আলোচিত

নির্বাচন ও বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বাংলাদেশে নির্বাচনি সাংবাদিকতায় নিরপেক্ষতার আড়ালে কোনো একটি পক্ষে অবস্থান নেয়ার অভিযোগ আছে। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আছে ফেক নিউজের ছড়াছড়ি। তাহলে বস্তুনিষ্ঠতা আসবে কিভাবে?

গত ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামালা হোসেনকে জামায়াত নিয়ে তাঁর অবস্থান জানতে চাওয়ায় বিপত্তি ঘটে। তিনি উত্তেজিত হয়ে সাংবাদিকদের ‘খামোশ’ বলে চুপ করিয়ে দিতে চান। প্রশ্ন করেন ওই ধরনের প্রশ্ন করার জন্য সাংবাদিকরা কত টাকা নিয়েছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্ন এবং ড. কামাল হোসেনের উত্তর নিয়ে বাংলাদেশে দুই ধরনের মত পাওয়া যায়। কেউ বলছেন, ড. কামাল হোসেনকে সঠিক জায়গায়, সঠিক প্রশ্ন করা হয়েছে। আবার কেউ বলছেন সাংবাদিকরা ওই ধরনের প্রশ্ন করে ঠিক করেননি। ড. কামাল অবশ্য এরই মধ্যে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত জামায়াত ঐক্যফ্রন্টের মতোই বিএনপি’র ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছে। যদিও ঐক্যফ্রন্ট শুরুতে বলেছিল জামায়াতকে তারা কোনোভাবেই সঙ্গে নেবে না।

নির্বাচনের দিক দিয়ে দেখলে কোন দল কার সঙ্গে ঐক্য করে নির্বাচনে জিততে চায়, তা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। আবার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দিক দিয়ে দেখলে এটা প্রশ্নসাপেক্ষ ব্যাপার। কথা হলো, সাংবাদিকরা ড. কামাল হোসেনকে প্রশ্ন করেছেন। উল্টো দিকে আওয়ামী লীগ সামরিক শাসক এবং স্বৈরাচার বলে পরিচিত এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করছে অনেক দিন ধরে। সেটা নিয়ে কি সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের শক্তভাবে প্রশ্ন করছেন?

ওয়ান ইলেভেনের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় তারেক রহমানের দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন। তার বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলাও হয় তখন। তার আগে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘‘আমার ছেলেরা কোনো ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত নয়।” এই প্রতিবেদক তখন একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কর্মরত।

প্রশ্ন ওঠে, খালেদা জিয়ার ওই বক্তব্যের ফাইল ফুটেজ দেখিয়ে তাঁর সঙ্গে তারেকের দুর্নীতির মামলার সদ্য খবর দিয়ে নিউজ প্যাকেজ তৈরি করা যায় কিনা। অনেক আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়, টুইস্ট করার চেয়ে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার খবরটিই শুধু পরিবেশন করা ভালো। কারণ, সামনে নির্বাচন। তাই প্রতিবেদনে যাতে কোনো উদ্দেশ্য এবং পক্ষপাত না থাকে। তবে কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড স্টোরি করলে আলাদা কথা।

সম্প্রতি সাংবাদিকতার শিক্ষক এবং তথ্য কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক গোলাম রহমান তাঁর এক কলামে একটি শীর্ষ দৈনিকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘কোনো সংবাদমাধ্যমের দলীয় ভূমিকা কাম্য নয়। যদি সরকারের সমালোচনা করে, তাহলে তাদের ভালো কাজও তুলে ধরা উচিত। আবার বিরোধীদের ক্ষেত্রেও একই নীতি অনুসরণ করা উচিত। কাউকে গ্লোরিফাই করা নিশ্চিভাবে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা।”

২০১৪ সালের নির্বাচনে একটি বড় পত্রিকার একটি ছবি এডিটিং নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল।

নির্বাচনে বাংলাদেশে এখন প্রধান দু’টি দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি মূল প্লেয়ার। তাদেরকে কেন্দ্র করেই অধিকাংশ রাজনৈতিক দল জোটবদ্ধ। দুটি দলেরই নির্বাচনের জন্য মিডিয়া সেল আছে৷ দলীয় মিডিয়া সেলে পেশাদার সাংবাদিকরা যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশে সাংবাদিকরা দলীয়ভাবে বিভক্ত৷ আর এই বিভক্তিও প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলকে কেন্দ্র করে। বাজারে ‘আওয়ামী লীগের সাংবাদিক’, ‘বিএনপি’র সাংবাদিক’ বলে কথা প্রচলিত আছে। ‘জামায়াতের সাংবাদিক’ বলেও কথা আছে।

নির্বাচনি সাংবাদিকতায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক আশীষ সৈকত বলেন, ‘‘নির্বাচনি সাংবাদকিতার তিনটি পর্যায় রয়েছে। নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনের পরে। এখনকার পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্বাচনের যে ফেসটিভ মুড, সেটা দেখা যাচ্ছে না। কেউ প্রচার করতে পারছেন না, কেউ পারছেন। কেউ পোস্টার লাগাতে পারছেন না। কেউ পারছেন। এটা সাংবাদিকরা তুলে ধরছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমি কতটুকু তুলে ধরতে চাই? আমরা কতটুকু প্রকাশ করতে চাই? সাংবাদিকরা হয়তো চান এবং করেন। কিন্তু তার প্রতিষ্ঠান শেষ পর্যন্ত কতটুকু তুলে ধরছে বা ধরতে পারছে?”

তিনি আরো বলেন, ‘‘অনেকগুলো অদৃশ্য বিষয় আছে, তা সাধারণ চোখে দেখা যায় না৷ সেগুলো নির্বাচনের সময় তুলে আনা সাংবাদিকের কাজ। কিন্তু সেগুলো তুলে আনা কতটা সম্ভব হচ্ছে? সাংবাদিকদেরও কারুর কারুর দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি আছে। আছে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি। প্রতিবেদনে তার প্রতিফলন হয়তো ঘটছে। কিন্তু সেটা হওয়া উচিত নয়।”

আশীষ সৈকত বলেন, ‘‘সাংবাদিক হয়তো নিরপেক্ষভাবেই তথ্য তুলে আনেন, কি্তু তাঁর প্রতিষ্ঠান সেটা কতটা প্রচার করে সেটাই প্রশ্ন৷ কোনো পক্ষের প্রভাবে খবর পরিবেশন করা তো গ্রহণযোগ্য নয়। আবার খবর পরিবেশন না করাও কাউকে সহায়তা করার একটা কৌশল।”

বাংলাদেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন হয় ১৯৭৩ সালে৷ তখন মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম ছিল। এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর নিজেই ‘জনতা’ নামে একটি পত্রিকা চালু করেন। ওই সময় তার পক্ষে কাজ করার জন্য আরো একটি বড় দৈনিক বের হয়। অন্যান্য দৈনিকগুলোকেও প্রেস অ্যাডভাইসের নামে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তাই তার সময়ের নির্বাচনে একটি কথা ব্যাপক প্রচার পায় আর তা হলো ‘মিডিয়া ক্যু’।

৯০-এর গণ অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে সংবাদ মাধ্যমের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এখন বাংলাদেশে বেসরকারি টেলিভিন, অলনাইন ও পত্রিকা মিলিয়ে অনেক সংবাদ মাধ্যম। আর আছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এরইমধ্যে ৫৪টি পোর্টাল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর আছে। আছে নির্বাচনি খবরের নামে নানা গুজব। এখানে প্রচার প্রচারণাও ব্যাপক।

ফেসবুক বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের ৯টি পেজ ও ৬টা আইডি বন্ধ করে দিয়েছে। ফেসবুকের নিউজরুমে প্রকাশিত এক পোস্টে তারা বলছে, সমন্বিতভাবে ভুয়া পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফেসবুক জানায়, একটি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা তদন্ত চালিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বন্ধ করে দেয়া পেজগুলোর মধ্যে একটির ফলোয়ার সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৯০০ জন৷। বন্ধ হওয়া পেজগুলো বুস্ট করতে (বিজ্ঞাপন বাবদ) ৮০০ ডলার ব্যয় করা হয়েছে। ফেসবুক তাদের তদন্ত প্রতিবেদনের বরাতে দাবি করছে, বন্ধ করা পেজগুলো বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের নামে সরকারপন্থি ও বিরোধী দলের বিরোধিতায় বিভিন্ন পোস্ট প্রকাশ করছিল।

নির্বাচনকে সামনে রেখে হ্যাকাররাও সক্রিয়। ২০ ডিসেম্বর দৈনিক সমকালের ফেসবুক হ্যাক করে ১২ ঘন্টারও বেশি সরকারবিরোধী প্রচারণা চালিয়েছে হ্যাকাররা। পরে পেজটি আবার উদ্ধার করে সমকাল। দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ফেসবুক আইডি এবং পেজ হ্যাক হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

মাইক্রো ব্লগিং সাইট টুইটারেরও বাংলাদেশি ১৫টি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। টুইটারের নীতিমালা না মেনে নানা ধরনের মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করায় এ অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করা হয়েছে বলে ২০ ডিসেম্বর এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে টুইটার কর্তৃপক্ষ।

২০০১ সালের নির্বাচনের আগে একটি প্রাইভেট টিভি চ্যানেল সরাসরি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অনেকগুলো ধারাবহিক অনুষ্ঠান প্রচার করে। আবার ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়রিতে মাগুরা নির্বাচনের ভোট ডাকাতির কাহিনি এই সংবাদ মাধ্যমই প্রকাশ করেছিল।

অভিযোগ আছে, এখন বাংলাদেশের অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যম নির্বাচন নিয়ে খবর পরিবেশনে পেশদারিত্বের সংকটে ভুগছে। আর কোনো কোনো টিভি চ্যানেল নিজেদের স্বার্থ বিবেচনা করে খবর ও টকশো প্রচার করছে। একই অভিযোগ আছে অনলাইনের ব্যাপারেও। আর বাংলাদেশের সাংবাদিকরা এখন এক ধরনের সেল্ফ সেন্সরশিপের মধ্যেও আছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘‘নির্বার আগে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সংবাদমাধ্যমগুলো সেল্ফ সেন্সর (স্বনিয়ন্ত্রণ)-এর মধ্যে কাজ করছে।” বাংলাদেশের প্রিন্ট, অনলাইন এবং টেলিভিশনের ৩২ জন সাংবাদিকের নেয়া সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তারা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে বলে জানিয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং এর আগের তথ্য প্রযুক্তি আইনের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে সাক্ষাৎকারদানকারী সাংবাদিকরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন। প্রতিবেদনে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

বাংলাদেশের অন্তত দু’জন সম্পাদকের মতামত প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মানব জমিন সম্পাদক মতিউর রহমান বলেছেন, ‘‘একজন প্রতিবেদক দিনের পর দিন পরিশ্রম করে একটি প্রতিবেদন তৈরির পরও যখন সেটা আমি ছাপতে পারি না, তখন সম্পাদক হিসেবে আমার খারাপ লাগে। কিন্তু প্রতিবেদককে রক্ষার স্বার্থে আমাকে না ছাপার সিদ্ধান্ত নিতে হয়, কেননা, এটি প্রকাশের ঝুঁকি সম্পর্কে আমি জানি।”

আর দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেছেন, ‘‘আগে কোনো উদ্বেগ ছাড়াই আমি নিয়মিত কলাম লিখতাম। কিন্তু এখন লিখি কালেভদ্রে।”

কেন প্রতিবেদন প্রকাশ করা যায় না, সমস্যা কোথায়– জানতে চাইলে মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান তাৎক্ষণিক কোনো জবাব দিতে রাজি হননি, শুধু বলেন, ‘‘আপনিও তো জানেন, কেন প্রকাশ করা যায় না। বোঝেন না আপনি? আপনিও তো বোঝেন।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. সফিউল আলম ভুঁইয়া বলেন, ‘‘সংবাদ মাধ্যমগুলো মালিকের স্বার্থ ও রাজনৈতিক সমর্থনের দিক বিবেচনা করে নির্বাচনের খবর পরিবেশন করে। এটা পেশাদরিত্ব নয়৷ অনেক সাংবাদিকও আছেন দলীয়। তাঁরাও তাঁদের পছন্দের দিক বিবেচনা করে খবর তৈরি করেন। তবে পশ্চিমা বিশ্বে সংবাদ মাধ্যম সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেয়। এটা সমস্যা নয়৷ কারণ, তখন আমরা বুঝতে পারি তার অবস্থান। কিন্তু আমাদের এখানে যেটা হয়, তা হলো নিরপেক্ষতার ছদ্মাবরণে দলীয় প্রচার বা বিরোধিতা করা। এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। এটা অসততা এবং পাঠক, দর্শক তাতে বিভ্রান্ত হয়। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, বাংলাদেশের একটি বড় দৈনিক পত্রিকা ১৪ ডিসেম্বর ড.কামাল হোসেনের ওপর হামলাকে লিড নিউজ করল। কিন্তু তিনি যে সাংবাদিকদের ‘খামোশ’ বললেন, তা চেপে গেল। সংবাদ মাধ্যমগুলো তার এজেন্ডা অনুযায়ী নিউজ ট্রিটমেন্ট দিচ্ছে। নিউজের গুরুত্ব বিবেচনা করে নয়।”

