কালীগঞ্জে মসজিদ-মন্দির, পার্ক-নদী, হালট ও আ.লীগ নেতার জমি দখলে আবুল খায়ের গ্রুপ!
বিশেষ প্রতিনিধি : কালীগঞ্জে মসজিদ, মন্দির, শীতলক্ষ্যা নদী, সরকারি হালট, পার্ক নির্মাণের নির্ধারিত সরকারি জমি এবং স্থানীয় একাধিক কৃষকের জমি অবৈধভাবে দখল নেয়ার পর এবার আওয়ামী লীগ নেতার জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে আবুল খায়ের গ্রুপের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় কালীগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আমজাদ হোসেন বাদী হয়ে সম্প্রতি আবুল খায়ের গ্রুপের ডিএমডি ও জিএমের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে (জিডি নাম্বার ৮২৩/১৯-৫-২২)।
এরপরও জমি দখল রোধে কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
তবে পুলিশ বলছে আদালতের নির্দেশ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাদী আমজাদ হোসেন স্বপন (৪৫) কালীগঞ্জ পৌরসভার দেওপাড়া এলাকার মৃত সাহেব আলীর ছেলে। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
অভিযুক্তরা হলো: আবুল খায়ের গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবু সাঈদ চৌধুরী বাবুল (৫৫)। তিনি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মৃত আবুল খায়েরের ছেলে। এছাড়া অভিযুক্ত অপর ব্যাক্তি হলেন আবুল খায়ের গ্রুপের আবুল খায়ের সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কালীগঞ্জ শাখার উপ-ব্যবস্থাপক ও ইনচার্জ মর্তুজা মাহফুজ (৩৮)। তিনি চুয়াডাঙ্গা সদরের সিনেমা হল পাড়া এলাকার মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে। এছাড়াও অজ্ঞাত আরও ২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
বাদী জিডিতে উল্লেখ করেছেন, “অভিযুক্তদের সাথে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ চলমান। এর জের ধরে গত ৪ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে অভিযুক্তরা বাদীর খরিদ সূত্রে বালু ভরাট করা ভোগদখলীয় বালীগাঁও মৌজার আরএস ৪ নং খতিয়ানভুক্ত ৯৮৪, ১০৫৩, ৯৮১, ৯৯৬, ১০৫৫ ও ২১৪৭ নং দাগে থাকা ২ একর ৩১.৯৩ শতাংশ জমিসহ আরো ৪০ বিঘা জমিতে থাকা ইট, বালুসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
সে সময় বাদী এর প্রতিবাদ করলে বাদীকে তার পরিবারসহ হত্যার হুমকি দেয় অভিযুক্তরা। এছাড়াও অভিযুক্তরা জোড়পূর্বক বাদীর জমি যে কোন উপায়ে অবৈধভাবে দখল করবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়।”
থানা ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ‘সাধারণ ডায়েরি তদন্তের জন্য আদালতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হলেও পরবর্তীতে তা আর আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি।
বাদী আমজাদ হোসেন স্বপন বলেন, ঘটনার পর গত ১৯ মে ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করে কালীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। পরে গত ২১ মে কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউর রহমান খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু এরপর জমি উদ্ধারে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ।
জিডি তদন্তের দায়িত্বে থাকা কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউর রহমান খান বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এছাড়াও যত জমি দখলে নিয়েছে আবুল খায়ের গ্রুপ:
মন্দিরের পুকুর দখল করে বালু ভরাট: বালীগাঁও জয়দেববাড়ী সর্বজনীন দূর্গা মন্দিরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী একটি পুকুর রয়েছে। ওই পুকুরে সব রকমের পূজা-পাবনার ক্রিয়াদি সম্পূর্ণ করা হয়। এছাড়াও পুকুরে দেবদেবী ও মূর্তি বিসর্জন দেয়া হয়। ওই পুকুরে আবুল খায়ের গ্রুপ জোরপূর্বক পাইপলাইন স্থাপন করে বালু ভরাট করে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে গত ১৯ মে বালীগাঁও জয়দেববাড়ী সর্বজনীন দূর্গা পূজা কমিটির সভাপতি সুকোমল চন্দ্র দাস স্থানীয়দের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
