নামাজের পরেই ফের শুনশান রাস্তাঘাট, কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে ঈদ পালন করল কাশ্মীর
গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর, থমথমে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়েই সোমবার ঈদ পালিত হল জম্মু-কাশ্মীরে। কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মোড়া উপত্যকা। ঈদ উপলক্ষে শ্রীনগর-সহ বেশ কিছু এলাকায় কার্ফু শিথিল করা হয় এ দিন। কিন্তু, দিনের শুরুর ছবিটা বদলে যায় পরে। বেলা বাড়তেই কার্যত শুনশান হয়ে পড়ে শ্রীনগর।
গত এক সপ্তাহ ধরেই মাঝে মাঝেই কার্ফু জারি হচ্ছে উপত্যকায়। রবিবারও, শ্রীনগরে কার্ফু জারি ছিল। ঈদের দিন অবশ্য তা তুলে নেওয়া হয়। তবে, বড়ো জমায়েত করে প্রার্থনার অনুমতি দেওয়া হয়নি। বদলে স্থানীয় মসজিদে ছোট ছোট করে জমায়েতের অনুমতি দেওয়া হয়। এ দিন সকালে শ্রীনগরের রাস্তায় সাধারণ মানুষের ভিড় নজরে আসে। বহু মানুষই ভিড় জমান মহল্লার মসজিদে। প্রার্থনার পর পরস্পরের সঙ্গে কুশল বিনিময়ও করেন তাঁরা। সকাল বেলার ছবিটা দেখে অবশ্য মনে হয় ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছে কাশ্মীর। এরপর অবশ্য় ধীরে ধীরে জনশূন্য হয়ে পড়তে থাকে শ্রীনগর।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা, মেহবুবা মুফতি-সহ উপত্যকার বেশ কয়েকজন রাজনীতিককেও স্থানীয় মসজিদে প্রার্থনার অনুমতি দেওয়া হয়। এদিকে, কাশ্মীরের জনজীবন কতটা স্বাভাবিক তা তুলে ধরতে, সংবাদ মাধ্যমের হাতে এ দিনের নানা ছবিও তুলে দেন সরকারি আধিকারিকরা।
এ দিন কার্যত নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মুড়ে ফেলা হয়েছে উপত্যকাকে। সকালে রাস্তার কাঁটাতারের বেড়া সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে, শ্রীনগরে রাস্তার দু’ধারেই নিরাপত্তাকর্মীরা মোতায়েন ছিলেন। বিক্ষোভের আশঙ্কায় মজুত রাখা হয়েছিল জলকামানও।
জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের দাবি, উপত্যকায় নির্বিঘ্নেই ঈদ পালিত হয়েছে। টুইটে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের তরফে ইমতিয়াজ হুসেন নামে এক আধিকারিক দাবি করেছেন, ‘এ দিন হাজার হাজার মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে ও শান্তিতে ঈদের প্রার্থনা সারেন।’ সাধারণ মানুষকে ঈদের শুভেচ্ছাও জানিয়েছে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। পুলিশের তরফে মিষ্টিও বিতরণ করা হয়।
জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যসচিব রোহিত কংশাল বলেছেন, ‘‘জম্মুতে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ ইদগাহে প্রার্থনা সারেন। এ ছাড়া, শ্রীনগর, বারামুলা, রামবাণ, অনন্তনাগ, শোপিয়ান ও অবন্তীপোরা থেকেও সুষ্ঠু ভাবে প্রার্থনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।’’
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, অনন্তনাগ, বদগাম, বারামুলা ও বন্দিপোরের সর্বত্র নির্বিঘ্নে প্রার্থনা মিটেছে। বারামুলার জামিয়া মসজিদে প্রায় ১০ হাজার মানুষের জমায়েত হয়েছিল বলেও দাবি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
প্রার্থনা শেষ হওয়ার পর অনেক জায়গায় নতুন করে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে বলেও খবর মিলেছে।
শ্রীনগরের ডেপুটি কমিশনার শাহিদ চৌধুরি বলেছেন, ‘‘এ দিন সকালে ঈদের প্রার্থনার পর উপত্যকার বহু জায়গাতেই ফের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।’’ টুইটে তিনি দাবি করেন, সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য, এ দিন শ্রীনগরে ব্যাঙ্কের শাখা খোলা রয়েছে। আড়াইশোটির বেশি এটিএমও খোলা রয়েছে। ছ’টি মাণ্ডি থেকে আড়াই লক্ষ পশুও বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। সব্জি, গ্যাস সিলিন্ডার ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের তরফে মোবাইল ভ্যান নামানো হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন আধিকারিকরা।