গাজীপুর

গাজীপুরের কৃষিজমি রক্ষায় ডিসির উদ্যোগ, সাব-রেজিস্ট্রারদের চিঠি

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : নগরায়ন, শিল্পায়ন ও গ্রামে মানুষের বাড়ি নির্মাণের কারণে দেশে প্রতিনিয়ত কমছে কৃষিজমি। এই প্রেক্ষাপটে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষিজমি রক্ষায় ব্যাপক উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে গাজীপুর জেলার কৃষিজমি রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছেন‌ গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান।

গাজীপুরের কৃষিজমি রক্ষায় কৃষি জমির হস্তান্তর দলিল সম্পাদনের পূর্বে কালেক্টরের পূর্বানুমোদন নেয়ার জন্য সম্প্রতি গাজীপুরের সকল সাব-রেজিস্ট্রারকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান। একইসঙ্গে কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন-এর যথাযথ প্রতিপালনের অনুরোধ করেছেন ডিসি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর জেলার মোট আয়তন ১ হাজার ৮’শ ৬.৩৬ বর্গ কিলোমিটার। এরমধ্যে মোট আবাদযোগ্য জমি রয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৯৩ হেক্টর। মোট আবাদী জমির পরিমাণ ১ লাখ ৪১ হাজার ৭০ হেক্টর। জলাভূমি রয়েছে ৫ হাজার ৭৯৪ হেক্টর। বণাঞ্চল রয়েছে ১৭ হাজার ৮০ হেক্টর। আবাদযোগ্য পতিত জমি রয়েছে ৪৮৮ হেক্টর এবং শিল্পকারখানা রয়েছে ৭ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমিতে। গাজীপুর জেলায় এক ফসলী জমি রয়েছে ৪৬ হাজার ৫৬ হেক্টর, দুই ফসলী জমি রয়েছে ৪১ হাজার ৫৩৬ হেক্টর এবং তিন ফসলী জমি ১৬ হাজার ৫৭৮ হেক্টর।

সাব-রেজিস্ট্রারদের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, অকৃষি প্ৰজা কর্তৃক শিল্প, বাণিজ্যিক বা আবাসিক প্রয়োজনে কৃষি জমি ক্রয়ে কালেক্টরের পূর্বানুমোদন এবং রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর অধীন প্রণীত হালনাগাদ খতিয়ান ব্যতিত স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের দলিল সম্পাদনের আইন যথাযথ প্রতিপালন সংক্রান্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ৯০(২) ধারা মোতাবেক কোন কৃষি জমি প্রকৃত কৃষক নয় এইরূপ ব্যক্তির নিকট হস্তান্তর নিষিদ্ধ। একই আইনের ৯০ (৪) ও (৫) ধারায় বলা হয়েছে প্রকৃত কৃষক নয় এইরূপ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান শিল্প, বাণিজ্যিক বা আবাসিক প্রয়োজনে উপযুক্ত রাজস্ব কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদনক্রমে কৃষি জমি ক্রয় করতে পারবে। ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল ১৯৯০ এর ১৬১ অনুচ্ছেদেও প্রকৃত কৃষক নয় এইরূপ ব্যক্তির নিকট কোন কৃষি জমি হস্তান্তর নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং উপযুক্ত রাজস্ব কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদনক্রমে শিল্প, বাণিজ্যিক বা আবাসিক প্রয়োজনে কৃষি জমি ক্রয় করতে পারবে মর্মে উল্লেখ রয়েছে।

বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, গত ২০ জুলাই ২০১৪ তারিখ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষি মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে তিনি অকৃষি কাজে কৃষি জমি ব্যবহার সীমিত করার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

এছাড়াও মহামন্য হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নম্বর ৩৩৯৮/২০১৪ এর আদেশে কৃষি জমি হ্রাস তথা কৃষি জমি অকৃষি কাজে ব্যবহার রোধকল্পে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

অপরদিকে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ধারা ২(৩) ধারা ২(২৪) এবং ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল ১৯৯০ এর অনুচ্ছেদ ১৮ মোতাবেক কালেক্টর জেলা পর্যায়ে প্রধান রাজস্ব অফিসার ও প্রধান ভূমি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।