তিনি বলেন, ‘‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবার নির্বাচনে প্রভাব ফেলছে। কিন্তু ফেক বা ভুয়া নিউজ, ভিডিও বা বিভিন্ন ধরনের ভুয়া কনটেন্ট আমরা দেখতে পাচ্ছি। গুজবও ছাড়ানো হয়। এটা এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি করে। কিন্তু আবার মানুষও সচেতন হচ্ছে, তারা বুঝতে শুরু করেছেন যে, কোনটা সঠিক আর কোনটা ফেক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত সরাসরি ফিডব্যাক পাওয়া যায়। তাই নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে।”

বাংলাদেশে এবারের নির্বাচনে প্রার্থীরা তাঁদের ফেসবুক পেজে সরাসরি লাইভে এসে প্রচার চালাচ্ছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক পেজ খোলা হয়েছে। কিন্তু এগুলো মনিটরিং বা প্রচারে পেশাদারিত্ব চোখে পড়ছে না। কোনো কোনো সাংবাদিককেও দেখা যাচ্ছে তাঁদের আইডি বা পেজে কোনো একজন প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে আশীষ সৈকত বলেন, ‘‘নির্বাচনি প্রতিবেদন তৈরিতে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হয়। কারণ, নির্বাচনি প্রতিবেদন তৈরিতে আরপিও, সংবিধান আর প্রচলিত আইন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হয়। নির্বাচনি আচরণবিধি জানা না থাকলে কেউ সেটা লংঘন করছেন কিনা তা প্রতিবেদকের পক্ষে বোঝা মুশকিল। আবার সাংবাদিক নিজেই খবর পরিবেশন করতে গিয়ে নির্বাচনি বিধি লংঘন করছেন কিনা তা-ও তাঁর বোঝা প্রয়োজন।”

আর এ কারণেই গত দুই মাস নির্বাচনি প্রতিবেদন তৈরির ওপর ইন হাউজ এবং জেলায় জেলায় সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এমআরডিআই)৷ প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান মুকুর বলেন, ‘‘আমাদের প্রশিক্ষণের প্রধান উদ্দেশ্য হলো নির্বাচনি সাংবাদিকতার এথিকস,নীতিমালা ও বস্তুনিষ্ঠতা যাতে সাংবাদিকরা মেনে চলেন। তাঁদের নিরাপত্তা কৌশলের ওপরও প্রশিক্ষণ হয়েছে। একই সঙ্গে আমরা নির্বাচনি সাংবাদিকতার কৌশল এবং পদ্ধতির ওপরও প্রশিক্ষণ দিয়েছি৷ সিনিয়র সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার শিক্ষকরা ট্রেনার হিসেবে কাজ করেন। গত দুই মাসে ১০টি মিডিয়া হাউজে ইন হাউজ ট্রেনিং করিয়েছি। আর বিভাগীয় পর্যায়ে আমরা ৬টি বিভাগে ২৫ জন করে সাংবাদিককে ট্রেনিং করিয়েছি। আমাদের প্রশিক্ষণে নিউজ এডিটর, নিউজ রুম এডিটররাও অন্তর্ভূক্ত ছিলেন।”

এখন তাঁদের নির্বাচনি প্রতিবেদনে বা খবর পরিবেশনে প্রশিক্ষণের কোনো সুফল দেখতে পাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা নির্বাচনের পর যাঁরা প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের প্রতিবেদন এবং খবর পরিবেশন মূল্যায়ন করবো। তখন বুঝতে পারব।”

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button