গাজীপুর

কাপাসিয়ায় পুলিশের দেয়া ক্লিয়ারেন্স পেয়ে ‘চার্জশিটভুক্ত আসামি’ এখন কুয়েতে!

নিজস্ব সংবাদদাতা : কাপাসিয়া থানার একটি মাদক মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি মোখলেছ মিয়া (২৫)। সম্প্রতি সে পুলিশের দেয়া পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিয়ে এলাকা থেকে পালিয়ে কুয়েত চলে গেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও পুলিশের দাবি মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পরেই তাকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আদালতে মামলা এখনো চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।

পলাতক মোখলেছ মিয়া কাপাসিয়ার শহর টোক গ্রামের মৃত তাইজ উদ্দিনের ছেলে। সে পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী।

জানা গেছে, চাকরি কিংবা উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদেশ ভ্রমণের জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়। দেশের একজন সুনাগরিক কিংবা কোনো ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত নন তার প্রমাণই হচ্ছে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট। আবেদনকারীর বিরুদ্ধে থানায় কোনো ফৌজদারি মামলা থাকলে তাকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট দেয়ার কোন সুযোগ নেই।

আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্র।

মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় কাপাসিয়ার সুলতানপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোখলেছ মিয়াসহ দুইজনকে  ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে কাপাসিয়া থানার তৎকালীন এএসআই মাসুদ রানা। পরবর্তীতে এএসআই মাসুদ রানা বাদী হয়ে মোখলেছ মিয়ার কাছ থেকে ১২ পিস ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেন {মামলা নম্বর ২২(১০)১৯}। মামলায় আরো দু’জনকে আসামি করা হয়। এর দুই মাস পর কাপাসিয়া থানার এসআই সিদ্দিকুর রহমান মামলাটি তদন্ত শেষ করে ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর মোখলেছ মিয়াসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন {অভিযোগপত্র নং ৪৮৪/১৭-১২-১৯}। বর্তমানে মামলাটি গাজীপুরের ২য় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অভিযোগ গঠনের (চার্জ গঠন) জন্য ধার্য আছে।

অপরদিকে, চলতি বছরের ১১ মে কাপাসিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এস এম আজিজুর রহমান {বিপি-৬৬৮৪০৪২৯২৯} মাদক মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি মোখলেছ মিয়ার নামে একটি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স (ছাড়পত্র) ইস্যু করেছেন। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স রেফারেন্স নাম্বার 15N8E98 পাসপোর্ট নাম্বার A04792148।

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পর মোখলেছ মিয়া ‘এম এম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ (আর এল ২৪৪১) নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কুয়েতের মোহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ নামে এক নিয়োগকর্তার কোম্পানি থেকে ওয়ার্কার ভিসা ইস্যু করতে সক্ষম হয় (ভিসা নম্বর ২৫০৯৪১৩৯২)। এরপর গত ২৬ জুন জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে কুয়েতে পালিয়ে যায়।

বিএমইটির বহির্গমন ছাড়পত্র এবং মামলার এফআইআর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য কেউ আবেদন করলে প্রথমে ওই ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহের জন্য সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ সরেজমিন পরিদর্শন করে তদন্ত করেন। পরবর্তীতে তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ইস্যু করা হয়। এ ক্ষেত্রে মামলা সংক্রান্ত তথ্যের জন্য পুলিশের কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ-এ থাকা তথ্য ভান্ডার থেকে যাচাই করা হয়ে থাকে। এর জন্য ক্লিনিকাল ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিডিএমএস)-এর সহায়তায় নিয়ে থাকে পুলিশ। মোখলেছ মিয়ার মামলা সংক্রান্ত তথ্য সিডিএমএসে সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও কি করে তার নামে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ইস্যু করা হয়েছে তা তদন্ত কর্মকর্তা ভালো বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ইস্যু করা পুলিশ কর্মকর্তা কাপাসিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এস এম আজিজুর রহমান বলেন, মোখলেছ মিয়া মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছে। তাই তার নামে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ইস্যু করা হয়েছে। এতে আইনের কোন ব্যত্যয় হয়নি।

পরবর্তীতে আদালতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোখলেছ মিয়ার নামে থাকা মামলাটি বর্তমানে গাজীপুরের ২য় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অভিযোগ গঠনের (চার্জ গঠন) জন্য অপেক্ষামান রয়েছে।

 

আরো জানতে…

পরিচয়-বয়স গোপন করে ছাত্রলীগ নেতার পুলিশে চাকরী!

পলাতক আসামীর সঙ্গে থানায় ওসি’র মিটিং!

এমপি-পুত্র হত্যায় জালিয়াতির অভিযোগ কালীগঞ্জের ওসি এবং তদন্ত কর্মকর্তা’র বিরুদ্ধে!

এবার ‘দারোগার কুকির্তী সাংবাদিক ডেকে প্রকাশ’ করলো ওসি!

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button