ইসলামধর্ম

কোরবানির গুরুত্ব ও তাৎপর্য

গাজীপুর কণ্ঠ, ধর্ম ডেস্ক : সোমবার ১০ জিলহজ সারাদেশে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহার অন্যতম অনুষঙ্গ কোরবানি। ইসলামে জিলহজ মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। এই মাসে একই সঙ্গে রয়েছে পবিত্র হজ এবং কোরবানির ইবাদত। দুটো ইবাদতেরই লক্ষ্য আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করা এবং ত্যাগের সাধনা করা।

শনিবার হাজিদের ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে আরাফাতের ময়দান মুখরিত করে হজ পালিত হয়েছে। দুনিয়ার নানা প্রান্ত থেকে পবিত্র নগরী মক্কায় সমবেত হাজিরা রবিবার কোরবানির মধ্য দিয়ে ঈদুল আজহা পালন করেন।

প্রায় চার হাজার বছর আগে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হজরত ইব্রাহিম (আ.) নিজ পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) কে কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.) এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়।

হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায় নিজেদের ত্যাগ ও আনুগত্য প্রমাণের মাধ্যমে আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ লাভের আশায় ১০ জিলহজ পশু কোরবানি করে থাকেন।

কোরবানি করা একটি সুন্নতে ইব্রাহিমি। রাসুল (সা.) সামর্থ্যবানদের জন্য কোরবানি আবশ্যক করে দিয়েছেন। আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে, ‘(হে নবী!) আপনি আপনার প্রভুর উদ্দেশে সালাত আদায় করুন এবং কোরবানি করুন।’ (সুরা কাওসার)

অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি, যাতে তাদের প্রদত্ত চতুষ্পদ জন্তুর ওপর তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করে।’ (সুরা হজ : ৩৪)

কোরবানি বিষয়ে রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি তার উত্তর দিয়েছেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, সাহাবায়ে কিরামরা একদিন রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করল, ‘কোরবানি কী?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘এটা তোমাদের পিতা ইব্রাহিমের আদর্শ বা সুন্নত।’

সাহাবারা বললেন, ‘হে রাসুল (সা.) এ কোরবানি দ্বারা আমাদের লাভ কী?’ রাসুল বললেন, ‘কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকি। কোরবানি মূলত ওয়াজিব হলেও এটি সবার জন্য বাধ্যতামূলক নয়। যেসব লোক জাকাত ও সাদকাতুল ফিতর দিয়ে থাকে কিংবা যার ওপর জাকাত ওয়াজিব একমাত্র তাদের ওপরই কোরবানি ওয়াজিব। এ ক্ষেত্রে যদি এর বাইরে কেউ কোরবানি করতে চায়, তা পারবে এবং নিয়তের ওপর ভিত্তি করে অগণিত সওয়াব পাবে।’

কোরবানি যেহেতু মুসলিম জাতির একটি ঐতিহ্য, তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম। হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মর্যাদাবান দিন হচ্ছে কোরবানির দিন।’ (আবু দাউদ)

তেমনি অন্য একটি হাদিস অনুযায়ী, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোরবানির দিনে মানবসন্তানের কোনো নেক কাজই আল্লাহর কাছে তত প্রিয় নয় যত প্রিয় কোরবানি করা। কোরবানি করা পশুগুলোর শিং, পশম ও ক্ষুর কিয়ামতের দিন (আমলনামায়) এনে দেওয়া হবে। কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে ঝরার আগেই আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়। সুতরাং তোমরা আনন্দচিত্তে কোরবানি করো। (তিরমিজি)

পৃথিবীর সম্পদ সবার জন্য আকর্ষণীয়। এ মোহ কিছুটা হলেও কমে যায় কোরবানি দ্বারা। কারণ কোরবানির পশু ক্রয় এবং গরিব, অসহায়কে মাংস দানের মাধ্যমে মানুষের মাঝে ভালোবাসা তৈরি হয়। এর মাধ্যমে জাতিগত ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় হয়। ফলে মানুষ পরকালমুখী হওয়াসহ যাবতীয় বিষয়ে আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করতে সামর্থ্য হয়। আল্লাহ বলেছেন, ‘হে ইমানদাররা তোমাদের সন্তানাদি ও সম্পদ যেন আল্লাহর স্মরণ থেকে তোমাদের গাফিল বা অবচেতন করে না রাখে। যারা এতে অবচেতন হবে তারাই মূলত ক্ষতিগ্রস্ত।’

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button