জয়দেববাড়ী সর্বজনীন দূর্গা পূজা কমিটির সভাপতি সুকোমল চন্দ্র দাস বলেন, অভিযোগ দায়ের করার পর বিষয়টি সমঝোতা হয়ে গেছে। তবে কি শর্তে সমঝোতা হয়েছে তা জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তিনি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হিন্দু সম্প্রদায়ের স্থানীয় কয়েকজন বলেন, পুকুরে আবুল খায়ের গ্রুপ জোরপূর্বক পাইপলাইন স্থাপন করে বালু ভরাট করায় জয়দেববাড়ী সর্বজনীন দূর্গা পূজা কমিটির সভাপতি সুকোমল চন্দ্র দাস অভিযোগ দায়ের করা পর তাকে কোম্পানির লোকজন ভয়-ভীতি দেখিয়েছে।
মসজিদের জমি দখল: বালীগাঁও মৌজায় বালীগাঁও কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের নামে রেকর্ডভুক্ত আরএস ৪৮৫ খতিয়ানে ২০৮৮ ও ২১১৫ দাগে মোট ১৭ শতাংশ জমি দখলে নিয়ে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করেছে আবুল খায়ের গ্রুপ। এ বিষয়ে একাধিকবার দরবার-সালিশ করেও ওই জমি উদ্ধার করতে পারেনি মসজিদের মুসল্লিরা।
মসজিদের কয়েকজন মুসল্লি বলেন, মসজিদের ওই জমি উদ্ধারে একাধিকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে মুসল্লিরা। জমি উদ্ধারে মসজিদ কমিটির কোন তৎপরতা নেই। বরং উল্টো মসজিদ কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক কোম্পানির সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে বালীগাঁও কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সভিপতি আফসার উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের মোবাইল নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।
স্থানীয়দের জমি দখলের অভিযোগ
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বলেন, একাধিক ব্যক্তির জমি জোরপূর্বক দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ এবং বালু ভরাট করে দখলে নিয়েছে আবুল খায়ের গ্রুপ। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হামলা এবং থানা পুলিশের মাধ্যমে মামলা দিয়ে হয়রানি করে আবুল খায়ের গ্রুপ। তাই ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
জানা গেছে, স্থানীয় মুঃ মাসুদ উল আলম ও সেলিম হোসেনের পৈত্রিক সম্পত্তি জোর পূর্বক দখল করেছে আবুল খায়ের গ্রুপ। ওই জমি উদ্ধারে ২০১৩ সালের ২৯ জুন স্থানীয় সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকির (এমপি) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন মুঃ মাসুদ উল আলম ও সেলিম হোসেন। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) নির্দেশ দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য।
কিন্তু কোন প্রতিকার না পেয়ে ২০১৪ সালে গাজীপুর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে (২) দেওয়ানী মামলা করেন ভুক্তভোগীরা {মামলা নাম্বার ২১৪/১৪}।
মুঃ মাসুদ উল আলম বলেন, ওয়ারিশ সূত্রে মালিক হয়ে বালীগাঁও মৌজার আরএস ৭২৩ খতিয়ানে ২২০০ এবং ২২০১ দাগে যথাক্রমে ৩২.৫ শতাংশ ও ৪.৫ শতাংশ জমি আমাদের ভোগ-দখলে থাকা অবস্থায় জোরপূর্বক দখলে নেয় আবুল খায়ের গ্রুপ। পরবর্তীতে স্থানীয় সংসদ সদস্য কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি। এরপর ২০১৪ সালে গাজীপুর আদালতে মামলা দায়ের করেছি। মামলার কার্যক্রম বর্তমানে চলমান রয়েছে।
স্থানীয় ভূমি অফিস ও ভূমি সংশ্লিষ্ট নথিপত্র পর্যালোচনা করে জানা যায়, ‘কালীগঞ্জ পৌরসভার বালিগাঁও মৌজায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী এলাকায় অনুমানিক প্রায ৮০ একর ‘ফসলি’ জমিতে গড়ে উঠেছে আবুল খায়ের গ্রুপ লিমিটেড এর কয়েকটি ফ্যাক্টরি। এর মধ্যে রয়েছে ১ নং খতিয়ানভুক্ত আর এস ২০৮৭ নং দাগে ৪৫ শতাংশের একটি হালটসহ প্রায় ৩ একর সিকস্তি ভূমি যা ‘সম্পূর্ণ সরকারি সম্পত্তি’ তাদের দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে আবুল খায়ের গ্রুপ। এছাড়াও প্রায় আরো ১ একর নদী দখল করে বরাট করেছে কোম্পানিটি। কিন্তু কোম্পানির নামে মাত্র ৬ একর ১৪.৪ শতাংশ জমি নামজারি করে অফিসিয়াল সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছে আবুল খায়ের গ্রুপ।’
