পর্যবেক্ষণের আওতায় আসছে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দেশে ইন্টারনেট সেবার বিস্তৃতি ঘটলেও এর মান নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে গ্রাহকদের। বাড়ছে নানা ধরনের ঝুঁকিও। এজন্য ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যবেক্ষণের আওতায় আনছে সরকার। এর অংশ হিসেবে সেবাদাতা সব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।
জানা গেছে, ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যবেক্ষণের অংশ হিসেবে তাদের আর্থিক ও কারিগরি সক্ষমতা যাচাই করা হবে। সেবার মান নিশ্চিত করা, প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ ও শিশুদের অনুপযোগী কনটেন্ট বন্ধের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে এর আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
জানা গেছে, বর্তমানে ছয়টি শ্রেণীতে দেয়া আইএসপি লাইসেন্সের সংখ্যা ১ হাজার ৮৮৮। অঞ্চলভিত্তিক দেয়া হয় নেশনওয়াইড, সেন্ট্রাল ও জোনাল—এ তিন ধরনের লাইসেন্স। আর সাইবার ক্যাফেগুলোকে দেয়া স্থানীয় আইএসপি লাইসেন্সের জন্যও তিনটি শ্রেণী রয়েছে—এ, বি ও সি। এর মধ্যে নেশনওয়াইড ১৩৩টি, সেন্ট্রাল ৮৬ ও জোনাল ২২৪টি লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। আর এ শ্রেণীতে ৮৪৪, বি শ্রেণীতে ১০৭ ও সি শ্রেণীতে ৪৯৪টি লাইসেন্স দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
এর আগে সাইবার অপরাধী শনাক্তকরণে দেশের সব ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতি ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি) লগ সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী, দেশের সব আইএসপি প্রতিষ্ঠানকে কমপক্ষে এক বছর আইপি লগ সংরক্ষণের বিষয়ে নির্দেশনা দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পাশাপাশি ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও ব্যবহারকারীর পরিচয় সংরক্ষণের নির্দেশনা দেয় সংস্থাটি। আইএসপি ছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেয়া বিটিআরসির এ-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এ নির্দেশনা মেনে চলতে হবে আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর। আইপি লগে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ডিভাইসের পরিচয়, সময় ও ওয়েবসাইটের ঠিকানা সংরক্ষণ করতে হবে।
২০০৮ সালে এক এমবিপিএস ব্যান্ডউইডথের মূল্য ছিল ২৭ হাজার টাকা। এটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে সর্বনিম্ন ১৮০ টাকা। ২০০৮ সালে দেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের চাহিদা ছিল সাড়ে সাত জিবিপিএস, যা চলতি বছর ১ হাজার ২৫০ জিবিপিএসে উন্নীত হয়েছে।
মূলত ব্যান্ডউইডথের মূল্য হ্রাস, ইন্টারনেট সেবার গ্রাহক বৃদ্ধি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সরকারি পর্যায়ে ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন কার্যক্রম চালুর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যান্ডউইডথের ব্যবহার বেড়েছে। এছাড়া সেলফোন অপারেটরদের থ্রিজি ও ফোরজি সেবার গ্রাহক বৃদ্ধিও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আর্থিক ও কারিগরি সক্ষমতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আইএসপি পরিচালনার বিষয়েও বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদের লগ সংরক্ষণ করতে হবে। প্যারেন্টাল গাইডেন্স ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেও তাদের তথ্য সরবরাহের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
দেশে ওয়াইম্যাক্স ও আইপি ফোনসেবা চালুর পর ইন্টারনেটভিত্তিক সেবার ক্ষেত্র বিস্তৃত হয়েছে। পাশাপাশি কমানো হয়েছে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের মূল্য। সম্প্রতি সেলফোন অপারেটরদের থ্রিজি সেবা চালুর পর এ খাতে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। তবে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সেবাদানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আইএসপি। এছাড়া দেশে ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস অ্যাকসেস (বিডব্লিউএ) লাইসেন্সের আওতায় ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে তিনটি। পাশাপাশি সেলফোন অপারেটররাও টুজি, থ্রিজি ও ফোরজি প্রযুক্তির ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে।
বিটিআরসির তথ্য অনুুযায়ী, অক্টোবর শেষে দেশে ইন্টারনেট সংযোগ সংখ্যা ৯ কোটি ৯৫ লাখ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে আইএসপি ও পাবলিক সুইচড টেলিফোন নেটওয়ার্ক (পিএসটিএন) অপারেটরদের ইন্টারনেট সেবার আওতায় সংযোগ রয়েছে ৫৭ লাখ ৩৮ হাজার। ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নেটওয়ার্কে রয়েছে ৩৮ হাজার সংযোগ। আর ছয় সেলফোন অপারেটরের ইন্টারনেট সেবার সংযোগ সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি ৩৮ লাখ।