গাজীপুর

বনের ‘গজারি কেটে’ করা হচ্ছে সামাজিক বনায়ন!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : চারদিকে কোনো বাড়িঘর নেই। গভীর অরণ্য। বড় বড় গজারি গাছের সেই অরণ্যের ভেতরের একটা অংশ কেবল বিরান ভূমি। কেটে নেওয়া হয়েছে শত শত গাছ। মাটির নিচ থেকে তুলে ফেলা হয়েছে বেশিরভাগ গাছের গোড়া। কিছু গোড়া এখনও আছে। বাইরে বোঝার উপায় নেই যে, বনের ভেতরের গাছ কেটে বিরান করে ফেলা হয়েছে। তবে সেখানে লাগানো হচ্ছে আকাশমনি গাছের চারা। গজারি বন উজাড় করে ওই জায়গায় এভাবেই করা হচ্ছে সামাজিক বনায়ন।

০৬ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) সমকাল- পত্রিকায় প্রকাশিত ‘গজারি কেটে বনায়ন!’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  শ্রীপুর উপজেলার বিন্দুবাড়ি কসাইপাড়া এলাকায় বনের গভীরের ওই জায়গা সামাজিক বনায়নের নামে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ব্যক্তি খাতে। প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন বিন্দুবাড়ি এলাকার প্রবাসী আনোয়ার হোসেন।

অভিযোগ উঠেছে, শ্রীপুর রেঞ্জের সদর বিট অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে গত কয়েক দিনে কসাইপাড়ার ওই বন উজাড় করে ফেলা হয়েছে। সামাজিক বনায়নের নামে প্লট বরাদ্দ নিয়ে বিন্দুবাড়ি এলাকার প্রবাসী আনোয়ার হোসেন তার লোকজন দিয়ে এ নিধনযজ্ঞ চালিয়েছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, বিরান ভূমিতে পরিণত করা জায়গার পাশে বনের ঝোপের ভেতর পড়ে আছে সদ্য কাটা শত শত গজারি গাছ। কেটে নেওয়া গাছের গোড়া মাটি থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। দুই-আড়াইশ’ মোথা এখনও দৃশ্যমান। স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যা নেমে এলেই গাছগুলো সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়। বন বিভাগের লোকজনের পাহারায় ওই গাছগুলো সরানো হয়। বন বিভাগের লোকজনকে ম্যানেজ করেই প্রবাসী আনোয়ার হোসেন তার লোকজন দিয়ে ছয়-সাত বিঘা জমির গাছ কাটিয়েছেন।

অভিযুক্ত আনোয়ারের পক্ষে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, জমিটা বন বিভাগের কাছ থেকে সামাজিক বনায়নের জন্য লিজ নেওয়া হয়েছে। আনোয়ারের মা রূপবানের নামে এক একর জায়গা প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গজারি গাছ কেটে সামাজিক বনায়ন করা কতটা আইনসম্মত- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা মোটেও ঠিক করেনি। স্থানীয়রা জানান, বন বিভাগের কাছ থেকে ওই প্লট নিয়ে স্থানীয় এক প্রভাবশালীর কাছে বিক্রি করে দেওয়ার প্রক্রিয়াও চলছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউসূফ বলেন, গজারি বন উজাড় করে সামাজিক বনায়ন কোনোভাবেই বিধিসম্মত নয়। এমনটা হয়ে থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুল হক বলেন, বিষয়টি নিয়ে তারা তদন্তে নামবেন। কারা এ কাজটি করেছে, সেটা খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বন বিভাগের কোনো কর্মী জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সদর বিট অফিসার সেলিম মিয়া বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বিষয়টি নিয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য তিনি অনুরোধ করেন।

এ ব্যাপারে গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ বলেন, তার সংসদীয় এলাকায় সরকারের একটি গাছও কাটতে দেওয়া হবে না। কেউ যদি এমনটা করে, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button