গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ন সম্পাদক সাদ্দামের সাথে সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর একটি ফোনাআলাপে উঠে এসেছে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে আনিত অনৈতিক অর্থলেনদেনের বিষয়টি। রাব্বানীর সাথে ফোনালাপে সাদ্দাম স্বীকার করেন উপাচার্যের সাথে জাবি ছাত্রলীগের চাঁদা লেনদেনের বৈঠকে তিনি নিজে উপস্থিত ছিলেন। কিভাবে চাঁদা লেনদেন করা হয়েছে সাদ্দাম সেইসব বর্ণনা তুলে ধরেন রাব্বানীর কাছে।
রাব্বানী ও সাদ্দামের এই ৬ মিনিটের এই ফোনালাপে উপাচার্যের পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা কথা তুলে ধরেন সাদ্দাম। তবে এই ফোনালাপকে বানোয়াট মিথ্যা সাজানো গল্প হিসেবে মন্তব্য করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। অন্যদিকে সাদ্দাম হোসাইন বলেন, সে (রাব্বানী) তখন যা বলেছি তাই করেছি…।
কথপোকথনের শুরুতেই গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘অন্তর টাকা নেয়ার সময় ছিলো কে কে? উত্তরে অন্তর নামে একজনকে বলতে শোনা যায়- ‘জুয়েল ভাই, চঞ্চল ভাই, আর সাদ্দাম ভাই ছিলো।
রাব্বানী প্রশ্ন করেন, ‘টাকাটা দিছে কোন জায়গায় বসে?’ অন্তর বলেন, ‘ম্যামের বাসাতেই … সাদ্দাম ভাই আপনার সাথে কথা বলবে এইযে আমার পাশে আছে।’ রাব্বানী বলেন,‘ দাও দাও’
এরপর সাদ্দাম আর রাব্বানীর কথপোকথনে উঠে আসে টাকা প্রদান ও ভাগ বটোয়ারার বিষয়। সাদ্দাম জানান, চাদা সংক্রান্ত সেই মিটিংটি হয়েছিলো উপাচার্যের বাসায়। ওই মিটিংয়েই তাদের এক কোটি টাকা ভাগ করে দেন উপাচার্য। কে কত পাবে সেটাও উপাচার্য ঠিক করে দেন। পরে সেই টাকা তিনি হলে পৌঁছে দিয়েছেন।
ঠিকাদারদের সাথে কাজের ভাগ বাটোয়ারারা কে করেছে? রাব্বানীর এমন প্রশ্নের উত্তরে সাদ্দাম বলেন, ‘তার ছেলে, মূলত হচ্ছে তার ছেলে আর তার পিএস সানোয়ার ভাই আর হচ্ছে পিডি আর তার হাসবেন্ড। এই চার জন।’
সাদ্দাম ও রাব্বানীর এই ফোনালাপের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাদ্দাম হোসাইন বলেন, ‘তার সেন্ট্রাল ছাত্রলীগের সেক্রেটারি নেত্রী বানাইছে। তার কথা শোনা আমাদের দায়িত্ব ছিল। অনেক কথায় তার সাথে হয়েছে। আগে পরে অনেক কথায় হয়েছে। আগে পরের কথাও তো জড়িত। সে সেন্ট্রাল সেক্রেটারি সে যা বলতে বলছে তাই বলছি যা করতে বলছে তাই করছি। এই ফোন কলের আগে পরেও ফোন কল ছিল। সে তো এখন এক্স। আমি আসলে কোন কথার প্রেক্ষিতে এসব বলছি মনে নেই। মনে করে জানাবো।’
এই ফোনালাপের প্রসঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অডিওতে আমি টাকা দিয়েছি এমন গল্প ফাঁদছে। আমার সাথে টাকার কোন দেখা হইনি। এই মিথ্যাটা সত্য করার দায়িত্ব আমার না। ওরে করুক। আর ওরা তো বলতেই পারে। সাদ্দাম বলতে পারে রাব্বানীকে যে উপাচার্য আমাদেরকে টাকা দিলেন বলে আমরা টাকা পেলাম। রাব্বানীর যেহেতু পদ নেই এটা সে ষড়যন্ত্র থেকে এসব বলাতে পারে। কিন্তু নিশ্চিত থাকেন আমরা বাসায় কোন টাকা পয়সার কোন কথায় বলিনি, আনিওনি।’
সাদ্দাম রাব্বানীর ৬ মিনিটের ফোনালাপের সেই কথোপকথন তুলে ধরা হলো-
রাব্বানী ফোনের শুরুতেই বলেন- টাকা নেয়ার সময় ছিলো কে কে? উত্তরে অন্তর বলেন- জুয়েল ভাই চঞ্চল ভাই আর সাদ্দাম ভাই ছিলো।
রাব্বানী প্রশ্ন করে টাকাটা দিছে কোন জায়গায় বসে?
