আলোচিত

মহা সঙ্কটে মধ্যবিত্ত

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : আমরা গোটা পৃথিবীর মানুষ এখন ঘরে বন্দি। বাইরে বেরুনোর পথে পথে ঝুঁকি, তাই পদে পদে বাঁধা। তাই আমরা ছোট বড় সবাই চুপ করে আছি ঘরের মধ্যে। কিন্তু আমাদের উদর মানে আমাদের পেট কিন্তু বসে নেই, সে খাবার চায়, প্রতিদিন নিয়ম করেই তার খাবারের চাহিদা। কিন্তু কোথায় পাব আমরা এত খাবার! সবাই কি বৈষয়িক হয়! টাকা জমায় নিদানের জন্য! অনেকেই করে, কিন্তু সবাই না। আবার অনেকেই করতে চান, কিন্তু পারেন না। আমাদের চারপাশে এমন ‘চান না’ আর ‘পারেন না’ দের ছড়াছড়ি। সবাই আমরা হতদরিদ্র আর দৈনিক মজুরী বিক্রি করা মানুষের কথা ভাবছি, ভাবছি কৃষক আর কৃষি শ্রমিকদের কথা। আমাদের সরকার প্রধান বার বার একটা কথা বললেও আমরা মনে হয় তাঁর কথা ঠিকমত বুঝতে পারছি না।

বেঁচে থাকার পরেই আমরা যা চাই তা হচ্ছে আনন্দ। সুন্দর সুন্দর নানা অনবদ্য সৃষ্টির মাধ্যমে তাঁরা আমাদের মন প্রাণ আন্দোলিত করে আনন্দ দিয়ে থাকেন। যারা আমাদের আনন্দ দেন তাদের মধ্যে আছেন চিত্র শিল্পী, নৃত্য শিল্পী, সংগীত শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, স্থপতি, ইত্যাদি।

এই সুন্দরকে বিশ্লেষণ করা, আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করার আরেক নাম নন্দনতত্ত্ব। এই নন্দনতত্ত্বে সৌন্দর্য, শিল্প, স্বাদ এবং সৌন্দর্য সৃষ্টি ও উপভোগ নিয়ে আলোচনা করা হয়। আরও বৈজ্ঞানিকভাবে বললে হয় নন্দনতত্ত্ব মানুষের সংবেদনশীলতা ও আবেগের মূল্য এবং অনুভূতি ও স্বাদের বিচার নিয়ে আলোচনা করে। আর একটু বৃহৎ অর্থে বিশেষজ্ঞরা বলেন, নন্দনতত্ত্ব শিল্প, সংস্কৃতি এবং প্রকৃতি নিয়ে সূক্ষ্ণ ও সমালোচনামূলকভাবে আলোচনা করে।

যে চিত্র শিল্পী আমার আপনার বাচ্চার ছবি আঁকা শেখাতো তাঁর কি অবস্থা এই করোনাকালে তা কি আমরা জানি! আমার মেয়ের বা ছেলের নাচের মাস্টার যে নৃত্য শিল্পী সে কি করছেন, কি খাচ্ছেন তা আমাদের জানা নেই। আমরা জানি না আমার সন্তানের গানের মাস্টার সেই সংগীত শিল্পী বর্তমান হালচাল, এই সঙ্কটে। জানিনা নিরহংকারী সাহিত্যিক, কবির কথা যে লেখাকে পেশা হিসেবে নিয়েছে, বাসা বাড়ির ইন্টেরিয়র ডিজাইন করে দিয়ে যে সংসার চালান সেই উদীয়মান স্থপতির কথা কি আমরা কখনো ভাবছি! ভাববো কী করে নিজের জীবন নিয়েই তো চলছে ইয়া নফছি ইয়া নফছি অবস্থা!

স্কুল ও অফিস বন্ধ। মাথা ন্যাড়া করার হিড়িক পড়েছে। শুধু ছাত্রই না, তাদের বাবারাও এই সুযোগে অনেকেই ন্যাড়া করে নিয়েছেন। কারণ যে নরসুন্দর আমাদের চুল দাড়ি কেটে দিতেন, তাঁর কাছে ভয়ে আর কেউ যান না। স্কুল ছুটির পরে যে ড্রাইভার বা গাড়িচালক গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন তাঁর পরিবারের অবস্থা কী ক’জন খবর রাখে! বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক যে পেশার পাশাপাশি ছোট খাট টিউশানি করে সংসার চালাতো তাঁর তো হাড়িতে চাল বাড়ন্ত। একই অবস্থা অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি চাকুরে পেনশন নেই বলে টিউশানি করে চালাত সংসার। কেউ আর কোন অনুষ্ঠানে ডাকছেন না ছোট বা মাঝারী গোছের অভিনেতা/ অভিনেত্রীদেরকে। উঠতি যন্ত্র শিল্পী বা সংগীত শিল্পী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সহ নানা ধরনের পেশাজীবী আর পেশা-নির্ভর লোকের সঙ্গে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। আবসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বিভিন্ন শপিং-মল, দোকানের কর্মী, তাঁদের কী অবস্থা! তাঁদের জীবন খুব কঠিন হয়ে গেছে কারণ এরা না পারে হাত পাততে, না পারে চাইতে কারো কাছে। মুখ দেখাদেখি হলে চেহারা দেখেই বুঝা যেত কেমন আছেন তাঁরা। তার তো সুযোগ নেই। কথা বলার মত টাকার ব্যাল্যান্স নেই মোবাইলে। তাই কথা বলারও সুযোগ নেই। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা ছোট মাঝারী কর্মীদের কি অবস্থা তা গার্মেন্টস সহ বিভিন্ন কারখানার দিকে তাকালেই আমরা অনুমান করতে পারি। কিন্তু আমরা কি অনুমান করতে পারি তাঁরা কী অবস্থায় তাঁদের দিনাতিপাত করছে এই করোনাভাইরাসের দুর্দিনে!

সরকারী হিসেবে প্রায় ৪ কোটি মানুষ আয়কর দেওয়ার যোগ্য। মানে তাঁরা সচ্ছল। তাঁরা তাঁদের সঞ্চয় দিয়ে বেশ কিছুদিন চলতে পারেন। তাই আমরা যদি ১ জন করেও মধ্যবিত্ত এসব শিল্পী সাহিত্যিকদের দেখভাল করি বা খবর নিই তাহলে অনেকেই বেঁচে যান। তা না হলে এসব অভিমানী মধ্যবিত্ত শিল্পী সাহিত্যিকরা মহা সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারবেন না। অনেকে বলছেন, এদের কেউ কেউ হয়তো মারা যাবেন নানাভাবে নিজের বাসার মধ্যে। শুধু সরকার একা সব সমস্যার সমাধান করতে পারবে না, কারণ সব তথ্যও সরকার পাবে না।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button