আলোচিত

জুলাইয়ে ৪৬ ‘ক্রসফায়ার’ আগস্টে এক, তাও প্রশ্ন

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ২০০৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১৭ বছরে তিন হাজার ৮৮০ জন কথিত ক্রসফায়ারে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মারা গেছেন। সেই হিসাবে এই সময়কালে প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে ক্রসফায়ারে। চলতি বছরের জুলাই মাসেও ক্রসফায়ারে নিহতের সংখ্যা ৪৬। অথচ এর পরের মাসে অর্থাৎ গতকাল শেষ হওয়া আগস্টে ক্রসফায়ারে মাত্র একজন মারা গেছেন।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, জুলাইয়ের শেষ দিন কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার পরই কার্যত সাময়িকভাবে থেমে গেছে ক্রসফায়ার। তারা বলছেন, সিনহার মৃত্যুতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হওয়ায় আপাতত ক্রসফায়ার বন্ধ রাখা হয়েছে। এটি সাময়িক। দীর্ঘমেয়াদি এটি ক্রসফায়ারের ওপর প্রভাব ফেলবে না এবং সিনহার ক্রসফায়ার ইস্যু থিতিয়ে এলে ফের এটি শুরু হবে।

ঈদুল আজহার ছুটি চলাকালীন গত ২ আগস্ট সিলেটের জকিগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে কথিত ক্রসফায়ারে নিহত হন আবদুল মান্নান ওরফে মুন্না (৩৫)। তবে নিহতের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, মুন্নাকে সাজানো মামলায় ফাঁসিয়ে ক্রসফায়ারে দেওয়া হয়েছে। নিহত মুন্নার বাড়ি জকিগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের খাদিমান গ্রামে।

জকিগঞ্জ থানার ওসি মীর আবদুন নাসের জানান, মুন্নার নামে মাদক চোরাচালান, অস্ত্র, ডাকাতির প্রস্তুতি, বিস্ফোরকসহ ১২ মামলা রয়েছে। পুলিশি ভাষ্যে এ ক্রসফায়ারের ঘটনাও একই বৃত্তে আবর্তিত।

জকিগঞ্জ থানার ওসি জানান, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় ২ আগস্ট বিকালে পুলিশ মুন্নাকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না জানান, তার বসতঘরে ইয়াবা ও অস্ত্র রয়েছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে রাতে পুলিশ তাকে নিয়ে ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে যাওয়ার পথে অজরগ্রামে পৌঁছলে মুন্নার সঙ্গীরা পুলিশের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। তখন পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। এর পর আহতাবস্থায় মুন্নাকে উদ্ধার করে জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মাদককারবারিদের গুলিতে সাত পুলিশও আহত হন বলে দাবি করেন ওসি। ঘটনাস্থল থেকে একটি পাইপগান, ৫ রাউন্ড গুলি, ৬টি ধারালো দা ও ৮০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধারের কথা জানায় পুলিশ।

পুলিশের বক্তব্য মিথ্যা, অভিযোগ মুন্নাদের পরিবারের।

নিহতের স্বজনরা জানান- চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন মুন্না। পেশায় ছিলেন রিকশাচালক। তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে নানাবাড়িতে থাকতেন মুন্না।

পুলিশি নির্যাতনের শিকার হতে পারেন আশঙ্কায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুন্নার এক ভাই বলেন, আমাদের বাড়িতে তো থাকার জায়গা পর্যন্ত নাই। ঘর নাই। ছোট ভাই অজরগ্রামে নানাবাড়িতে ছিল। আমি থাকি আরেক জায়গায়। ২ আগস্ট দুপুরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় বলে নানাবাড়ির লোকজন জানান। পর দিন ভোরে জানতে পারি তাকে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলা হয়েছে।

নিহতের ভাই দাবি করেন, ৯ মাস আগে মুন্নাকে পুলিশ ধরে মাদক মামলায় দেয়। তার রিকশায় আরেকজন মাদক নিয়ে ওঠে। কিন্তু সে কিছু জানত না। সে কারাগারে থাকাবস্থায় তাকে আরও তিনটি মামলায় আসামি করে ওসি। পুলিশ অন্য যেসব মামলার কথা বলছে, তাতে নাম এক থাকলেও বাবার নাম আলাদা। তার মানে সেসব মামলার আসামি আমার ভাই না। আরেকজন আসামি হলে তাকে গ্রেপ্তার করুক। এভাবে মেরে ফেলব? তার ছোট সন্তানের বয়স ৭ মাস। সন্তানদের দেখবে কে? প্রশ্ন রাখেন তিনি।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, ক্রসফায়ার কমে গেছে বলার সুযোগ নেই। একটা ঘটনার পর দৃশ্যত থমকে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেওয়ায় কৌশল হিসেবে ক্রসফায়ার হয়তো বন্ধ রাখা হয়েছে। এটি সাময়িক। যতদিন এটি বন্ধ করার জন্য রাষ্ট্রের দৃশ্যমান পদক্ষেপ না দেখব, ততদিন ক্রসফায়ার বন্ধ হবে না। এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একক বিষয় নয়। রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করেন, তারা এটি কীভাবে দেখেন, সেটিই মুখ্য। সরকারের প্রচ্ছন্ন নির্দেশনা ছাড়া এটি বন্ধ হবে না।

প্রসঙ্গত গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। ঘটনার পর অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন করে বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধের দাবি জানান।

 

সূত্র: আমাদের সময়

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button