আলোচিত

কে উপাচার্য কে দলীয় নেতা?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) নিয়োগ হয় রাজনৈতিকভাবে। আর গত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যেহেতু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় তাই ভিসিরাও আওয়ামী লীগের।

তারা অনেক সময় আওয়ামী লীগের চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার৷আর এই ভিসিদের একাংশ নানা বিতর্কিত কাজ করেও টিকে যান দলীয় আশীর্বাদের কারণে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম এই সময়ে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি নিয়ে আলোচিত। হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজে তিনি নাকি কোটি টাকা ঈদ বখশিশ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতাদের। আর কেন্দ্রীয় দুই নেতা শোভন-রাব্বানী ওই চাঁদার ‘ফেয়ার শেয়ার’ আনতে গিয়ে ফেঁসে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অভিযোগে তাদের ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কার করেছেন। এখন দাবী উঠছে ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্তের। অভিযোগ তিনি চাঁদা দেয়া ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারির কাজ দিয়েছেন তার স্বামী, ছেলে এবং স্বজনদের।

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিন এখন আলোচানায় তার মুখের ভাষা নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী? এক নারী শিক্ষার্থী ফেসবুকে এই প্রশ্ন করায় ভিসি তাকে কাজ শিখিয়ে দিয়েছেন। বাপ তুলে গালাগাল করেই ক্ষান্ত হননি ওই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিস্কারও করেছেন। তিনি কোনো সমালোচনাই সহ্য করতে পারেন না। এরইমধ্যে আরো ২৭ জন শিক্ষার্থীকে বহিস্কারের নোটিশ দিয়েছেন। আর তার কথায়,‘‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়টি বানিয়েছি তাই তোমরা পড়তে পারছ, নয়তো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হত।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান নানা কারণেই এখন আলোচিত- সমালোচিত। তার বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ, তিনি ক্যাম্পসে ছাত্রলীগের সব ‘অপকর্মের’ আশ্রয় প্রশ্রয় দেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর গত এক বছরে ছাত্রলীগ যত হামলা চালিয়েছে সবই তিনি তদন্তের নামে ধামাচাপা দিয়েছেন। ছাত্রলীগ নেতারা ডাকসু নির্বাচনের জন্য অবৈধভাবে ভর্তি হলেও তিনি এসবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। আর ডাকসু নির্বাচনে ‘ ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. নাজমুল আহসান কালিমুল্লাহ অফিস করেন ঢাকায়। এমনকি ঢাকায় বসে টেলিফোনে মৌখিক পরীক্ষা নেয়ারও আভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে৷ অভিযোগ আছে নিজের লোকজনকে নিয়োগ দেয়ার। তারপরও তিনি টিকে আছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কাকে নিয়োগ দেয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা সরকার। কারণ ওই পদ নিয়ে ব্যাপক দৌড়ঝাপ চলছে প্রার্থীদের মধ্যে। তারা সবাই এখন আওয়মী লীগ৷ তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে আপাতত উপ-উপাচর্য ড. শিরিন আখতারকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য করে চালানো হচ্ছে। আগের ভিসি অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী গত ডিসেম্বরে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে ১৪২ জনকে স্থায়ী ও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। তিনি তার অনুসারী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের আত্মীয়স্বজনের পাশাপাশি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত ছাত্র এবং মামলার আসামিকেও নিয়োগ দিয়েছেন৷ গত মার্চ-এপ্রিলেও তিনি একইভাবে ২৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেন।

এদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক এস এম ইমামুল হক ছাত্রদের কটুক্তি করে আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে বাধ্য হন গত বছর। আর একইভাবে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম অহিদুজ্জামান নানা অনিয়মের অভিযোগ ও আন্দোলনের মুখে গত জুনে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হন।

আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান তার মেয়ে এবং জামাতাকে শিক্ষক নিয়োগ দিতে নিয়োগ বিধিই পরিবর্তন করে ফেলেছেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করে ফেলেছেন ৷

এরকম আরো কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসিদের কাজকারবার নিয়ে সংকট চলছে। আবার বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভিসি নিয়োগ করে সংকট কাটানোর চেষ্টা চলছে। এই ভিসিদের মধ্যে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাবেক নেতারাও রয়েছেন। আর সবাই কোনো না কোনো ভাবে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

শিক্ষাবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমিরেটাস অধ্যাপক ড. সিরজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন,‘‘ভিসি নিয়োগে আসলে কোনো নিয়ম নীতি মানা হয়না। যোগ্যতা নয়, রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেয়া হয়। ফলে যারা ভিসি হচ্ছেন তাদের ভিসি হওয়ার যোগ্যতা নেই। আর রাজনৈতিভাবে নিয়োগ পাওয়ায় তারা নিজেদের ক্ষমতাবান মনে করেন। তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন। অর্থলিপ্সার কারণে তারা ভিসির পদের অপব্যবহার করেন। তারা এখন শিক্ষার চেয়ে ব্যবসা বাণিজ্য ভালো বোঝেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাতো আমাদের জন্য অনেক বড় লজ্জার।”

আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সাইদুর রহমান খান বলেন,‘‘উপাচার্যদের কাজ হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম কানুন মানা এবং সবাইকে মানানো। তাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ নৈতিক মান আশা করেন সবাই। এখন সেটা যদি তারা না করেন তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিকভাবে খারাপ হবে। যাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ উঠছে, তা কেন উঠছে দেখা প্রয়োজন। নয়তো পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।”

 

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button