এবার ‘দারোগার কুকির্তী সাংবাদিক ডেকে প্রকাশ’ করলো ওসি!
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ওসি’র নির্দেশে মাদক কারবারিকে ছেড়ে দিয়ে রিকসা চালকের নামে মাদকের মামলা দিল এসআই আব্দুর রহমান! এই শিরোনামে বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশের জেরে মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয় সাংবাদিকদের থানায় ডেকে নিয়ে ঘটনার বিস্তারিত প্রকাশ করে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ।
এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে ওই সময় সাংবাদিকদের কাছে সরবরাহকৃত মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করলে বেরিয়ে আসে দারোগার আরেক কুকির্তী। যা সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত এবং বেআইনি।
এক স্থান থেকে আসামি আটক করে তা পরিবর্তন করে অন্য স্থান থেকে আটক দেখিয়ে ৩৪ ধারায় আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে আবারও আলোচনায় এবার এসআই আব্দুর রহমান।
আর এ তথ্য প্রকাশ পায় সাংবাদিকদের থানায় ডেকে নিয়ে ওসি’র দেওয়া বক্তব্য থেকে।
সাংবাদিকদের থানায় ডেকে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবু বকর বলেন, বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। প্রকৃত ঘটনাটি হলো রিকশা চালক কাউছার আসল ইয়াবা বিক্রেতা। সে রিকশা চালায় আর মাদক বিক্রি করে থাকে। রাসেলের কাছে কোনো ইয়াবা না পাওয়ায় তাকে ৩৪ ধারায় আটক দেখিয়ে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়। পরে ওই দিনই রাসেল আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পায়।
ওসি সাংবাদিকদের আরো জানান, জামালপুরের সিদ্দিক চৌকিদার থানাকে অবগত করলে উপপরিদর্শক আব্দুর রহমানকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হলে এসআই আব্দুর রহমান ৫০ পিস ইয়াবাসহ কাউছারকে আটক করে এবং রাসেলকে তার বাড়ি (উপজেলার কাপাইশ গ্রাম) থেকে আটক করে থানায় থানায় নিয়ে আসে। ৬ পিস ইয়াবা নষ্ট হওয়ায় ৪৪ পিস ইয়াবা দিয়ে কাউছারের নামে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার বাদী উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহমান এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবুল হাশেম।
নথিপত্র পর্যালোচনা করে জানা যায়, মামলার এজাহার এবং জব্দ তালিকা সাক্ষী করা হয়েছে তিন জনকে।
তারা হলেন: ছৈলাদী গ্রামের তমিজ উদ্দিন শেখের ছেলে বোরহান (৩২), কলাপটুয়া গ্রামের মৃত রমিজ উদ্দিনের ছেলে আজিম উদ্দিন(৫৫) এবং মো: পায়েল নামে পুলিশের এক কনস্টেবলকে।
থানা থেকে সাংবাদিকদের কাছে সরবরাহকৃত ৩৪ ধারায় আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, সঙ্গীয় ফোর্স সহ সূত্রে বর্ণিত জিডি মূলে থানা এলাকায় মাদকদ্রব্য উদ্ধার এবং গ্রেফতারি পরোয়ানা বিশেষ অভিযান ডিউটি করা কালে ২২-০৬-১৯ তারিখ রাত পৌনে দুইটার সময় ‘কালীগঞ্জ থানাধীন (কালীগঞ্জ পৌরসভাধীন) দুর্বাটি এলাকায়’ পাকা রাস্তার উপর বিবাদী রাসেল দর্জি হৈচৈ চিৎকার চেঁচামেচি করে পৌরসভা এলাকার শান্তিপ্রিয় লোকজনের শান্তি ভঙ্গ করে এবং রাস্তায় চলাচলরত গাড়ি চলায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় তাকে পুলিশ আইনের ৩৪ ধারায় গ্রেফতারপূর্বক হেফাজতে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সে তার নাম ঠিকানা প্রকাশ করে। বিবাদীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য আদালতে বিচারের প্রার্থনা জানাইয়া পুলিশ আইনের ৩৪ ধারা আদালতে দাখিল করা হলো।
দাখিলকারী হিসেবে শুধু স্বাক্ষর রয়েছে (এসআই) আব্দুর রহমানের। ওসির বা অগ্রগামী কর্মকর্তার কোন স্বাক্ষর নেই।
অপরদিকে মামলার সাক্ষী বোরহান বলেন, উপজেলার কাপাইশ গ্রামে রাসেলের বাড়ি থেকে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় এসআই আব্দুর রহমান। সাক্ষী আজিম উদ্দিনও একই কথা বলেন।
অপর সাক্ষী পুলিশ কনস্টেবল পায়েলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগে সে জানায়, বাড়ি থেকে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় এসআই আব্দুর রহমান।
জামালপুরের সিদ্দিক চৌকিদারও বলেন রাসেলকে তার বাড়ি থেকে আটক করে থানায় নেয় পুলিশ এবং দুজনকেই মামলা দেওয়া হয়েছে বলে তাকে পুলিশ জানিয়েছে বলে জানান সিদ্দিক।
জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এবং রাসেলের কর্মস্থল কাপাইশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি সালাউদ্দিন বলেন, রাসেলকে তার বাড়ি থেকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় এসআই আব্দুর রহমান। এর আগেও একাধিকবার মাদকসহ আটক হয়েছিল রাসেল। সে এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি।
এবিষয়ে এসআই আব্দুর রহমান বলেন, ‘রাসেলকে তার বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছে। এরপর যা হয়েছে তা সবই ওসি’র নির্দেশে করেছি’। এর বেশি আরো জানতে হলে ওসি’র সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো. আবুবকর মিয়াকে তার ব্যবহৃত সরকারি মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ওসি’র দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজ এবং সরবরাহকৃত মামলার নথিপত্র আমাদের সংরক্ষণের রয়েছে।
আরো জানতে…..
ওসি’র নির্দেশে মাদক কারবারিকে ছেড়ে দিয়ে রিকসা চালকের নামে মাদকের মামলা দিল এসআই আব্দুর রহমান!
পলাতক আসামীর সঙ্গে থানায় ওসি’র মিটিং!
এমপি-পুত্র হত্যায় জালিয়াতির অভিযোগ কালীগঞ্জের ওসি এবং তদন্ত কর্মকর্তা’র বিরুদ্ধে!