গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : একটি হত্যার ঘটনায় বাদীর দায়ের কার এজাহার পাল্টে দেওয়ার অভিযোগে রাজশাহীর পুঠিয়া থানার ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
এবিষয়ে রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের বেঞ্চ সোমবার রুলসহ এ আদেশ দেয়।
আদালত রাজশাহীর মূখ্য বিচারিক হাকিমকে ৪৫ দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছে বলে বাদীর আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া জানিয়েছেন।
আদেশের আগে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, “একজন ওসির বিরুদ্ধে যদি এই অভিযোগ ওঠে তাহলে সাধারণ জনগণ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?”
পরে জ্যেতির্ময় সাংবাদিকদের বলেন, পুঠিয়ার শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় গত ১৮ জুলাই রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহিদুল্লাহর কাছে ওসি সাকিলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন তার মেয়ে নিগার সুলতানা।
“একই দিন রাজশাহীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও আমলি আদালত-২ এ মামলাটি বাতিলের আবেদন করেন তিনি। কিন্তু প্রতিকার না পেয়ে তিনি ৮ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।”
আবেদন শুনে ওসি সাকিল আহমেদকে চাকরি থেকে কেন সাময়িক বরখাস্ত করা হবে না, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং ওসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ প্রধান, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও ওসি সাকিলসহ সাত বিবাদিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রিট আবেদনের সঙ্গে গত ২২ জুলাই দৈনিক যুগান্তর প্রকাশিত ‘এজাহার বদলে দিলেন ওসি’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়েছে।
তাতে বলা হয়, গত ২৪ এপ্রিল উপজেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে নুরুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনে। ভোটে তাকে হারিয়ে আবদুর রহমান পটল জয়ী হন।
নুরুল ইসলামের পরিবারের অভিযোগ, নির্বাচনে পুঠিয়া থানার ওসি ক্ষমতার অপব্যবহার করে কারসাজি করে নুরুলকে পরাজিত করান। এ ফলাফলের বিরুদ্ধে নুরুলসহ পরাজিত তিন প্রার্থীর মামলায় শ্রমিক ইউনিয়নের সব কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।
“নুরুল ইসলাম যে রাতে খুন হন সেদিনই আদালতের জারিকারক উপজেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে গিয়ে আদালতের এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তার সঙ্গে নুরুল ইসলামও ছিলেন। তখন আসামিদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর রাত সাড়ে ৮টা থেকে নুরুল ইসলামের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন সকালে ইঁটভাটায় নুরুল ইসলামের লাশ পাওয়া যায়।”
এ ঘটনার পর নিহতের মেয়ে নিগার সুলতানা নির্বাচনী মামলাটির তিন আসামিসহ মোট পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে পুঠিয়া থানায় একটি হত্যা মামলার এজাহার দেন। ওসি সাকিল মামলার যে এজাহার নথিভুক্ত করেছেন, তাতে আসামি হিসেবে কারও নাম নেই।
সেই মামলাটিই এখন তদন্ত করছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), যাতে এক কিশোরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
১৮ জুলাই পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, নুরুল সমকামী ছিলেন। ইটভাটায় বলপূর্বক যৌন ক্রিয়া করতে চাইলে ওই কিশোর তার মাথায় ইট দিয়ে থেঁতলে হত্যা তাকে হত্যা করেন।
তবে এজাহার বদলে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ওসি সাকিল বলেছেন, ‘সাদা কাগজে সই নিয়ে এজাহার করা সম্ভব নয়। যে এজাহার হয়েছে সেটা নিহতের পরিবারের সদস্যরাই দিয়ে গেছেন। এজাহার আমরা দেইনি।
নিহতের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রসঙ্গে ওসি বলেন, ‘ওই মামলার এখনও অগ্রগতি নেই। তদন্ত চলছে।’