এছাড়াও কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান, হাউজিং কোম্পানি, সমবায় সমিতি বা‌ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান কোন জমি বাণিজ্যিক বা অকৃষি কাজে ব্যবহার করতে চাইলে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ১৪৩ ধারা অনুযায়ী কালেক্টর কর্তৃক রেকর্ড সংরক্ষণ ও হালকরণ এবং ভূমি উন্নয়ন করা আদায়ের উদ্দেশ্যে উক্ত জমির শ্রেণি কৃষি (যেমন নাল, বোরো) থেকে অকৃষি শ্রেণিতে (যেমন ভিটি) পরিবর্তন করা আবশ্যক।

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, উপর্যুক্ত বিশ্লেষণ অনুযায়ী অকৃষি প্রজা কর্তৃক শিল্প, বাণিজ্যিক বা আবাসিক প্রয়োজনে কৃষি জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে কালেস্টরের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক হলেও অধিকাংশ কোম্পানী/সমবায় সমিতি কালেক্টরের পূর্বানুমোদন ব্যতীত জমি হস্তান্তর দলিল সম্পাদন করছে। যার দরুন ভূমি ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।

এরূপ ক্ষেত্রে ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল ১৯৯০ এর ৩২৭ অনুচ্ছেদ মোতাবেক ক্রয়কৃত জমি বাজেয়াপ্ত করার বিধান রয়েছে। সেহেতু জেলা প্রশাসক/কালেক্টরের পূর্বানুমোদন ব্যতিত প্ৰকৃত কৃষক নয় এইরূপ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে শিল্প, বাণিজ্যিক বা আবাসিক প্রয়োজনে কৃষি জমি হস্তান্তর দলিল সম্পাদন করা বর্ণিত আইনসমূহের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

এছাড়াও, কিছু কিছু ক্ষেত্রে হালনাগাদ রেকর্ড ব্যতিত বিক্রয়/হস্তান্তর দলিল সম্পাদনের ফলেও ভূমি ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।

নিবন্ধন আইন, ১৯০৮ এর ৫২(ক) ধারা এবং সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ এর ৫৩ (সি) ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর অধীন প্রণীত হালনাগাদ খতিয়ান ব্যতিত দলিল সম্পাদন ও হস্তান্তর করা নিষিদ্ধ এবং এই হস্তান্তর অবৈধ।

এমতাবস্থায়, প্রকৃত কৃষক নয় এমন ব্যক্তি কর্তৃক শিল্প, বাণিজ্যিক বা আবাসিক প্রয়োজনে কৃষি জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে কালেক্টরের পূর্বানোমোদন ব্যতিরেকে কোন অকৃষি প্ৰজা (শিল্প প্রতিষ্ঠান, হাউজিং কোম্পানি, সমবায় সমিতি বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান)-এর নামে রেজিস্ট্রেশন সম্পাদন না করার জন্য অনুরোধ করা হলো। একই সাথে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর অধীন প্রণীত হালনাগাদ খতিয়ান ব্যতিত দলিল সম্পাদন না করার জন্যও অনুরোধ করা হলো।

 

আরো জানতে…………

কালীগঞ্জে নথিপত্র যাচাই-বাছাই ছাড়াই একজনের জমি নামজারি হচ্ছে অন্যজনের নামে!
কালীগঞ্জে ‘সরকারি জমি বন্ধক’ রেখে ৬৭ লাখ টাকা ঋণ, বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিক্রির চেষ্টায় ব্যাংক!
কালীগঞ্জে চার কোম্পানির দখলে ‘শীতলক্ষ্যার ১৫ একর জমি’, উদ্ধারের দায়িত্ব নিচ্ছে না কেউ!
কালীগঞ্জে শীতলক্ষ্যার ৩ একর জমি ভরসা গ্রুপের দখলে
সেভেন রিংস সিমেন্ট ফ্যাক্টরি ফসলি জমিতে, নদীর পাড় দখল করে সম্প্রসারণ
কালীগঞ্জে ‘ইকো পার্কের’ নির্ধারিত সরকারি জমি অবৈধ দখলে, পাহারায় আনসার নিযুক্ত!

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button