভাড়া পরিশোধ করতে হবে রেলযাত্রীদের। ৪ মের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হচ্ছে বুধবার থেকে। এ অনুযায়ী বুধবার থেকেই যাত্রীদের ওই দিন বা এর পরের যেকোনো সময়ের জন্য ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে বাড়তি ভাড়া পরিশোধ করে টিকিট কিনতে হবে। এ নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়েতে দূরত্বভিত্তিক ও সেকশনভিত্তিক রেয়াতি সুবিধা দেয়া হয় ১৯৯২ সালে। এরপর ২০১২ সালে সেকশনাল রেয়াত বাতিল হলেও চালু ছিল দূরত্বভিত্তিক রেয়াত। সম্প্রতি রেলওয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোয় নতুন করে ভাড়া না বাড়িয়ে দূরত্বভিত্তিক রেয়াত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত ৪ মে থেকে কার্যকর হবে।
দূরত্বভিত্তিক রেয়াতি সুবিধায় ৩২ বছর ধরে মূল ভাড়ায় ১০১-২৫০ কিলোমিটার ভ্রমণে ২০ শতাংশ, ২৫১-৪০০ কিলোমিটারে ২৫ ও ৪০১ কিলোমিটার বা এর বেশি দূরত্বের জন্য ৩০ শতাংশ ছাড় দিয়ে আসছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। আর্থিক চাপ ও লোকসান কমাতে এখন এ সুবিধা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে রেলওয়ে। এর পাশাপাশি ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে ট্রেনে অতিরিক্ত সংযোজিত কোচ ও আবেদনের মাধ্যমে রিজার্ভকৃত টিকিটেরও। এক্ষেত্রে রিজার্ভেশন চার্জের ভিত্তিতে অতিরিক্ত সংযোজিত কোচ ও আবেদনের মাধ্যমে রিজার্ভকৃত নন-এসি টিকিটে ব্যয় বাড়ছে মূল ভাড়ার ২০ শতাংশ। এসি টিকিটে বাড়ছে ৩০ শতাংশ।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে গত ১ এপ্রিল থেকে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের মাধ্যমে নতুন ভাড়া কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এ নিয়ে গত ১৯ মার্চ রেল ভবনের বাণিজ্যিক বিভাগে বিপণন শাখার উপপরিচালক মো. মহব্বতজান চৌধুরী স্বাক্ষরিত একটি চিঠিও পাঠানো হয়। তবে শেষ পর্যন্ত ঈদযাত্রা শুরুর আগে নতুন ভাড়া কার্যকরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি কার্যকর হলে রেলওয়ের আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি থেকে বার্ষিক অন্তত ৩০০ কোটি টাকা বাড়তি আয় হবে বলে প্রত্যাশা খাতসংশ্লিষ্টদের।
রেলওয়ের অপারেশন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নতুন এ সিদ্ধান্ত হওয়ার পর ট্রেনের টিকিট বিক্রি ও ব্যবস্থাপনায় যুক্ত প্রতিষ্ঠান সহজ (জেভি) এরই মধ্যে সারা দেশে স্টেশন-টু-স্টেশন রেয়াতি সুবিধা বাদ দিয়ে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির হিসাবের ভিত্তিতে ১ হাজার ৩৪টি স্টেশন-টু-স্টেশনে নির্ধারিত নতুন ভাড়ায় এরই মধ্যে রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগের মাধ্যমে অনুমোদনও দেয়া হয়েছে।
সহজ (জেভি) ও রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, নতুন তালিকা অনুযায়ী আগামী ৪ মে থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে (তূর্ণা এক্সপ্রেস) শোভন চেয়ার শ্রেণীর ভাড়া ৩৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ৪০৫ টাকা ও এসি চেয়ারের (স্নিগ্ধা) টিকিটের ভাড়া ৬৫৬ থেকে বেড়ে ৭৭৭ টাকা হচ্ছে। ঢাকা-সিলেট রুটের (পারাবত) শোভন শ্রেণীর ভাড়া ৩২০ টাকা থেকে বেড়ে হচ্ছে ৩৭৫ টাকা। আর এসি টিকিটের দাম ৬১০ টাকা থেকে বেড়ে হচ্ছে ৭১৯ টাকা। ঢাকা-খুলনা রুটের সুন্দরবন এক্সপ্রেসে শোভন ও এসি চেয়ারে বিদ্যমান ভাড়া যথাক্রমে ৫০০ ও ৯৫৫ টাকা। ৪ মে থেকে তা হবে যথাক্রমে ৬২৫ ও ১ হাজার ১৯৬ টাকা। ঢাকা-রংপুর রুটের রংপুর এক্সপ্রেসের শোভন চেয়ারের বর্তমান ভাড়া ৫০৫ টাকা। রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের পর নতুন ভাড়া হবে ৬০৫ টাকা। এ ট্রেনে এসি চেয়ারের ভাড়া ৯৬৬ থেকে বেড়ে হচ্ছে ১ হাজার ২১৪ টাকা। ঢাকা-কুড়িগ্রাম রুটের কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের শোভন চেয়ারের ভাড়া ৫১০ থেকে বেড়ে ৬৪৫ টাকা ও এসি চেয়ারের ভাড়া ৯৭২ টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার ২৩৭ টাকা হতে যাচ্ছে। শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার ছাড়াও সব আন্তঃনগর ট্রেনে ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে এসি সিট ও বার্থ এবং প্রথম শ্রেণীর সিট ও বার্থ টিকিটের ভাড়াও আনুপাতিক হারে বাড়বে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালক (ট্রাফিক কমার্শিয়াল) নাহিদ হোসেন খান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আরোপিত রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। আগামী ৪ মে থেকে নতুন নিয়মে ট্রেনের ভাড়া দিতে হবে যাত্রীদের। সরাসরি ভাড়া না বাড়ালেও রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের কারণে ট্রেন যাত্রায় আগের চেয়ে কিছুটা বাড়তি খরচ হবে যাত্রীদের, যা রেলের সেবা ও বিদ্যমান গণপরিবহনের ভাড়ার তুলনায় খুবই নগণ্য। ২৪ এপ্রিল থেকে নতুন নিয়মে টিকিট কাটবেন যাত্রীরা।’
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেয়াতি সুবিধা বাদ দিয়ে নতুন ভাড়া কার্যকরের প্রস্তাব নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উত্থাপনের জন্য গত ১৩ ফেব্রুয়ারি একটি সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করে রেলওয়ে। এতে সই করেন রেলপথ মন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম ও সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাবটিতে অনুমোদন দিয়ে সই করেন গত ২ মার্চ। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর গত ৭ মার্চ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সালাহ্উদ্দিন আহমেদ রেলওয়ে মহাপরিচালককে যাত্রী পরিবহনে রেয়াত প্রত্যাহার এবং অতিরিক্ত সংযোজিত কোচের টিকিট বিক্রিতে রিজার্ভেশন চার্জ আরোপ করতে চিঠি দেন।
রেলের তথ্যমতে, একসময় রেলপথে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন হতো সক্ষমতার তুলনায় কম। খাতটিতে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন আকৃষ্ট করতে নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে অধিক যাত্রী পরিবহনে দূরত্বভিত্তিক ও সেকশনভিত্তিক রেয়াত (ছাড়) দেয়া শুরু হয়। বর্তমানে ঢাকা-কক্সবাজার নতুন রেলরুটে চলাচলকারী ছাড়া সারা দেশের অন্য সব ট্রেনেই দূরত্ব অনুযায়ী রেয়াতি সুবিধা বহাল রয়েছে।
সূত্র: বণিক বার্তা