অন্তর: ম্যামের বাসাতেই … সাদ্দাম ভাই আপনার সাথে কথা বলবে এইযে আমার পাশে আছে।
রাব্বানী: দাও দাও
সাদ্দাম: ভাই স্লামালাইকুম।
রাব্বানী: ওয়ালাইকুম সালাম, সাদ্দাম কি খবর ভাই
সাদ্দাম: ভাই খবরতো হচ্ছে আমিতো আপনাকে জানাইছি ভাই খবর ভালো না বেশি একটা…. আমি তাজ জুয়েল চঞ্চল আমরা ৪ জন ছিলাম। ওই মিটিংয়ের সময়।
আর আজকে জাহাঙ্গীর নগর ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে প্রেস রিলিজ দিছে আপনাদের বিপক্ষে
রাব্বানী: সেটাতো দেখলাম… বিষয়টা কি…
সাদ্দাম: বিষয়টা তারা হচ্ছে বামের সাথে সিটিংয়ে গেছে… হ্যা হ্যা দুইটা বৈঠক হইছে।
বৈঠকে বিচার বিভাগীয় তদন্ত বাদে বাকি দাবিগুলো মেনে নিছে। আর বিচার বিভাগীয় তদন্ত হবে কিনা সেটা নিয়ে আগামী বুধবার বসবে ভাই।
রাব্বানী: আন্দোলন নিয়া…
সাদ্দাম: হ্যা হ্যা… আন্দোলন…
রাব্বানী: ম্যামতো নাকি বলছে যে আন্দোলনও আমরা নাকি করাইছি বা সামথিং এমন কিছু একটা… আন্দোলন কারা করছে সেটাতো আমরা জানিনা।
সাদ্দাম বিষয়টা হচ্ছে উনি আরকি ছাত্রলীগের উপর দিয়ে সব কিছু করে নিজের ফ্যামেলিকে সেভ করতে চাচ্ছে। আর নিজে বাঁচতে চাচ্ছে।
আর প্রধানমন্ত্রীর রেফারেন্স দিয়ে অনেকগুলা কথা বলছে আপনার বিপক্ষে বা সেন্ট্রাল ছাত্রলীগের বিপক্ষে।
রাব্বানী : কি রকম?
সাদ্দাম: ওই যে যুগান্তরে ভাই…
রাব্বানী: ওইটা দেখছি দেখছি… আচ্ছা যখন টাকাটা দিলো তুই ছিলি না?
সাদ্দাম: হ্যা হ্যা আমি ছিলাম ভাই। আমি আর তাজ ছিলাম। আমরা… আপনি ভাই বলেন ভাই কি করতে হবে আমরা করতেছি সমস্যা নাই। আমি আর তাজ ওইখানে উপস্থিত ছিলাম।
রাব্বানী: তুই আর কে?
সাদ্দাম: আমি আর তাজ আমার বন্ধু ভাই…
রাব্বানী: ও হ্যা তাজ… তুইতো জয়েন সেক্রেটারি …..
সাদ্দাম: জি ভাই।
রাব্বানী: আচ্ছা… টাকাটা ম্যাডাম দিছে নিজে না অন্য কেউ ছিলো
সাদ্দাম: ওখানে আর কেউ ছিলো না। ম্যাম আমাদের সাথে ডিলিংস করছে করে সে হচ্ছে টাকাটা আমাদের হলে পৌঁছাই দিছে।
রাব্বানী: হলে পৌঁছে দিছে টাকা?
সাদ্দাম: হ্যা হ্যা….
রাব্বানী: কয় টাকা দিছে? আমাদের কে বলছে হইছে এক কোটি… এর বেশি আর জানিনা। জুয়েলের সাথে আলাদা সেটিং হইতে পারে…। বাট আমাদের সাথে হইছে।
রাব্বানী: আমরাতো শুনলাম ১ কোটি ৬০…
সাদ্দাম: ওইটাতো ভাই আমরা জানিনা…৬০ এরটা আমরা জানিনা.. আমরা হচ্ছে ভাই.. ওখানে হচ্ছে উনি ভাগ করে দিছে ৫০ হচ্ছে জুয়েলের ২৫ আমাদের আর ২৫ চঞ্চলের।
রাব্বানী : কত টাকা দিসে?
