আলোচিত

রুপনগরে আগুন: নিঃস্ব বস্তিবাসী যাবে কোথায়?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে আগুনে পুড়ে নিঃস্ব হয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ৷ আট থেকে দশ হাজার পরিবার সেখানে বসবাস করতেন। নিঃস্ব এই মানুষগুলো এখন কোথায় যাবেন? কীভাবে চলবে তাঁদের দিন?

রূপনগর থানার পেছনের সড়ক থেকে সাত-আট ফুট নিচু জমিতে ঝিলপাড় বস্তির অবস্থান। এর চারদিকে আবাসিক বহুতল ভবন। ঝিলের ওপর কাঠের পাটাতনে বাঁশ, কাঠ ও টিন দিয়ে সাত-আট হাজার ঘর তোলা হয়। এর মধ্যে টিনের দোতলা ঘরও ছিল। শুক্রবারের আগুনে সেগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। একটি ঘরও অবশিষ্ট নেই। গৃহকর্মী, পোশাকশ্রমিক, রিকশাচালকসহ দিনমজুর শ্রেণীর লোকজনই সেখানে বসবাস করতেন।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা আপাতত আশপাশের স্কুল কলেজগুলোতে তাঁদের থাকতে দিয়েছি। প্রতিদিন খাবার দেওয়া হচ্ছে৷ ভ্রাম্যমান টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেওয়া হচ্ছে খাবার পানিও।” সিটি কর্পোরেশন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এটা করছে বলে জানান তিনি।

এই বস্তিবাসীদের কিভাবে পূর্ণবাসন করা হবে? জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘‘বস্তিবাসীর পুনর্বাসনের জন্য ২০১৭ সালে বাউনিয়া বাঁধে জায়গা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে ইতিমধ্যে পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়েছে। এখানকার ১০ হাজার পরিবারকে পর্যায়ক্রমে সেখানে স্থানান্তর করা হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রে যাদের ঠিকানা বস্তি উল্লেখ আছে, শুধু তাদেরই বাউনিয়া বাঁধে জায়গা দেওয়া হবে। যদিও বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়।’’

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ১৯৭৩ সালে রূপনগর থানার পেছনের ওই ঝিলের ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করে। তখন স্থানীয়রা এই নিচু জমিতে ময়লা ফেলতে শুরু করে। এতে ঝিলটি ভরে যায়। এরপর কাঠের পাটাতন দিয়ে বস্তিঘর গড়ে উঠতে শুরু করে। ২০০০ সালে পুরো জমি বস্তিতে ভরে যায়। শুরুর দিকে যারা বস্তিতে ছিলেন, তারা প্রথমে নিজেরা থাকার পাশাপাশি ঘর তুলে ভাড়া দিতে থাকেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি ও যুবদলের কিছু নেতাকর্মী বস্তির নিয়ন্ত্রণ নেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা ঘর তুলে ভাড়া দিতে শুরু করেন। তারা বস্তিতে অবৈধ পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে প্রতিটি ঘর থেকে দুই হাজার টাকা করে আদায় করছিলেন।

বস্তির বাসিন্দা নাসির মিয়া বলেন, ‘‘আমি হেলাল মিয়ার কেয়ারটেকার ছিলাম। তার ৩০টি ঘর আছে। এই ঘরগুলো থেকে আমি টাকা তুলে তাকে দিতাম। এর বিনিময়ে তিনি আমাকে থাকতে দিয়েছেন, আর প্রতিদিন এক-দেড়শ টাকা দিতেন। এভাবেই আমি চলেছি। আমার সবকিছু পুড়ে গেছে৷ ঈদের আগে ১১ হাজার টাকা দিয়ে একটি খাট কিনেছিলাম, সেটাও শেষ৷ কাপড়, টিভি সবকিছু শেষ। এখন সরকার খাবার দিচ্ছে, কেউ পাচ্ছে, কেউ পাচ্ছে না। এ দিয়েই আমাদের দিন পার হচ্ছে। সরকার আমাদের যেখানেই থাকতে দিক সেখানে আমরা যাব। আমরা সরকারের কাছে থাকার জায়গা চাই৷’’

বস্তিবাসীর ভাষ্য, ৮-১০ হাজার পরিবারের ৩০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ সেখানে বসবাস করতেন৷ আগুনে কি পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে ব্যাপারে কেউ ধারণা দিতে পারেনি৷ তবে ক্ষয়ক্ষতি তদন্তের জন্য একটি কমিটি করেছে ফায়ার সার্ভিস।

অন্যদিকে এই বস্তিতে মাদক ব্যবসার অভিযোগও ছিল। পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘‘মাঝে মধ্যেই ওই বস্তিতে মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযান চালাত। অনেক মাদক উদ্ধারও হয়েছে।’’ তবে বস্তির বাসিন্দা নাসির মিয়া বলেন, ‘‘কেউ করলে করতে পারে। আমরা এসব জানি না। অধিকাংশ মানুষ তো এখানে ভাড়া থাকতেন৷ তাদের অধিকাংশই শ্রমিক, দিনমজুর।’’

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button