আইন-আদালতআলোচিত

অ্যাপসেই মিলবে সুপ্রিমকোর্টে বিচারাধীন মামলার তথ্য

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দেশের বিচার ব্যবস্থা ডিজিটাল করার অংশ হিসেবে উদ্বোধন করা হয়েছে ‘সুপ্রিমকোর্ট অব বাংলাদেশ কজ লিস্ট’ অ্যাপস।

সোমবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে ভার্চুয়াল মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের মামলার দৈনন্দিন কার্যতালিকা ও ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে জানার জন্য নির্মিত সুপ্রিমকোর্ট অব বাংলাদেশ কজ লিস্ট অ্যাপসটির উদ্বোধন করা হলো।’

তিনি বলেন, ‘এই অ্যাপসটি ব্যবহার করে মাননীয় বিচারপতিগণ, বিজ্ঞ আইনজীবীগণ, আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ সাধারণ ব্যবহারকারিগণ, সর্বপরি বিচারপ্রর্থী জনগণ সহজে অনলাইনে সুপ্রিমকোর্টের কার‌্য তালিকা ও মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবেন।’

সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘অ্যাপসটি বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের তথ্য প্রযুক্তি শাখা ও অধস্তন আদালতের বিচারক মইন উদ্দিন কাদি নির্মাণ করেছেন। বিচারপ্রার্থী জনগণের বিচারে প্রবেশাধিকারসহ ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা ও বিচার প্রক্রিয়ায় সর্বস্তরে স্বচ্ছতা আনায়ন করার জন্য সুপ্রিমকোর্ট বদ্ধপরিকর।’

তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লবের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে হলে ডিজিটাল প্রযুক্তির দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভিশন ২০২১ সালের অন্যতম প্রধান অংশ, ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার রক্ষার পাশাপাশি মানুষের দৌড় গোড়ায় সেবা পৌছে দিয়ে জীবন ধারার মান উন্নত করা।’

এছাড়া তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিচারপ্রার্থী জনগণের দোরগোড়ায় তথ্য এবং সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্ট অনেক দূর এগিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে আপিল বিভাগে দুটি বেঞ্চ, চেম্বার আদালত এবং হাইকোর্ট বিভাগের ১৯টি দ্বৈত বেঞ্চ এবং ১৪টি একক বেঞ্চ ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বিচার কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। কিশোরগঞ্জের নদী হাওর অঞ্চল এবং বিদেশে অবস্থান করেও বিজ্ঞ আইনজীবীগণ ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শুনানিতে অংশ গ্রহণ করছেন।’

প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, ‘এই অ্যাপসটি হবে বিচারপ্রার্থী সাধারণ জনগণ ঢাকায় না এসে তার মামলা সার্চ করে মামলার হালনাগাদ এবং ফলাফলসহ সর্বশেষ তথ্যাদি তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পারবেন। এতে সুপ্রিমকোর্টে বিচার কাজ আরও স্বচ্ছ ও গতিশীল হবে। আমি গত কয়েক দিন পরীক্ষামূলকভাবে এই অ্যাপসটি ব্যবহার করেছি। এটি মোবাইল ফোনে ব্যবহারের জন্য উপযোগী একটি অ্যাপস।’

তিনি বলেন, ‘বিটিআরসির তথ্য অনুসারে ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৬৭ মিলিয়ন। এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারির সংখ্যা ১০৮ মিলিয়ন। সুতরাং আমি দৃঢ়ভাব বিশ্বাস করি বিজ্ঞ আিইনজীবীগণ তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অতি সহজে অ্যাপসটি ব্যবহার করতে পারবেন।’

সুপ্রিমকোর্টের কাগজে ছাপানো দৈনন্দিন কার্য তালিকার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করার জন্য এই অ্যাপসটি ব্যবহার করা সহজ হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে লেজ পেপার বা খুব কম কাগজ ব্যবহার করে বিচারিক কার‌্যক্রম পরিচালনা করতে পারি। সব সময় সেই চেষ্টা করতে হবে। একটি আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর বিচার বিভাগের অগ্রযাত্রায় এটি একটি নতুন সংযোগজন। বিচার সংশ্লিষ্ট সবাই এই অ্যাপসটি ব্যবহার করে সকলে উপকৃত হবেন।’

একই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘এই অ্যাপস যিনি তৈরি করেছেন তাকে ধন্যবাদ জানাই। সম্পূর্ণ বাংলদেশি প্রযুক্তি ভর করে এটা তৈরি করেছেন। এটা আমাদের এক বিরাট সাফল্য। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার সরকার গঠন করার পরে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের দ্বার উন্মোচন করেন। তার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে আজ ডিজিটাইলেজশনের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আজকের এই আয়োজন প্রমাণ করে বিচার বিভাগও পিছিয়ে নাই। বিচার বিভাগের এই মহতী উদ্যোগ এবং জনগণের কাছে এই বিচার এবং বিচার ব্যবস্থার তথ্য পৌছে দেওয়ার যে প্রচেষ্টা হিসেবে আজকে যে অ্যাপস উদ্বোধন করা হলো সেটা একটা বিরল দৃষ্টান্ত। এবং এর সাফল্য বিচার বিভাগের সাফল্যকে ত্বরান্বিত করবে।’

নবনিযুক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আজকে সুপ্রিমকোর্টের একটি বিশেষ দিন। ডিজিটাল বাংলাদেশে আমরা আরও একধাপ এগিয়ে গেলাম। এই অ্যাপসটি ব্যবহার করে বিচার প্রার্থী জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ হলো। সাধারণ মানুষ তাদের মামলা সংক্রান্ত যে কোন তথ্য এখান থেকে পাবেন।’

রেজিস্ট্রার জেনারেল আলী আকবরের সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানে সুপ্রিমকোর্টে উভয় বিভাগের বিচারপতিবৃন্দ, আইনজীবী সমিতির সম্পাদকসহ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button