আন্তর্জাতিক

যেভাবে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে কাশ্মীরের তরুণরা

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারত শাসিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত প্রকাশ করার আগে থেকেই কাশ্মীরে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয় এবং ঐ অঞ্চলকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। গত কয়েকদিনে কাশ্মীর থেকে কিছু বিক্ষোভের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ঢিল ছুঁড়ে এবং মিছিল করে মানুষজন বিক্ষোভ করেছে।

অনুচ্ছেদ ৩৭০ এর বৈধতা এবং এর বিলোপের সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নের বিষয়ে গত কয়েকদিনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুমুল তর্ক-বিতর্ক হলেও এ বিষয়ে যাদের মতামত সবচেয়ে গুরুত্ব বহন করার কথা ছিল – কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ – তাদের বক্তব্যই উঠে আসেনি।

ভারত শাসিত কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে স্থানীয়রা বলেন, যেখানে ভারত সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশিত হয়।

অতিরিক্ত নিরাপত্তা উঠিয়ে নেয়ার সাথে সাথে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ করতে রাস্তায় নেমে আসবে বলে মনে করেন সেখানকার বাসিন্দারা।

ক্ষমতাসীন বিজেপি’র একজন সিনিয়র মুসলিম নেতাও নাম প্রকাশ না করার শর্তে একই মনোভাব ব্যক্ত করেন।

“কাশ্মীরীরা ঘটনার আকস্মিকতায় এখনও খানিকটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে। খুব শীঘ্রই উপত্যকা ক্ষোভে ফেটে পড়বে বলে মনে হচ্ছে।”

শ্রীনগরের বাইরে কাশ্মীরের অন্যান্য অংশেও মানুষের মধ্যে একই ধরণের ক্ষোভ কাজ করছে। উত্তর কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলায় স্থানীয়দের সাথে কথা বলে তেমনই প্রমাণ পান বিবিসি’র আমির পীরজাদা।

কিন্তু ভারত শাসিত কাশ্মীরের মানুষের মধ্যে এত তীব্র ভারত বিদ্বেষ কেন?

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের সময় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর ছিল হিন্দু রাজা হরি সিংয়ের অধীনে। দুই দেশ স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তানের সশস্ত্র গোষ্ঠীরা কাশ্মীরে প্রবেশের চেষ্টা করলে তিনি ভারতের সাহায্য চান।

সেসময় ভারত-পাকিস্তান প্রথম দফা যুদ্ধ হয়। কাশ্মীরের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ভারত দখল করে নেয়।

এরপর কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ১৯৬৫ সালে বড় ধরণের যুদ্ধে জড়ায় ভারত ও পাকিস্তান।

১৯৭২ সালে সিমলা চুক্তির মাধ্যমে ভারত শাসিত কাশ্মীর এবং পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের মধ্যে যুদ্ধবিরতি রেখাকে ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় দুই দেশ।

১৯৮৯ সাল থেকে কাশ্মীর উপত্যকায় ভারত শাসনের বিরুদ্ধে শুরু হয় সশস্ত্র লড়াই।

এরপর ৯০’এর দশকে নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর সাথে জঙ্গি এবং কাশ্মীরের বেসামরিক নাগরিকদের সশস্ত্র সংঘাতে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়। কাশ্মীরীদের মধ্যে তীব্র রুপ নিতে থাকে ভারতের শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ।

কাশ্মীরের অনেক মানুষের মধ্যেই তখন ভারতের শাসনের চেয়ে স্বাধীনতা বা পাকিস্তানের সাথে অন্তর্ভূক্তিকে প্রাধান্য দেয়। কাশ্মীরের তরুণদের মধ্যে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়তে থাকে।

ভারত সবসময় অভিযোগ করে এসেছে যে কাশ্মীরের জঙ্গিবাদের উত্থানের পেছনে সহায়তা করেছে পাকিস্তান, যেই অভিযোগ পাকিস্তান সবসময়ই অস্বীকার করে এসেছে।

যেভাবে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে কাশ্মীরের তরুণরা
একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দশকে কাশ্মীরে চলতে থাকা সহিংসতা এবং উত্তেজনা ১৯৮০ বা ১৯৯০’এর দশকের তুলনায় কিছুটা কম থাকলেও একেবারে স্তিমিত হয়ে যায়নি।

২০১৩ সালে ভারতের সংসদে বোমা হামলার দায়ে কাশ্মীরের এক জঙ্গি নেতা আফজাল গুরু’র ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর থেকে কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী জঙ্গি সংগঠনগুলো সক্রিয় হতে শুরু করে – ৯০’এর দশকে বা একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে যেসব জঙ্গি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হতো মূলত পাকিস্তান ভিত্তিক লস্কর ই-তাইয়েবা বা জইশ ই-মুহম্মদের দ্বারা।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে যেখানে ২৮জন কাশ্মীরী বেসামরিক নাগরিক জঙ্গি সংগঠনের সাথে যোগ দিয়েছিল, ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০ জনে এবং ২০১৫’ তে সেই সংখ্যা হয় ৬৬।

জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো ও ভারতীয় নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘাত চরম আকার ধারণ করে ২০১৬ সালে বুরহান ওয়ানি নামের এক জঙ্গি নেতার মৃত্যুর পর।

২২ বছর বয়সী বুরহান ওয়ানি’র ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা ছিল কাশ্মীরের মানুষের মধ্যে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর গুলিতে তার মৃত্যুর পর থেকে সেখানকার জঙ্গিগোষ্ঠী এবং নিরাপত্তা রক্ষীদের মধ্যে সংঘাত তুঙ্গে ওঠে।

শুধু ২০১৮ সালেই সেনা সদস্য, বেসামরিক নাগরিক ও সন্দেহভাজন জঙ্গিসহ মোট পাঁচশো’র বেশি মানুষ মারা যায় কাশ্মীরের বিভিন্ন অঞ্চলে।

এই জঙ্গিদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান তরুণদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করতে বড় ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়।

২০১৬ সালে লস্কর ই-তৈয়বার কমান্ডার আবু কাসিমের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ জমায়েত হয়েছিল। হিজবুল মুজাহিদিনের নেতা বুরহান ওয়ানির শেষকৃত্যে মানুষের উপস্থিতি ছিল তার চেয়েও বেশি।

প্রতিটি শেষকৃত্যেই নিহতকে ‘নায়কোচিত’ সম্মানের সাথে বিদায় জানানো হয়। মৃতের কপালে চুমু খেয়ে কাশ্মীর স্বাধীন করার প্রতিজ্ঞা করে কাশ্মীরী কিশোর-তরুণরা।

সমাধিস্থ করার সময় বন্দুকের গুলি চালিয়ে যোদ্ধার সম্মান জানানো হয় নিহত ব্যক্তিকে।

কিশোর-তরুণদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত ভিত্তিতে এসব শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দেন। কাশ্মীরী কিশোরদের অনেকেই এরকম শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হন জঙ্গিবাদে জড়ানোর।

আর ৯০’এর দশকের জঙ্গিদের তুলনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে কাশ্মীরের বর্তমান জঙ্গিদের গ্রহণযোগ্যতাও অনেক বেশি, রীতিমতো নায়কের মর্যাদা পায় তারা।

কারণ বর্তমানের জঙ্গিরা সেসময়কার জঙ্গিদের মত সাধারণ মানুষের ক্ষতি করে না।

তারা স্থানীয় ঝামেলায় জড়ায় না, স্থানীয় সরকারের কার্যক্রমেও বাধা দেয় না বা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপহরণের মত কাজও করে না।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Откройте для себя новые лайфхаки, рецепты и советы для огородников на нашем сайте. Узнайте, как приготовить вкусные шведские блюда и ухаживать за огородом, чтобы получить обильный урожай всего, что вам нужно. Наши полезные статьи помогут вам стать настоящим экспертом в кулинарии и огородничестве. Погрузитесь в мир шведских традиций и секретов успешного огородничества прямо здесь! Du gjorde fel: vilken Lösningen för läckande vatten från Värdefulla rester: Så får Skillnaden mellan Pepsi och Coca-Cola: en förvånande sanning som Крупные супермаркеты обманывают с овощами: эксперт предупреждает Отсутствие песка и отсутствие соли: реагенты для льда на Den verkliga funktionen av öglan på baksidan av skon Otroligt nog fungerar det: varför man hänger Hur man tar bort en Hemlagad rökt lax: enkel och god Varför behöver du ett Действительно ли только немногие люди используют Kan man installera en vedspis i en lägenhet: förberedelser inför 10 smarta knep för att organisera ditt kök och spara tid i vardagen" "Enkla och goda recept för att laga vegetariska rätter hemma" "5 sätt att odla färska grönsaker och örter i din trädgård