এলএ শাখার সহযোগীতায় ‘পূর্বাচলে প্রায় সাড়ে ৫শ কোটি টাকা মূল্যের প্লট’ হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা!
বিশেষ প্রতিনিধি : গাজীপুর ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগীতায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ‘পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের’ কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বড়কাউ ও পাড়াবর্থা মৌজায় অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিগ্রস্থ ও অধিবাসীদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় সাড়ে ৫শ কোটি টাকা মূল্যের দেড় শতাধিক প্লট ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে হাতিয়ে নেয়ার জন্য নামে-বেনামে আবেদন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও তার ভাগিনার বিরুদ্ধে।
মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে প্লট বরাদ্দ পেতে তাদের সাহায্য করছে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখার কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বড়কাউ ও পাড়াবর্থা মৌজায় এল,এ কেস নং ০২/২০০০-২০০১,০৭/২০০১-২০০২ ও ০৩/২০০০-২০০১ এর আওতায় প্রকল্পের অধিগ্রহণ শুরু হয়। পরে রাজউক ওই দুই মৌজায় যাদের পৈত্রিক বা বৈধ ক্রয়কৃত সম্পত্তি ও বাড়িঘর ছিল তাদের ক্ষতিগ্রস্থ এবং অধিবাসী হিসেবে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদনপত্র আহবান করেন। আবেদন গ্রহণের শেষ পর্যায়ে নাগরী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির মিয়া, তার ভাগিনা অলি ও পরিবারের লোকজন ব্যক্তিস্বার্থে মিস কেসের মাধ্যমে সময় বাড়িয়ে গাজীপুর এলএ অফিসের কিছু অসৎ কর্মকর্তার যোগসাজশে নামে বেনামে ভূয়া পর্চা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের পরিবর্তে বড়কাউ গ্রামের ঠিকানায় তৈরীকৃত জন্ম নিবন্ধন সংযুক্ত করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্থদের বিল তুলে নেয় এবং প্লটের জন্য রাজউকে আবেদন করে। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৫শ কোটি টাকা মূল্যের দেড় শতাধিক প্লট বরাদ্দের কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, প্লট বরাদ্দ পেতে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে তাদের সহযোগীতায় করছে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চেয়ারম্যানের পক্ষে থেকে জমা দেওয়া আবেদনে কোন কাগজ-পত্র যাচাই বাছাই না করেই তারা গ্রহণ করে প্লট বরাদ্দের সকল প্রকার কার্যক্রম শেষ করেছে।
চেয়ারম্যান কাদির তার বাসার গৃহকর্মীর মেয়ে হাসি আক্তার, ড্রাইভার টাহুরদিয়া গ্রামের মৃত অকিল উদ্দিনের পুত্র স্বপন, শ্যালক গাজীপুরের পুবাইল থানাধীন বাড়ৈবাড়ী গ্রামের নাজিম উদ্দিন সরকার, নাজির সরকার ও জামান সরকার, ভায়রার পুত্র পূবাইল থানার খিলগাঁও গ্রামের নাসির সরকার ও কন্যা লুৎফা বেগম, অলির মামাতো বোন খাদিজা আক্তার তিশা, রুপগঞ্জ উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন, তার দুই কন্যা রুনা ও রুনিয়া আক্তার, তালিয়া গ্রামের বিল্লাল হোসেনের দুই পুত্র জিল্লুর রহমান ও মতিউর রহমানের নামে ৩ কাঠা এবং ৫ কাঠার প্লটের জন্য রাজউকে আবেদন করেছে।
আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত এলএ অফিসের তথ্য সংগ্রহ পত্রে বড়কাউ ও পাড়াবর্থা মৌজার উল্লেখিত দাগ খতিয়ানে আবেদনকারীদের নাম থাকলেও জমির মূল পর্চায় তাদের নাম নেই।
বড়কাউ মৌজার আরএস ৫৯১, ১২০৭, ১৩২৯, ৩৩৩ ও পাড়াবর্থা মৌজায় আরএস ৩১৭ দাগের প্রকৃত মালিক বড়কাউ গ্রামের মুনসুর আলীগং, মৃত শাহাজদ্দিনের ছেলে মজিবুর রহমানগং, করম আলীর ছেলে কফিল, সেরাজউদ্দিন, সাহাজউদ্দিন ও মোন্তাজউদ্দিন ও আর্চ বিশপ গং।
এছাড়াও বড়কাউ ও পাড়াবর্থা মৌজায় এল,এ কেস নং ০২/২০০০-২০০১,০৭/২০০১-২০০২ ও ০৩/২০০০-২০০১ এর আওতায় প্রকল্পের অধিগ্রহণ শুরু হলেও খাদিজা আক্তার তিশার নিবন্ধন অনুযায়ী জন্ম তারিখ ২/০৬/২০০৫। কিন্তু নোটারী পাবলিকের হলফনামায় তার জন্ম তারিখ উল্লেখ্য রয়েছে ০৬/০৮/২০০৭। প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ শুরু হওয়ার পর জন্ম নেয়া একই ব্যক্তির দুইটি জন্ম তারিখ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বড়কাউ গ্রামের মৃত শাহাজদ্দিনের পুত্র মজিবুর রহমান বলেন, বড়কাউ মৌজায় আরএস ১৩২৯নং দাগে জমির মালিক আমরা হলেও এলএ অফিস থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা পাইনি। এলএ অফিস থেকে জানতে পারি তালিয়া গ্রামের বিল্লাল হোসেনের দুই ছেলে জিল্লুর রহমান ও মতিউর রহমান উক্ত জমির কাগজপত্র দেখিয়ে বিল উত্তোলন এবং প্লটের জন্য আবেদন করেছেন।
এ ব্যাপারে গাজীপুর এলএ অফিসের সার্ভেয়ার মো. বেলালুর রহমান জানান, চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির নিজে অফিসে এসে ওইসব লোকদের নাগরিকত্ব সনদপত্রসহ কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন।
এলএ অফিসের কানুনগো আবুল বাশার জানান, কাদির চেয়ারম্যান, তার ভাগিনা অলি এবং তার পরিবারের লোকজন মিস কেসের মাধ্যমে সময় বাড়িয়ে প্রায় দেড় শতাধিক ব্যক্তির নামে প্লটের জন্য আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে নাগরী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির মিয়া জানান, প্লটের জন্য আবেদনকারীদের বাড়ি নাগরী ইউনিয়নের নগরভেলা গ্রামে। নগরভেলা গ্রামের বাসিন্দা হয়ে বড়কাউ মৌজায় কিভাবে প্লটের জন্য আবেদন করেন প্রতিবেদকের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি চটপট বলেন, পুর্বে তাদের বাড়ি বড়কাউ গ্রামে ছিল। তবে স্থানীয়রা জানান, চেয়ারম্যান যাদের নামে প্লটের আবেদন করেছেন তারা কেউই বড়কাউ মৌজার বাসিন্দা নয়।
উল্লেখ্য: ‘পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে’ নাগরী ইউনিয়নের বড়কাউ ও পাড়াবর্থা মৌজায় ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে প্লট হাতিয়ে নেয়ার জন্য নামে-বেনামে করা আবেদনের নথিপত্র আমাদের সংরক্ষণে রয়েছে।
চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির মিয়ার আরো সংবাদ জানতে…….
কালীগঞ্জের পুলিশ হত্যায় বিতর্কিত চার্জশিট: বাদ পড়েছে নির্দেশদাতা কাদের চেয়ারম্যান?
পুলিশ হত্যা মামলায় বিতর্কিত চার্জশিট, প্রত্যাখান করে উচ্চ আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি