সিটি নির্বাচনে ইভিএম, কারচুপির আশঙ্কা কতটা?
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন ৩০ জানুয়ারি। এবার পুরো ভোটই হবে ইভিএম-এ। তবে এ নিয়ে আপত্তি রয়েছে বিএনপির৷ তারা চায় সাধারণ ব্যালটেই যেন ভোট হয়।
ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ, দুই সিটিতে প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে বিএনপি। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণার বাকি৷।আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত হবে ২৮ ডিসেম্বর।
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উত্তরের মেয়র নির্বাচিত হন আনিসুল হক। তার মৃত্যুর পর চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি উত্তরের উপনির্বাচনে মেয়র হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, দুই সিটিতে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ৩১ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই হবে দুই জানুয়ারি৷ প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ জানুয়ারি। ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি হবে ভোট গ্রহণ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা জানিয়েছেন এবার দুই সিটির পুরো ভোটই হবে ইভিএম-এ৷ তিনি সব দলকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘‘সবাই ভোট কেন্দ্রে আসুন ভোট নিরপেক্ষ হবে।”
বিএনপির সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার মূল টার্গেট হলো নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সচল রাখা। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘‘ভোট ছাড়া নেতৃত্বের পরিবর্তন সম্ভব নয়৷ তাই আমরা এই প্রক্রিয়াকে সচল রাখার জন্যই সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। বাংলাদেশে ভোট এবং নির্বাচন দুটোই কলঙ্কিত৷ ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের নামে কী হয়েছে তা শুধু দেশের মানুষ নয়, বিশ্ববাসী জানে। কিন্তু আমরা চাই বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা ফিরে আসুক৷ সেজন্যই এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি৷ কতটা সফল হবো জানি না। তবে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা আশা করছি।”
তিনি ইভিএম নিয়ে বিএনপির আপত্তির কথাও জানান। বলেন, ‘‘ইভিএম নিয়ে আমাদের অবস্থানের কথা আমরা আগেই জানিয়েছি। যে দেশগুলোতে ইভিএম আবিষ্কৃত হয়েছে, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার অধিকাংশ দেশই ইভিএম বর্জন করেছে। ইভিএম-এ কিভাবে ভোট জালিয়াতি হয় তা আমাদের এখানকার বিশেষজ্ঞরা অনেকেই হাতে কলমে দেখিয়েছেন। সরকার বাদে আর কেউ ইভিএমকে গ্রহণ করছে না। তাই ভালো নির্বাচন করতে হলে ইভিএম-এর চিন্তা কমিশনকে বাদ দিতে হবে। ইভিএম দিয়ে নতুন করে জালিয়াতির চেষ্টা করা ঠিক হবে না।”
তবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন ইভিএম-এ কারচুপি বা জালিয়াতির আশঙ্কা কম। তিনি বলেন, ‘‘ইভিএম-এ জালিয়াতি হতে পারে যদি বুথ ক্যাপচার হয়। বুথ ক্যাপচার না হলে যদি ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে তাহলে সাধারণ ব্যালট পেপারের তুলনায় ইভিএম-এ জালিয়াতির আশঙ্কা কম৷ তবে এই নিশ্চয়তা দেয়ার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।”
তিনি বলেন, ‘‘৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ব্যালট পেপারে ভোট হয়েছে এবং আগের রাতে ব্যালট পেপার ঢুকানো হয়েছে। কিন্তু ইভিএম-এ এটা করতে হলে আগের রাতে ভোটারদের আনতে হবে। কারণ ভোটার আইডেন্টিফাই না হলে ইভিএম ওপেন হওয়ার কথা নয়। এখানে আঙ্গুলের ছাপ, ভোটার আইডি কার্ডের বিষয় আছে। আর ওপেন করতে পারেন শুধুমাত্র প্রিসাইডিং অফিসার এবং সহকারি প্রিসাইডিং অফিসার৷ এখন রক্ষক যদি ভক্ষক হয় তাহলে সেটা একটা সমস্য।৷”
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ মনে করেন ইভিএম নিয়ে একটা ভুল বোঝাবুঝি আছে। তিনি বলেন, ‘‘তারা (বিএনপি) যেসব তথ্য উপাত্ত হাজির করছে সেটা ই-ভোটিং সংক্রান্ত৷ ইভিএম ই-ভোটিং এর চেয়ে আলাদা। আমাদের এখানে যে ইভিএম মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো পরীক্ষিত৷ এটা সব দিক দিয়ে সাশ্রয়ী। ফল প্রকাশও করা যায় দ্রুততম সময়ে।”
উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মোট ওয়ার্ড রয়েছে ৫৪ টি আর ভোটার ৩০ লাখ ৩৫ হাজার। অন্যদিকে দক্ষিণের ৭৫টি ওয়ার্ডে ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ভোটার।