গাজীপুর

কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান পলাশের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক

নিজস্ব সংবাদদাতা : কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন পলাশের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি অর্থ আত্মসাত ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরে অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের গাজীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ সাইদুজ্জামানে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা  হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের জন্য সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র চেয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ বেলাল হোসেন সরকারকে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি মঙ্গলবার (০৫ মার্চ) রাতে সংবাদ কর্মীদের নিশ্চিত করেছেন কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ বেলাল হোসেন সরকার।

জানা গেছে, গত ৩ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশনের গাজীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা  মোঃ সাইদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন পলাশের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি অর্থ আত্মসাত ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের জন্য বেশ কিছু প্রকল্পের রেকর্ডপত্র/তথ্যাদি পর্যালোচনা করা প্রয়োজন‌ বলে জানিয়েছে দুদুক।

পত্র প্রাপ্তির পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চাহিদা মাফিক রেকর্ডপত্র/তথ্যাদি সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে অনুরোধ করা হয়েছে।

দুদক যেসব প্রকল্পের রেকর্ডপত্র চেয়েছে তা হলো: ‘শহীদ ময়েজ উদ্দিন মুক্তমঞ্চ নির্মাণ ও সুপেয় পানির পাম্প’ স্থাপন প্রকল্পের টেন্ডারের নথিপত্র সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র।

বিগত ২০২০-২০২১, ২০২১-২০২২ ও ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে কালীগঞ্জ উপজেলায় মশা নিধনের জন্য মোট কত টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে (বছর ভিত্তিক) এ সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি এবং বরাদ্দকৃত টাকা মশা নিধনের জন্য ব্যবহারের নিমিত্তে ঠিকাদার নিয়োগ সংক্রান্ত টেন্ডারের নথিপত্র সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র।

এছাড়াও ২০১৯ সাল থেকে কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ভবন ও সীমানা প্রাচীর সংস্কার সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের টেন্ডারের নথিপত্র সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র।

রেকর্ডপত্র চাহিদার মধ্যে রয়েছে, দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, ঠিকাদারের দাখিলকৃত দরপ্রস্তাব, টেন্ডার ওপেনিং ও মূল্যায়ন কমিটি, দরপত্র মূল্যায়ন প্রতিবেদন, তুলনামূলক বিবরণী, নোটিফিকেশন অব এওয়ার্ড, চুক্তিপত্র, কার্যাদেশ ও বিল প্রদান সংক্রান্ত সকল নথিপত্র দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতরে শহীদ ময়েজ উদ্দিন মুক্তমঞ্চ তৈরির জন্য ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং নির্মাণের পর একই বছরের ৯ অক্টোবর শহীদ ময়েজ উদ্দিন মুক্তমঞ্চের উদ্বোধন করা হয়।

‘মুক্তমঞ্চ ও সুপেয় পানির পাম্প’ স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ৬০ লাখ টাকারও অধিক অর্থ বরাদ্দ ছিলো। এরপর মাত্র ৮ বছরের মধ্যেই ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভার কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, উপজেলা পরিষদের সামনের মুক্তমঞ্চটি জরাকীর্ণ অবস্থায় থাকায় আলোচনা করে মুক্তমঞ্চটি ভেঙ্গে ফেরার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এরপর এক মাস যেতে না যেতেই উপজেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির পরবর্তী সভার কার্যবিবরণীতে ভিন্ন কথা উল্লেখ করা হয়। ওই সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর। ওই কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, উপজেলা পরিষদের একক ভবন নির্মাণের জন্য জায়গার সংকুলান না হওয়ায় উপজেলা পরিষদের সামনের মুক্তমঞ্চটি ভেঙ্গে ওই স্থানে উপজেলা পরিষদের একক ভবন (৮তলা) নির্মাণের বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী প্রস্তাবনা পেশ করেন এবং এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। পরে উপজেলা পরিষদের সামনের মুক্তমঞ্চটি ভেঙ্গে ওই স্থানে উপজেলা পরিষদের একক ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর ৭ নভেম্বর মুক্তমঞ্চটি ভেঙ্গে ফেলা হয়।

আরো জানা গেছে, মশা নিধনে ২০-২১ অর্থ বছরে ৪০ লাখ টাকা, ২১-২২ অর্থ বছরে ৫০ লাখ টাকা এবং ২২-২৩ অর্থ বছরে ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। তিন অর্থ বছরে মোট বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এছাড়াও সর্বশেষ ২৩-২৪ অর্থ বছরে মশা নিধনে আরো ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি সংবাদ কর্মীদের নিশ্চিত করে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ বেলাল হোসেন সরকার বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দুদকের চাহিদা অনুযায়ী তথ্য দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

উল্লেখ্য: ২০১৪ সালের ৩১ মে অনুষ্ঠিত চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থন পেয়ে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন মোয়াজ্জেম হোসেন পলাশ। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

 

এ সংক্রান্ত আরো জানতে………….

পূর্বাচলে ৬৩ প্লট বাগিয়ে নেয়া ‘দ্বৈত নাগরিক’ অলি ম্যাজিকে দুদক ম্যানেজ!

পূর্বাচলে চেয়ারম্যান অলির স্বজনদের নামে ৬৩ প্লট, দুদকের অনুসন্ধান শেষ পর্যায়ে

দুর্নীতির মাধ্যমে ৬৩টি প্লট হাতিয়ে নিয়ে দুদকের জালে নাগরীর চেয়ারম্যানসহ তাঁর স্বজনরা!

এলএ শাখার সহযোগীতায় ‘পূর্বাচলে প্রায় সাড়ে ৫শ কোটি টাকা মূল্যের প্লট’ হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা!

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button