সাদ্দাম : আমাদেরকে বলসে ১ কোটি। আমরা বাকিটা আর জানিনা। ভাগ করে দিয়ে বলছে ৫০ জুয়েলের, ২৫ আমাদের আর ২৫ চঞ্চলের।
রাব্বানী : ম্যাডামই এভাবে ভাগ করে দিসে?
সাদ্দাম : হুম।
রাব্বানী : জুয়েল ভালো ছেলে এজন্য তাকে ৫০ আর চঞ্চল ক্যাম্পাসের বাইরে থাকে এজন্য তাকে ২৫।
সাদ্দাম : হ্যা, চঞ্চল সে তো আমাদের বাদ দিতে পারে নাই, ঝামেলা এড়ানো জন্য বা আমাদেরকে ঠিক রাখার জন্য এটা করছে।
রাব্বানী : ভাগের টাকাই তোদেরকে দিসে।
সাদ্দাম : চঞ্চলের ওখান থেকে আমরা বলছি যে আমাদেরকে ২৫ পার্সেন্ট দেয়া লাগবে। মানে চঞ্চলের ২৫ পার্সেন্ট দিতে হবে ওর ভাগের, ওরে ফুল টাকা দেয়া যাবে না। আর পত্রিকার হিসাবটা হলো ভাই এক্সট্রা আলাদা করে ওদের ৬০ লাখ টাকা দিসে আমাদেরকে না জানাই, এটা হইতে পারে।
রাব্বানী : তোমাদেরকে না জানাইয়া দিসে, না?
সাদ্দাম : হ্যা…, আমরা এটা জানি না। আমরা ১ কোটির হিসাব জানি ভাই।
রাব্বানী : ঠিকাছে এখন ম্যাডাম যে আমাদের নাম জড়াইলো, এখানে আমাদের সম্পর্কে কোনো আইডিয়াই নাই, টাকার ব্যপারে কথা বলতেছে।
সাদ্দাম : ভাই উনি খুব নোংরামি করতেছে ভাই, ঠিকাছে, আপনারা ভাই সিদ্ধান্ত নেন কি করা লাগবে, আমরা করতেছি সমস্যা নাই ভাই।
রাব্বানী : না, তোমাদের কিছু করা লাগবে না। তোমরা সাইলেন্ট থাকো। এটা যেহেতু আপার কানে দিয়েছে.. আমিও বুঝতেছি যে নিজে সেভ হওয়ার জন্য, তার ফ্যামিলি সেভ করার জন্য এসব করতেছেন…।
সাদ্দাম : হ্যা, হ্যা।
রাব্বানী : এই ছয়টা কাজ ডিল করছে কে? বেসিক্যালি ঠিকাদারদের সাথে এসব ডিল কে করছে?
সাদ্দাম : তার ছেলে, মূলত হচ্ছে তার ছেলে আর তার পিএস সানোয়ার ভাই আর হচ্ছে পিডি আর তার হাসবেন্ড। এই চার জন।
রাব্বানী : আগে থেকেই এই ছয়টা কোম্পানি রেডি করে রাখছে?
সাদ্দাম : হ্যা ভাই, শুরু থেকেই তারা সব কিছু করছে, টেকনিক্যাল কমিটিতেও ভিসি ছিলো ভাই।
রাব্বানী : ও, টেকনিক্যাল কমিটিতেও ভিসি ছিলো? সাধারনত টেকনিক্যাল কমিটিতেতো ভিসি থাকতে পারে না। সেখানেও ছিলো?
সাদ্দাম : না থাকে না, সে ছিলো। এবং সে হচ্ছে প্রথমে টেন্ডার জমা দেয়ার সময় সবাইকে ফেরত পাঠাই দিলো না? তখন আমরা বললাম সবাকে টেন্ডার ড্রপ করতে দিতে হবে, তখন ড্রপ সাবাইরে করাইসে বাট কাজ হচ্ছে সব নিজ হাতে করছে ভিসি। আর যখন হাসপাতালে ভর্তি হইসে ওইটা নাটক ছিলো। …হাসপাতালে ভর্তি হইছে যেন তাকে কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে।
রাব্বানী : ও আচ্ছা আচ্ছা, শিডিউল বিক্রির টাইমে সে হাসপাতালে ভর্তি হইসে ইচ্ছা করে?
সাদ্দাম : হ্যা.. হ্যা…ভাই
রাব্বানী : আচ্ছা আমি তোর সাথে কথা বলবো পরে যদি প্রয়োজন হয়।