‘সরকারকে রাজস্ব বঞ্চিত করার উদ্দেশেই কোম্পানিটি সকল জমি নামজারি করছে না। এছাড়াও সকল জমি কোম্পানিটির নিজস্ব না হওয়ায় এবং ফসলি, সরকারি ও নদীর জমি থাকায় নামজারি করাও আইন অনুযায়ী বৈধ নয় বলে জানান ভূমি সংশ্লিষ্টরা’।
সরকারি হালট দখল: ২০১৫ সালের ২৩ জুন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবং জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে জনসাধারনের ব্যবহৃত সরকারি হালট (রাস্তা) উদ্ধারে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিল স্থানীয়রা।
অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, আমরা বালীগাঁও গ্রামের মধ্যপাড়ার অধিবাসী। এই এলাকার জনসংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। আর এই গ্রামটি একটি কৃষি নির্ভরশীল গ্রাম এবং এই কৃষিকে আরও বেশি উর্বরশীল করে তুলেছে এই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্যা নদী, যার সাথে গ্রামের প্রত্যেকটি লোক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেমন কৃষক নদীর পানি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করে এবং এর কিছুটা অংশে জেলে সমাজের বাস। তারা এই নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। গ্রামের লোক স্বভাবতই নদীতে গোসল করে অব্যস্ত, এমনকি গাঁয়ের প্রত্যেকটি গবাদী পশুকে নদীতে গোসল করানো হয়ে থাকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল এই যে, আমাদের পূর্ব পুরুষেরা বিগত দুইশত বৎসর যাবৎ যে সরকারি রাস্তাটি নদীতে আসা যাওয়ার জন্য ব্যবহার করে আসছিল (যা বালিগাঁও মৌজায় ১ নং খতিয়ানভুক্ত আরএস ২০৮৭ নং দাগ ৪৫ শতাংশ জমি রয়েছে, এর প্রশস্ত ১৮ ফুট, লম্বা ৯০০ ফুট প্রায়)। এই রাস্তাটি প্রভাবশালী ভূমি দস্যু কোম্পানী নামে খ্যাত আবুল খায়ের লিঃ দখল করে একটি কারখানা তৈরী করেছে। এর কারণে গ্রামের মানুষ সাংঘাতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যার প্রভাব গ্রামের কৃষির উপর পড়ছে।
অভিযোগে আরো উল্লেখ আছে, গ্রামবাসীর পূর্ব পুরুষদের দুইশত বৎসর যাবৎ ব্যবহৃত সরকারি ওই রাস্তাটি উদ্ধারে ব্যবস্থা নেয়ার কথা।
জানা গেছে, বালীগাঁও মৌজায় ১ নং খতিয়ানভুক্ত আরএস ২০৮৭ নং দাগ ৪৫ শতাংশ জমিতে সরকারি হালট রয়েছে। যা দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধভাবে দখল করে হালটের প্রবেশদ্বারে লোহার এঙ্গেল ও টিন দিয়ে শেড নির্মাণ করে আবুল খায়ের গ্রুপ। পরে ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় যৌথভাবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শিবলী সাদিক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহিনা আক্তার। অভিযানে আবুল খায়ের গ্রুপের নির্মিত স্থাপনা ভেঙ্গে দেয়া হয় এবং তাদের উচ্ছেদ করে সরকারি হালট দখলমুক্ত করা হয়। কিন্তু এর কিছুদিন না যেতেই পূণরায় পুরো হলট দখলে করে স্থাপনা নির্মাণ করে আবার দখলে নিয়েছে আবুল খায়ের গ্রুপ।
হালট হলো, জমির মধ্যবর্তী চওড়া আইল বা পথ, যার উপর দিয়ে চাষী হাল বলদ নিয়ে চলাফেরা করে।
‘ইকো পার্কের’ নির্ধারিত সরকারি জমি অবৈধ দখল:
সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, অবৈধভাবে ‘আবুল খায়ের গ্রুপের’ দখলে থাকা কালীগঞ্জ পৌরসভার দড়িসোম মৌজার ১ নং খতিয়ান ভুক্ত আরএস ৪৭ দাগের ১ একর ৭৩ শতাংশ (প্রায় সাড়ে ৫ বিঘা) সরকারি জমিতে ২০১৯ সালের ২ জুলাই (মঙ্গলবার) দুপুরে উচ্ছেদ অভিযান পরিচলনা করে অবৈধ দখলদার মুক্ত করেন তৎকালীন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. শিবলী সাদিক। পরবর্তীতে ওই জমিতে লাল নিশানা টানিয়ে সরকারি দখল নিশ্চিত করা হয়। পরে ৮ জুলাই (সোমবার) শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী সরকারি ওই জমি পরিদর্শন করে তাতে ইকো পার্ক নির্মাণের ঘোষণা দেন গাজীপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক এস. এম. তরিকুল ইসলাম। পরে ওই জমি থেকে গাছপালা ও আগাছা কেটে পরিষ্কার করা হয়’।
সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ‘কালীগঞ্জ খেয়া ঘাট সংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ‘ইকো পার্ক’ নির্মাণের ঘোষণা দেয়ার কিছুদিন না যেতেই সেই জমি আবারও দখলে নেয় ‘আবুল খায়ের গ্রুপ’। বর্তমানে ওই জমিতে গাছপালা ও আগাছা জন্মে জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। পার্কের জন্য নির্ধারিত জমির একদিকে ইট দিয়ে স্থায়ীভাবে এবং দু’দিকে টিনের শেড দিয়ে প্রাচীর নির্মাণ করে দখলে রেখেছে আবুল খায়ের গ্রুপ। এছাড়াও প্রাচীরের ভেতরে টিন দিয়ে ছোট একটি ঘর তৈরি করা হয়েছে। অবৈধভাবে দখলে নেয়া ১ একর ৭৩ শতাংশ (প্রায় সাড়ে ৫ বিঘা) সরকারি জমি ওই ঘরে বসেই পালাক্রমে পাহারা দেয় আবুল খায়ের গ্রুপে নিযুক্ত আনসার সদস্যরা।
স্থানীয়রা জানায়, ‘এক সময় এ জমি কৃষি কাজে ব্যবহৃত হতো। ওই জমি অবৈধভাবে দখলে নিয়ে নদীর কিছু অংশসহ বরাট করে ফেলেছে আবুল খায়ের গ্রুপ’।
কালীগঞ্জ পৌর ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, দড়িসোম মৌজার ১ নং খতিয়ান ভুক্ত সরকারি জমি বরাদ্দ নিতে আবুল খায়ের গ্রুপ আবেদন করেছে বলে শুনেছি। তবে কোন নথিপত্র আমি পাইনি। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলতে পারবেন। আর বালীগাঁও মৌজার সরকারি হালট দখলের বিষয়ে কোন তথ্য জানা নেই। খোঁজ নিয়ে পরে জানাবো।
কালীগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহিনা আক্তার বলেন, ‘সরকারি জমি দখলমুক্ত করতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয়। সম্প্রতি ডিসি স্যার বালীগাঁও মৌজার সরকারি হালট সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। পরবর্তী নির্দেশনা আনুযায়ী সকল সরকারি জমি দখলমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সার্বিক বিষয়ে আবুল খায়ের গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবু সাঈদ চৌধুরী বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য : ‘কালীগঞ্জ পৌরসভার বালিগাঁও মৌজায় থাকা শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী (ফোরশোর) জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করার অভিযোগে ২০২০ সালের ২১ আগস্ট (শনিবার) মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ‘পরিবেশ সংরক্ষণ আইন’ অনুযায়ী আবুল খায়ের গ্রুপকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৌধুরী মুস্তাফিজুর রহমান। এছাড়াও অবৈধভাবে নির্মিত ওই স্থাপনা অভিযানের দিন থেকে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে অপসারণ করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কাছ থেকে ‘কোনো খাস জমি দখলে নেই’ এই মর্মে প্রত্যয়নপত্র গ্রহণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়’।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি ‘নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে শীতলক্ষ্যা নদীর কালীগঞ্জ অংশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে নদীর জমিতে স্থাপিত আবুল খায়ের গ্রুপের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করছিল বিআইডব্লিউটিএ’।
এছাড়াও ‘২০১৮ সালের ৩ মার্চে দিনে দুপুরে অবৈধ গজারী গাছের পাইলিং দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদী দখলের অভিযোগ উঠেছিল আবুল খায়ের গ্রুপের বিরুদ্ধে। এরপর ওইদিনই সরকারি সম্পদ দখল ও অপব্যবহারের অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিকভাবে তাদের কাজ বন্ধ করেছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলার তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোহাগ হোসেন’।
এ সংক্রান্ত আরো জানতে…….
অবৈধভাবে জমি দখল করতে গ্রামবাসীর উপর আবুল খায়ের গ্রুপের হামলা, আহত ৪০ (ভিডিও সহ)
কালীগঞ্জে ‘ইকো পার্কের’ নির্ধারিত সরকারি জমি অবৈধ দখলে, পাহারায় আনসার নিযুক্ত!
শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী জমি দখল: ‘আবুল খায়ের গ্রুপ’কে ২ লাখ টাকা জরিমানা
দিনে দুপুরে নদী দখলের অভিযোগ ‘আবুল খায়ের গ্রুপ’র বিরুদ্ধে
কালীগঞ্জে চার কোম্পানির দখলে ‘শীতলক্ষ্যার ১৫ একর জমি’, উদ্ধারের দায়িত্ব নিচ্ছে না কেউ!
কালীগঞ্জে আবুল খায়ের গ্রুপের দখলে থাকা ‘সরকারি হালট’ দখলমুক্ত করেছে প্রশাসন
সেভেন রিংস সিমেন্ট ফ্যাক্টরি ফসলি জমিতে, নদীর পাড় দখল করে সম্প্রসারণ
কালীগঞ্জে শীতলক্ষ্যার ৩ একর জমি ভরসা গ্রুপের দখলে