দর্জি মালিকদের লোভের কাছে জনস্বাস্থ্যের পরাজয়
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দেশের মানুষকে স্বাস্থ্যের ভয়াবহ ঝুঁকিতে ফেললো দেশের গার্মেন্টস মালিকরা। তাদের লোভের কাছে পরাজিত হলো জনস্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যের বিধি বিধান এবং মানুষের মৌলিক অধিকার। ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই ছুটির মেয়াদ আজ ১ক মাস পূর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে সরকার নতুন করে ছুটি বাড়িয়েছে ৫ মে পর্যন্ত। কিন্তু যখন প্রথম ছুটি দেওয়া হয়, তখন থেকেই যেন গার্মেন্টস মালিক (দর্জি মালিকরা) এটা মানতে চাইছিল না। যেকোনো প্রকারে গার্মেন্টস খুলে শ্রমিকদেরকে নিষ্পেষণ করে কিছু মুনাফা অর্জনই ছিল তাদের প্রধান লক্ষ্য। এজন্য তারা ফন্দি ফিকির করছিল যে, কীভাবে গার্মেন্টস খোলা যায়।
যদিও সরকার গার্মেন্টসগুলোর জন্য সবার আগেই ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল। সেই প্রণোদনার টাকা গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন খাতে ব্যয় করতে হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল। কিন্তু তারপরেও এই নব্য ফ্যাসিস্ট গার্মেন্টস মালিকরা শ্রমিকদের বেতন দেন নি। শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে রাস্তায় বেরিয়েছে এবং বেতনের জন্য আহজারি করেছে। তার চেয়েও ভয়ঙ্কর তথ্য হলো যে, গার্মেন্টসের এই মালিকরা ৫ এপ্রিল গার্মেন্টস খোলার এক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয়। এই আত্মঘাতী নিয়ে তারা গার্মেন্টস শ্রমিকদের ঢাকা আসার জন্য ফোন করতে থাকে। এরপর সারাদেশ থেকে গার্মেন্টস শ্রমিকরা ঢাকা আসা শুরু করে। এতে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে নিবৃত্ত হয় এই গার্মেন্টস মালিকরা এবং বিজিএমইএ এর সভাপতি সবাইকে ফিরে যাওয়ার জন্য বলেন। পুরো গার্মেন্টস খোলা এবং বন্ধ নিয়ে একটি লেজে গোবরে পরিস্থিতি তৈরি হয়। কিন্তু গার্মেন্টস মালিকদের কাছে মানুষের স্বাস্থ্য জনস্বাস্থ্য এবং মানুষের জীবন কোনো বিষয় না। এই সমস্ত গার্মেন্টস মালকরাই রানা প্লাজার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। এই গার্মেন্টস মালিকরাই অগ্নিকাণ্ড এবং শ্রমিক স্বাস্থ্যের ন্যূনতম তোয়াক্কা না করে শুধুমাত্র নিজেদের মুনাফার দিকে নজর দিয়েছে। আর তাই তারা ছলে বলে কৌশলে গার্মেন্টস চালু করার পথ খুঁজছিল। অবশেষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গার্মেন্টস চালুর প্রস্তাব দিচ্ছে তারা। জনস্বাস্থ্যের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এটাকে ভয়াবহ প্রবণতা বলে মনে করছেন। কারণ বাংলাদেশে যেসব এলাকাগুলোতে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ তার মধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর হলো শীর্ষ তিন। এই তিন এলাকাতেই বাংলাদেশের ৮০ ভাগ গার্মেন্টস অবস্থিত। এই গার্মেন্টসগুলো যদি খুলে যায়, তাহলে পরিস্থিতি কি ভয়ঙ্কর হবে তা বলাই বাহুল্য।
বাংলাদেশে কিছুদিন ঘরেই দর্জি মালিকরা তাদের ইচ্ছামতো করে সবকিছু করার চেষ্টা করছিল। তাদের স্বার্থই জনগণের স্বার্থের উপর প্রাধান্য পাচ্ছিল। করোনা সংক্রমণের সময় ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে গার্মেন্টসগুলো চালু করার মধ্য দিয়ে দর্জি মালিকদের লোভের কাছে জনস্বাস্থ্যের পরাজয় ঘটলো।