কোন পথে খালেদা জিয়ার মুক্তি, দ্বিধায় বিএনপি
গাজীপুর কণ্ঠ, রাজনৈতিক ডেস্ক : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কোন পথে মুক্ত করার চেষ্টা চালানো হবে এ নিয়ে একক কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছেন না দলটির শীর্ষ নেতারা।
আইনি লড়াই, রাজপথে আন্দোলন নাকি সরকারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করে খালেদা জিয়াকে জেল থেকে বের করে আনার কর্মসূচি নেয়া হবে তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে দলটি।
গত শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর খবর ছড়িয়ে পড়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। কিন্তু রোববার দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে জানান, শনিবারের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘‘বৈঠকের আলোচ্যসূচি অনুযায়ী খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা এবং মুক্তির বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। সমস্যাটি আর্ন্তজাতিক বিশেষ করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তুলে ধরার আলোচনা হয়। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। শনিবারের প্রেসব্রিফিংয়ে ভুলক্রমে সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে।’’
মহাসচিবের স্বাক্ষরে এই বিবৃতি গণমাধ্যমে আসার পর এনিয়ে বিএনপির কোনো নেতা নাম-পরিচয় প্রকাশ করে কথা বলতে চাইছেন না।
তবে দলটির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত বিএনপি নিয়েছে সেই খবর এখনই সংবাদ মাধ্যমে দেয়া ঠিক হয়নি বলে মনে করছেন তারা। এর ব্যাখ্যায় বলছেন, এ বিষয়ে কাজ শুরুর পরর বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে আসলে ভালো হতো৷ কারণ এই খবর প্রকাশ হওয়ায় সরকার পাল্টা প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ পেয়ে গেছে।
নাম প্রকাশ না করে বিএনপির একজন নেতা বলেন, ‘‘বিএনপি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য তিনটি যুক্তিকে গুরুত্ব দেবে। তাঁর বয়স ও শারীরিক অবস্থা, বিচার বিভাগকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার এবং মিথ্যা মামলা। এজন্য চিঠিও ড্রাফট করা হচ্ছে।
‘বিএনপি বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সরকার প্রধানদের কাছে শুধু চিঠিই দেবে না, ব্যক্তিগত পর্যায়েও যোগাযোগ করবে। আর ঢাকায় বিদেশি মিশনগুলোকেও জানাবে। তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়েরও আয়োজন করা হতে পারে।’’
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলছেন, ‘‘আমাদের বিবেচনায় জাতিসংঘও রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনকেও আমরা জানাব।’’
গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আটক আছেন খালেদা জিয়া, তার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা রয়েছে, ৩৪টিতে জামিন পেয়েছেন তিনি।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আশা করেছিলেন, শিগগিরই বাকি দুই মামলায় জামিন পেয়ে জেল থেকে ছাড়া পাবেন খালেদা। কিন্তু জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় গত ৩১ জুলাই তার জামিন আবেদর নাকচ করে দেন হাইকোর্ট। আর জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট মামলায় জামিন আবেদনও ঝুলে থাকায় কারাগারেই থাকতে হচ্ছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে।
আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির সম্ভাবনা দেখছে না বিএনপি। ফলে আন্দোলন ও বিদেশি চাপই এখন তাদের ভরসা। বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনো কমিটি এখনো গঠন হয়নি। তবে বিএনপির ফরেন রিলেশন কমিটি আছে, আমার জানা মতে সেই কমিটিই কাজ করবে।’’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘‘যদি আন্দোলন শক্তিশালী হয় তাহলে এমনিতেই আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হবে। আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির জন্য আলাদাভাবে কিছু করার দরকার আছে বলে আমার কাছে মনে হয় না। খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক কারণে আটক করা হয়েছে, আদালতে এর সমাধান আসবে না, রাজনৈতিভাবে সমাধান আনতে হবে। এর বড় উদাহরণ শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আন্দোলনের মুখে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্যই হবে খালেদা জিয়ার মুক্তি।’’
আগামী ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এই কর্মসূচিকে সামনে রেখে তারা বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মসূচি দেবে, এক্ষেত্রে ঢাকা বিভাগকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে দলটির নেতারা জানিয়েছেন।
বিএনপির ফরেন রিলেশন কমিটর প্রধান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি যে আইনি ব্যাপার নয় সেটা সবাই জানেন। অ্যামেরিকান হিউম্যান রাইটস রিপোর্টেও বলা হয়েছে খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক কারণে আটক রাখা হয়েছে। আমরা আন্দোলনের চেষ্টা করছি৷ এটাতো করতেই হবে।
‘‘তবে দমন পীড়নের মুখে আমরা ততটা এগাতো পারছি না। বিষয়টিকে আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নেব বলে ঠিক করেছি। তবে সেটা কোন প্রক্রিয়ায় নেয়া হবে তা আমাদের দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। সেটাতো আমরা সবার সমনে প্রকাশ করব না।’’
সূত্র: ডয়চে ভেলে