চাঁদা তুলে সাঁকো বানালেন এলাকাবাসী, বরাদ্দ ‘মেরে দিলেন’ চেয়ারম্যান
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের বলদিয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের রাস্তায় খালের ওপর প্রায় দু’শ মিটার কাঠের সাঁকো নির্মাণ করেছেন এলাকাবাসী।
অভিযোগ উঠেছে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করে তা নিয়ে গেছেন শতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কে এম কুবুত উদ্দিন।
জানা যায়, উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নে ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় ঝাড়বাড়ি থেকে গড়ফতু যাওয়ার রাস্তায় খালের ওপরের একমাত্র ব্রিজটি ভেঙে যায়। সে সময় এলাকাবাসী বিভিন্নজনের কাছে চাঁদা তুলে স্বেচ্ছাশ্রমে ব্রিজের পাশেই একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করে।
তবে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন তহবিল প্রকল্প থেকে শতগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্পের সেই রাস্তায় খালের ওপর কাঠের সাঁকো নির্মাণের জন্য ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়ে ওই টাকা তুলে নেন ইউপি চেয়ারম্যান।
ক্ষোভ প্রকাশ করে শতগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা কুতুব উদ্দিন (৬০) বলেন, ‘আমরা কাঠের সাঁকোটি বিভিন্নভাবে চাঁদা তুলে নির্মাণ করেছি। পরে আমরা জানতে পারলাম এই সাঁকোর জন্য বরাদ্দ আসছে। কিছু টাকা ঋণ পরিশোধ করলেও বেশিরভাগ টাকা চেয়ারম্যানের কাছেই আছে। আমরা এই টাকাগুলো মসজিদেও দিতে বলেছিলাম। কিন্তু চেয়ারম্যান দেয়নি।’
উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের বলদিয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের রাস্তায় খালের ওপর কাঠের সাকোঁ নির্মাণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৬ সদস্যের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি করা হয়েছিল। ওই কমিটি দ্বারা কাঠের সাঁকো নির্মাণের কথা থাকলেও সেই কমিটির সদস্যদের মধ্যে অনেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রথম পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে ছয়জন ইউপি সদস্যকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হলেও রেজুলেশন বইতে স্বাক্ষরের পর সেই কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটির গঠন করেন চেয়ারম্যান।
প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প কমিটির সভাপতি শতগ্রাম ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘আমি প্রথমে কাঠের সাঁকো প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ছিলাম। পরে খাতায় রেজ্যুলেশন করার কিছুদিন পর আমাদের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। কমিটি ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাস করলে তিনি বলেছিলেন, আপনারা যদি সাঁকো নির্মাণের টাকা উত্তোলন করে খেয়ে ফেলেন এ জন্য আপনাদের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে’।
ইউপি সদস্য আরো বলেন, আমরা জানিই না কবে টাকা এসেছে, কবে উত্তোলন হয়েছে। বরং আমরা টাকা উত্তোলন করে মেরে খাবো বিধায় আমাদের কমিটি ভেঙে দিয়েছিল চেয়ারম্যান।
স্বেচ্ছাশ্রমে সেতু নির্মাণের জন্য অর্থআদায়কারী কমিটির সদস্য আবুল কাসেম বলেন, ‘ব্রিজ নির্মাণের জন্য আমরা সবার বাড়ি বাড়ি চাল, টাকা উত্তোলন করেছি। এরপর আমাদের এলাকার কয়েকটি সমিতি গাছ ও কিছু টাকা ব্রিজ নির্মাণের জন্য অনুদান দিয়েছিলেন। ব্রিজ নির্মাণ শেষে আমাদের ৩৯ হাজার টাকা ঋণ ছিল। সেই ৩৯ হাজার টাকা ব্রিজ নির্মাণের ৫ থেকে ৬ মাস পর চেয়ারম্যান আমাদের দিয়েছিলেন’।
তিনি আরো বলেন, ‘বাকি টাকা চেয়ারম্যানের কাছেই ছিল। এই টাকা নিয়ে আমরা মসজিদেও সবাই মিলে আলোচনা করেছি।’
তবে টাকা মেরে খাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে শতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কে এম কুতুব উদ্দিন বলেন, ‘এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে অর্ধেক ব্রিজ নির্মাণ করেছিল। বাকি অর্ধেক ব্রিজ বরাদ্দের টাকায় করা হয়।
ব্রিজ নির্মাণের কতদিন পর বরাদ্দ দেওয়া হয় জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘ব্রিজ নির্মাণের বেশ কয়েক মাস পরে বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে বিভিন্ন জায়গা থেকে বাকিতে গাছ, কাঠ, পেরেক, শ্রমিক নেওয়া হয়। বরাদ্দ আসার পর সেই বাকি টাকা পরিশোধ করা হয়।’
এ বিষয়ে বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব। সাঁকো নির্মাণের টাকা কেউ মেরে খেয়েছে প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’