আলোচিত

দেবর ভাবির দ্বন্দ্বে কোন পথে জাতীয় পার্টি?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : এরশাদহীন জাতীয় পার্টিতে এখন গৃহবিবাদ তুঙ্গে। দলটি এখন কার্যত দুই ভাগ হয়ে গেছে৷ আর এই দুইভাগের নেতৃত্বে আছেন যে দুইজন তারা সম্পর্কে দেবর এবং ভাবি। এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ এবং এরশাদের ভাই জিএম কাদের।

গত ১৪ জুলাই মারা যান এরশাদ৷ তিনি মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত দলে নানা ধারা উপধারা সামাল দেন। তবে তিনি জীবিত থাকা অবস্থায়ই তার স্ত্রী রওশন এরশাদ দলে তার প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হন। সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে রওশন অনেকটা কোনঠাসা করে ফেলেন এরশাদকে। আর সেটা বুঝতে পেরে এরশাদ তার ভাই জিএম কাদেরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেন। রওশন থেকে যান কো-চেয়ারম্যান। তিনি বর্তমান সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা।

এর আগে এরশাদের মৃত্যুতে রংপুর-৩ আসন শূন্য হওয়ায় ওই আসনের প্রার্থীতা নিয়ে কাদের ও রওশনের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর জিএম কাদের দলের প্যাডে নিজেকে বিরোধী দলীয় নেতার পদে নিয়োগ দিতে স্পিকারকে চিঠি দেন। এরশাদ ছিলেন বিরোধী দলীয় নেতা। কিন্তু পরদিন ৪ সেপ্টেম্বর রওশন এরশাদ স্পিকারকে দেয়া চিঠিতে জিএম কাদেরের চিঠি নিয়ে বৈধতার প্রশ্ন তুলে তা গ্রহণ না করার অনুরোধ জানান।

বৃহস্পতিবার সকালে রওশন এরশাদকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ রওশনকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। ফলে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর জিএম কাদের পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে দলের নেতৃত্ব তার হাতেই থাকার দাবি করেন। তিনি দলের গঠনতন্ত্রের বরাত দিয়ে বলেন,‘ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের চেয়ারম্যান তাকে দলের নেতৃত্বে দিয়ে গেছেন।’

এদিকে এই ঘটনায় দলের মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা এখনো নীরব আছেন। তিনি সংবাদ মাধ্যমে আপাতত কথা বলছেন না। কোনো অংশের সংবাদ সম্মেলনেও ছিলেন না৷ দুই অংশই তাকে দলের মহাসচিব মনে করে।

জাতীয় পার্টি থেকে এবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ২২ জন৷ সংরক্ষিত নারী আসনে তিন জন। এই দলটির প্রধান দুর্গ এরশাদের বাড়ি রংপুর। রংপুর বিভাগে জাতীয় পার্টির আসন সাতটি৷ এখন এই ২৫ সংসদ সদস্যের কতজন কার দিকে আছে আর রংপুরে কার অবস্থান শক্ত তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে সরকারের সমর্থন কোন দিকে শেষ পর্যন্ত যায় তাও দেখার বিষয়। বিশ্লেষকেরা বলছেন প্রতিষ্ঠাতা এরশাদ না থাকায় এখন দলটিতে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। ফলে দলটির একক অস্তিত্ব হুমকির মুখে। দলটি আরো খণ্ড বিখণ্ড হয়ে বিভিন্ন দলে বিলীন হয়ে যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. শান্তনু মজুমদার বলেন,‘‘জাতীয় পার্টির এই গৃহবিবাদে আমি বিস্মিত নই। এরশাদ থাকা অবস্থায়ই এটা ছিলো। এখন আরো প্রকাশ্যে এলো। আসলে স্বৈরাচারের পকেট থেকে জন্ম নেয়া একটি দল যারা সরকারের সাথে সম্পর্ক রেখে চলে তাদের এটাই পরিণতি হয়। আর এই দলটি ভবিষ্যতে টিকে থাকবে কিনা তা নির্ভর করবে সরকারের সাথে তাদের সম্পর্কের ওপর৷ রংপুরেরর মানুষের ওপর।”

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন,‘‘জাতীয় পার্টিকে রাজনৈতিক দল বলা যায়না। একটি রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক আদর্শ থাকে৷ জাতীয় পার্টির তা নেই। একটা রাজনৈতিক দল সরকারে থাকে আবার বিরোধী দলেও থাকে এটা হয়না। পৃথিবীর কোথাও এটা নেই৷ এই দলতো ভেঙ্গে গেছে। আরো খন্ড খন্ড হয়ে আওয়ামী লীগে বিলীন হয়ে যাবে।”

তবে জিএম কাদের বলেন,‘‘দল ভাঙবে না৷ চার-পাঁচজন লোক একটা কিছু বলতে তাতে কিছু এসে যায়না। রওশন এরশাদ নিজে কিছু বলেননি।” এই দ্বন্দ্বে জাতীয় পার্টি বিলীন হয়ে যাবে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘‘এটা কিভাবে সম্ভব। এতবড় দল। তারা হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমর্থক। দল বিলীন হবে কিভাবে! দল আরো শক্তিশালী হবে৷” জিএম কাদের দাবি করেন তার সাথে ২৫ জন এমপির ১৫ জন রয়েছেন।

আর রওশনপন্থী নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম এমপি বলেন,‘‘আমরা রওশন এরশাদকে দলের চেয়ারম্যান করেছি দলের গঠনতন্ত্র মেনে। ফলে দল ভাঙার কোনো কারণ নেই। যারা বিপথে গেছেন তাদের আমরা ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের দল কোনেভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বা ভেঙে টুকরো টুকরো হবে না।” দলের এমপিরা কার দিকে বেশি জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘‘সেটা জানি না। এমপিরাতো আর দলের প্রধান নির্বাচন করবেন না। তারা সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচন করবেন। আমরা ৮ সেপ্টেম্বর সংসদীয় দলের বৈঠক ডেকেছি। দেখা যাক কী হয়।”

প্রসঙ্গত, ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করে পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন।

এরশাদ জীবিত থাকতেই জাতীয় পার্টিতে বেশ কয়েবার ভাঙন হয়। এরশাদের জাতীয় পার্টির বাইরেও এখন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নাজিউর রহমান মঞ্জুর( প্রয়াত) এবং কাজী জাফর আহমেদের(প্রয়াত) নামে জাতীয় পার্টির আরো তিনটি অংশ আছে।

 

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button