খাবার সংকটে কাশ্মীরবাসী
গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে চলছে ১৪৪ ধারা। যা গত রবিবার থেকে জারি করে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার আর পরের দিন সোমবার বাতিল করা হয় রাজ্যটিকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া সংবিধানের ৩৭০ ধারা। এর ফলে অঞ্চলটিতে বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি,মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত সেনা।
টানা তিনদিনের এই অচলাবস্থায় সেখানে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এর জন্য সবচেয়ে বেশি ভুক্তোভোগী নিম্নবিত্ত ও দিনমজুরা। খাবারের স্বল্পতা ও এটিএম বুথ কাজ না করায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়ে গেছে। মূলত গত সোমবার থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকা এবং ১৪৪ ধারা জারি করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে কাশ্মীরবাসীর এই দুর্দশার চিত্র উঠে এসেছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়। এদিকে জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে পার্লামেন্টে একটি বিলও পাস করা হয়েছে। এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত সেনা। গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেখানকার শতাধিক স্থানীয় নেতাকে। ইন্টারনেট-মোবাইল পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি।
আরো বলা হয়, কাশ্মীরের সঙ্গে বাইরের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ। ব্যাংক ও এটিএম বুথগুলোতেও টাকা নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে দোকানগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে কাশ্মীরবাসী। ৭২ ঘণ্টা পার না হতেই তাই দোকানগুলোতেও শেষ হয়ে গেছে খাবার। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামও বেড়ে গেছে বহুগুণ। তিনদিন ধরে চলা এই অচলাবস্থায় না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে নিম্নবিত্ত অনেক কাশ্মীরিকে।
সানা নামের এক ২৩ বছরের শিক্ষার্থী বলেন, ‘তার কাছে পাঁচ ছয়জন ব্যক্তি এসে দাবি করেছিলো তাদের পরিবার না খেয়ে আছে।’
সানা আরো বলেন, ‘মুদির দোকানে যেন মানুষের বন্যা ছিলো। মসলা ও শাকসবজির দোকানেও ছিলো ভিড়। হাজার হাজার মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলো। এছাড়া গ্যাস স্টেশনগুলোতেও ছিল গাড়ির লম্বা লাইন। ব্যাংকগুলোতেও টাকা শেষ হয়ে গেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই অচলাবস্থায় অনেক নৈরাজ্য ও দ্বিধা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি খুবই ভয়াবহ ও দুঃখজনক। বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে সবাই।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’র উপ-সম্পাদক মুজামিল জলিল টেলিগ্রাফকে বলেন, ‘তারা শ্রীনগরের সব এটিএমেই খোঁজ নিয়ে দেখেছেন টাকা নেই। অনেকেই এখন হাতে হাতে টাকা নিয়ে ঘুরছে। আর দরিদ্র্য গোষ্ঠীর কোনো জমা টাকাও নেই।’
এদিকে মানবাধিকার কর্মীরা শঙ্কা প্রকাশ করেন, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রেখে আন্দোলনকারী ও বিরোধী পক্ষের নেতাকে গ্রেপ্তার করছে কেন্দ্রীয় সরকার।
স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত শতাধিক গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাহও রয়েছেন। বিরোধী দলের অভিযোগ, সরকার ভারতের জনতাত্ত্বিক নকশাই পরিবর্তন করে দিতে চাইছে।
তবে খাদ্য সংকটের ঘটনাকে অস্বীকার করে ভারতের এক শীর্ষ কর্মকর্তা দাবি করেন, কাশ্মীর উপত্যকায় তিন মাসেরও বেশি খাবার মজুত রয়েছে।