রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: কেউ জানে না, প্রস্তুতিও নেই
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, আগামী ২২ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত যাবে তিন হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গার একটি দল। অথচ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না।
শনিবার পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে তেমন কোন প্রস্তুতিও দেখা যায়নি।
‘‘আমিও আপনার মতো পত্রিকায় খবর পড়ে জেনেছি,” এ কথা বলেছেন প্রত্যাবাসনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল কালাম। তিনি কক্সবাজারে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব।
‘‘আসলে গত ৯ আগস্ট থেকে সরকারি অফিস আদালত বন্ধ রয়েছে। ঈদ, শোক দিবস আর সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে এই লম্বা সময় ধরে বন্ধ। মধ্যে একদিন খোলা থাকলেও কোনো কাজ হয়নি। ফলে আমরা ছুটির মধ্যেই আছি। রবিবার অফিস খুললে বিষয়টি বুঝতে ও জানতে পারব,” বলেন তিনি।
আবুল কালাম যোগ করেন, ‘‘রয়টার্সের খবর পড়ে যেটা জানলাম, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তিন হাজার ৫৪০ জনের ব্যাপারে ছাড়পত্র দিয়েছে। এখন শুধু ছাড়পত্র দিলেই তো হবে না, প্রত্যাবাসনের সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত। যাদের ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে, তারা আসলে যেতে চায় কি-না, সেখানে যাওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে কি-না? এমন অনেক প্রশ্ন আছে। রবিবার অফিস খোলার পর পরিস্থিতি বোঝা যাবে।”
এদিকে, হঠাৎ করে প্রত্যাবাসনের খবরে উদ্বিগ্ন রোহিঙ্গারাও। তারা বলছেন, কীভাবে কী হচ্ছে তারা বুঝতে পারছেন না।
‘‘আমরা তো কিছুই জানি না। আমাদের এখনও কেউ কিছুই বলেনি,” টেকনাফে রোহিঙ্গাদের ২৪ নম্বর ক্যাম্পের প্রধান মো. আলম বলেন৷ ‘‘আমরা অবশ্যই নিজের দেশে ফিরে যেতে চাই। তার আগে আমাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে। সেখানে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যে জমি-বাড়িঘর ফেলে এসেছি, সেগুলো আমাদের বুঝিয়ে দিতে হবে। সেসব নিশ্চিত না করে আমাদের পাঠালেই আমরা যাব না।”
গত বছরের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। অভিযোগ আছে, তখনও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এ রকম তড়িঘড়ি করে দিন নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু মিয়ানমারে ফেরার পরিবেশ না থাকায় রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে রাজি হয়নি। এ কারণে প্রত্যাবাসন শুরু করার উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
এবারও কি তাহলে ভেস্তে যাওয়ার জন্যই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে? এমন প্রশ্ন তুলেছেন অনেক রোহিঙ্গা। তারা বলছেন যে, সামনে ২৫ আগস্ট, রোহিঙ্গাদের ঢল নামার বার্ষিকী এবং আগামী মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে শীর্ষ সম্মেলন। এ অবস্থায় তড়িঘড়ি করে মিয়ানমার প্রত্যাবাসনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। অথচ রোহিঙ্গাদের ফেরার পরিবেশ সৃষ্টিতে তাদের আগ্রহ নেই।
আবুল কালাম বলেন, ‘‘আমরা তাদের যে দ্বিতীয় তালিকাটি দিয়েছিলাম, সেটি থেকে তারা তিন হাজার ৫৪০ জনের ছাড়পত্র দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তালিকাটি পেলে বিষয়টি বুঝতে পারব। এখন লোকগুলোকে আলাদা করতে হবে। তাদের মতামত নিতে হবে। এই কাজে একটু সময় লাগবে। তবে ২২ আগষ্ট তারা যেতে চাইলে আমরা তাদের পাঠাতে প্রস্তুত আছি।”
রোহিঙ্গারা বলছেন, ‘‘মিয়ানমারের পররাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সবেমাত্র রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে গেছেন। সে সময় মিয়ানমারের সঙ্গে আরো আলোচনার প্রস্তাব দেয়া হলে তারা (মিয়ানমার প্রতিনিধিদল) রাজি হয়। কিন্তু সেই আলোচনার আগেই হঠাৎ প্রত্যাবাসনের দিন-তারিখ ঘোষণা করার অর্থ হলো- মিয়ানমারের উদ্দেশ্য ভালো নয়। এমন খারাপ উদ্দেশ্যের মধ্যে রোহিঙ্গারা আবারও অত্যাচারিত হতে ফিরে যেতে চায় না।”
সূত্র: ডয়চে ভেলে