জাতীয়

ঢাকায় মশা কমছে না কেন?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের কারণে এখন ঢাকার দুই সিটিতে মশা নিধনে সাজ সাজ রব। বিদেশ থেকে মশা মারার নতুন ওষুধ আনা হচ্ছে৷ কিন্তু মশা মরছে না। উল্টো মশা আরো বাড়ছে বলে জরিপে জানা গেছে৷ কেন এমন হচ্ছে?

গত ১৭ জুলাই থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দুই সিটি কর্পোরেশনে এডিসসহ অন্যান্য মশা নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করে। জরিপের কাজে এক হাজার বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তাতে পাচ’শ বাড়িতে গড়ে ২০৭টি এডিস মশা পাওয়া গেছে। চলতি বছরের ৩ থেকে ১১ মার্চ ওইসব বাড়িতে পরিচালিত আরেকটি জরিপে এডিস মশা পাওয়া গিয়েছিল গড়ে ৩৬টি। একইভাবে এডিস মশার লার্ভাও বেড়েছে।

আর সার্বিকভাবে মার্চে মাসের জরিপে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রতি বাড়িতে গড়ে মশার উপস্থিতি ছিলো ২৬ আর উত্তর সিটিতে এ সংখ্যা ছিল ২১। চার মাসের মাথায় তা হয়েছে যথাক্রমে ৭৯ এবং ৫৭।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক ডা. সানিয়া তহিমনা বলেন, ‘‘ জুলাই মাসে করা এ বছরের দ্বিতীয় দফা জরিপে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে ঢাকায় মশার উপস্থিতি গত মার্চ মাসের তুলনায় অনেক বেড়েছে। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য আমরা এখনো বিশ্লেষণ করছি। এটা শেষ হলে আমার পুরো রিপোর্ট প্রকাশ করতে পারব।’’

এ সময়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের কারণে মশার ওষুধ ছিটানোসহ নানা ধরনের তৎপতার পরও কেন মশা বাড়ছে – এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এটা মশার প্রজননের উত্তম সময়। বৃষ্টি আছে, আর্দ্রতা এবং উষ্ণতাও আছে৷ আর পানি জমছে ড্রামে, টবে, প্লাস্টিকের বোতলসহ নানা জায়গায়৷ ফলে এডিসসহ সব মশারই বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে।’’

তিনি বলেন, ‘‘এখন যেটা করা হচ্ছে তা হলো, ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। কিন্তু এই ওষুধ দিয়ে এত মশা, লার্ভা ধ্বংস করা সম্ভব নয়৷ মশার সোর্স ধংসকরতে হবে। মশা যাতে জন্মাতে না পারে তার জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে।’’

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এখন যে মশা মারার ওষুধ ব্যবহার করছে তা আগের এবং ভারত থেকে আমদানি করা। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ভাণ্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘‘আমরা দুই ধরনের ওষুধ ব্যবহার করছি। একটি সকালে ড্রেনে বা যেখানে পানি জমেছে সেখানে লার্ভা মারার জন্য, আর অন্যটি ব্যবহার করা হচ্ছে দিনের বেলায়, পূর্ণবয়স্ক মশা মারার জন্য।’’

তিনি দাবি করেন, ‘‘তিন জায়গায় পরীক্ষা করে দেখা গেছে আমাদের এই ওষুধে শতকরা ৯৮ ভাগ মশা মরে।’’

তবে, শুক্রবার ভারতের বায়ার কর্পোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে থেকে আনা আরেকটি ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করে মশা নিধনে সফল হয়নি দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। হাইকোর্টের নির্দেশে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বিদেশ থেকে আরো চার ধরনের মশা নিধনের ওষুধের নমুনা নিয়ে আসছে। তবে কোন দেশ থেকে এ ওষুধ আনা হচ্ছে তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম অবশ্য চীন থেকে মশা মারার ওষুধ আনার ঘোষণা দিয়েছেন। দুই সিটি কর্পোরেশনই জানায় ওষুধের নমুনা দিয়ে মশা মরে কিনা পরীক্ষা করা হবে। মশা নিধনে ওষুধ কার্যকর প্রমাণিত হলে, এসব ওষুধ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং কীটতত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘‘এখন মশা মারার ওষুধ ভারত ও চীনেই বেশি তৈরি হয়৷ তবে তারা অ্যামেরিকা ও ইউরোপের কারিগরি সহয়তা নেয়।’’

মশার ওষুধ কার্যকর না হওয়ায় সরকারও চিন্তিত৷ এজন্য কৃষি মন্ত্রনালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগকে এর কারণ অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মারুফ হোসেনকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এখন যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে তাতে মশা কেন মরছে না তা আমি তদন্ত শেষে বলতে পারব। তবে সাধারণভাবে ওষুধের মান, মাত্রা, পরিবেশ এসবের ওপর মশা মরা নির্ভর করে। আর মশার একটি বৈশিষ্ট হলো যে তার শরীরে দ্রুত রেসিসটেন্স তৈরি করতে পারে। ফলে সেটা বুঝে ওষুধ পরিবর্তন বা মাত্রা পরিবর্তন করতে হয়।’’

তিনি বলেন, ‘‘সব ওষুধ মশা মারার জন্য নয়। সাধারণ বাড়িঘরে মশা নিধনের যে স্প্রে বা কয়েল ব্যবহার করা হয় তাতে মশা চলে যায় বা অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এতে যদি মশা মরত তাহলে তা মানবদেহের জন্যও চরম ক্ষতির কারণ হত। সাধারণ মশা বা মশার লার্ভা মারার জন্য ড্রেন, ডোবা বা মানুষের সংস্পর্শে আসেনা – সেসব জায়গা ওষুধ ছিটানো হয় বা স্প্রে করা হয়। ফগিং মেশিন দিয়ে এডাল্ট মশা তাড়ানো হয়, মারাও হয়৷ এখন দেখতে হবে আসলে কোন কাজে কোন ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে।’’

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button