আন্তর্জাতিক

কাশ্মীরে বিক্ষোভের ঘটনা স্বীকার করলো ভারত সরকার

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের পর কাশ্মীরের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষোভের যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছিল, প্রাথমিকভাবে ভারত সরকার সেগুলো ‘অতিরঞ্জিত’ ও ‘ভুল’ বলে দাবি করলেও মঙ্গলবার এক টুইটে শ্রীনগরে হওয়া একটি বিক্ষোভের সত্যতা স্বীকার করে তারা।

মঙ্গলবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের করা এক টুইটে ৯ই অগাস্ট শ্রীনগরের সাওরা অঞ্চলে হওয়া বিক্ষোভের বিষয়টি স্বীকার করা হলেও বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ কোনো গুলি ছোঁড়েনি বলে দাবি করা হয়।

বুধবার ভারত শাসিত কাশ্মীরের পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে দশদিন আগে কাশ্মীরের ওপর আরোপ করা ব্যাপক নিরাপত্তা কড়াকড়ি জম্মু থেকে তুলে নেয়া হয়েছে।

তবে কাশ্মীর উপত্যকায় অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য এই কড়াকড়ি আরোপিত থাকবে।

শ্রীনগরে এক সংবাদ সম্মেলনে রাজ্যটির একজন উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা মুনির খান কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন।

একই দিনে একটি ভারতীয় পত্রিকাকে কাশ্মীরের গভর্নর সত্যপাল মালিক জানান যে ১৫ই অগাস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের পর কাশ্মীরের ওপর চলমান ভারতীয় বাহিনীর নিষেধাজ্ঞার কড়াকড়ি তুলে নেয়া হবে।

কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপ ঘোষণা করার পর গত দশদিন ধরে কার্যত বিচ্ছিন্ন রয়েছে কাশ্মীর।

টেলিফোন, ইন্টারনেট এবং সব ধরণের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়া হয়। ঐ অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়।

ভারত সরকারের বক্তব্য পরিবর্তন
ভারত শাসিত কাশ্মীরকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর ৯ই অগাস্ট শুক্রবার হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ প্রকাশ করার একটি ভিডিও ফুটেজ বিবিসি’র হাতে আসে, যেটিকে ভারত সরকার দাবি করে যে সেরকম কোনো বিক্ষোভ আসলে হয়নি।

১০ই অগাস্ট ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে থেকে টুইট করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঐ ভিডিওগুলোকে অতিরঞ্জিত বলা হলেও ১৩ই অগাস্ট আরেকটি টুইটে শ্রীনগরের সাওরা অঞ্চলে হওয়া বিক্ষোভের বিষয়টি স্বীকার করা হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নতুন টুইটটিতে বলা হয়, “গণমাধ্যম শ্রীনগরের সাওরা এলাকার খবর প্রকাশ করেছিল। ৯ই অগাস্ট স্থানীয় একটি মসজিদ থেকে সাধারণ মানুষ যখন ঘরে ফিরছিলো, তখন কিছু দুষ্কৃতিকারী তাদের সাথে যোগ দেয় এবং পুলিশের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারে।”

পরে আরেকটি টুইটে বলা হয়, “আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধৈর্যের সাথে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করে।”

তবে ঐ টুইটে জোর দিয়ে দাবি করা হয় যে, অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপ করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা গুলি ছোঁড়ার ঘটনা ঘটেনি।

এর আগে ১০ই অগাস্ট রয়টার্সের একটি খবরের সমালোচনা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র একটি টুইট করেন।

ঐ টুইটে বলা হয়, “রয়টার্সের প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে ১০ হাজার মানুষ শ্রীনগরে বিক্ষোভ করেছেন। এটি সম্পূর্ণ ভুল এবং অতিরঞ্জিত খবর। শ্রীনগর ও বারামুলায় ছোট ছোট কিছু বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছে কিন্তু কোথাও ২০ জনের বেশি মানুষ জড়ো হয়নি।”

কাশ্মীরের বিক্ষোভ নিয়ে বিবিসি’র ভিডিও
৯ই অগাস্ট শুক্রবার শ্রীনগরের সাওরা এলাকার বিক্ষোভের একটি ভিডিও বিবিসি’র কাছে আসে।

বিবিসির সংবাদদাতা রিয়াজ মাসরুর শ্রীনগর থেকে এ ভিডিও পাঠান।

ভিডিওতে দেখা যায়, হাজার হাজার লোকের সেই বিক্ষোভে কাশ্মীরের স্বাধীনতার পক্ষে মুহুর্মূহু স্লোগান উঠছে। ওই বিক্ষোভে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও ছররা গুলিও নিক্ষেপ করে। ভিডিওতে গুলির শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে, আর দেখা যাচ্ছে বিক্ষোভকারীদের ছোটাছুটি।

বিক্ষোভকারীদের কারও হাতে কালো বা সবুজের ওপরে চাঁদতারা-আঁকা পতাকা, কারও হাতে ‘উই ওয়ান্ট ফ্রিডম’ লেখা পোস্টার দেখা যায়। মানুষের গলাতেও শোনা যাচ্ছে স্বাধীনতার দাবীতে স্লোগান। কয়েকজন এ ভিডিওতে বলছেন তারা কাশ্মীরের স্বাধীনতা চান।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button