অর্থনীতিআলোচিত

মেঘনা ও সিটি গ্রুপের বিরুদ্ধে অনৈতিক সুবিধার অভিযোগ এনবিআরের

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : কর অবকাশ সুবিধা নিয়ে নিজস্ব অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভোগ্যপণ্য উৎপাদন করছে মেঘনা ও সিটি গ্রুপ। অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের সনদ নিয়ে অঞ্চলের বাইরে তাদের অন্যান্য শিল্পেও একই সুবিধা নিচ্ছে বলে প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। একে অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত শিল্পে সরকারের দেয়া প্রণোদনার অপব্যবহার বলে মনে করছে রাজস্ব আহরণকারী সংস্থাটি।

এনবিআর বলছে, এ সুবিধা কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো বাজার ভারসাম্যও নষ্ট করছে। তাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থাপিত ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে কর সুবিধা না দেয়ার প্রস্তাব করেছে তারা। এজন্য আইন পরিবর্তনে বেজাকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে এনবিআর।

অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের শুল্ক-কর সুবিধার অপব্যবহার বিষয়ে ১৬ জুলাই এনবিআরে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়, আইন অনুযায়ী অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প গড়ে তোলা হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অগ্রিম আয়কর (এআইটি), আগাম কর (এটি) ও আয়কর অব্যাহতি পায়। আর এ সুবিধা নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলভুক্ত দুটি প্রতিষ্ঠান ভোজ্যতেল, চিনি, আটা, ময়দা স্থানীয় বাজারে কম দামে সরবরাহ করছে। অথচ অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী অন্য কোম্পানিগুলোকে সব ধরনের কর পরিশোধ করতে হয়। তাই তাদের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য বেশি পড়ে। এতে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক বাজারের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দুটি প্রতিষ্ঠান ভোগ্যপণ্যের বাজারের ভারসাম্য নষ্ট করছে। এতে অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। এ বৈষম্য বন্ধ ও ভোগ্যপণ্যের বাজারে ভারসাম্য রাখার জন্য প্রয়োজনীয় আইন পরিবর্তন ও সংশোধন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সিটি ও মেঘনা গ্রুপ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা স্থাপন করে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে জানা গেছে। সিটি ইকোনমিক জোন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রায় ১০০ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে। সিটি ইকোনমিক জোনে সিটি অটো রাইস ও ডাল মিলস, সিটি এডিবল অয়েল, রূপসী সুগার মিল, রূপসী ফ্লাওয়ার মিল, রূপসী ফিড মিল ও সিটি সিড ক্রাশিং ইন্ডাস্ট্রিজ রয়েছে। এর মধ্যে সিটি অটো রাইস অ্যান্ড ডাল মিলস ও সিটি এডিবল অয়েল ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদনে রয়েছে। একই বছরের ডিসেম্বর থেকে সিটি সিড ক্রাশিং ইন্ডাস্ট্রিজ বাণিজ্যিক উৎপাদনে রয়েছে।

অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের সনদ নিয়ে তার অপব্যবহারের বিষয়ে জানতে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি তারা অবগত নন বলে জানান।

মেঘনা গ্রুপের অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে দুটি—মেঘনা ইকোনমিক জোন ও মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় ২৪৫ একর জমি নিয়ে মেঘনা ইকোনমিক জোনে স্থাপিত মেঘনা এডিবল অয়েলস রিফাইনারি লিমিটেড ও সোনারগাঁও ফ্লাওয়ার অ্যান্ড ডাল মিলস লিমিটেড গত বছরের ৩০ মে উদ্বোধন করা হয়। মেঘনা এডিবল অয়েলসে ৩ কোটি ৫৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এ কারখানায় পরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পাম অয়েল উৎপাদন করা হয়। এখানে উৎপাদিত ভোজ্যতেলের ২০ শতাংশ ভারত ও নেপালে রফতানি হয়।

সোনারগাঁও ফ্লাওয়ার অ্যান্ড ডাল মিলসে ২ কোটি ৯৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। এ কারখানায় আটা, ময়দা ও ডাল উৎপাদন করা হয়। এখান থেকে উৎপাদিত ভোগ্যপণ্যেরও ২০ শতাংশ ভারত ও নেপালে রফতানি করে গ্রুপটি।

এছাড়া মেঘনা সুগার রিফাইনারি লিমিটেডে বিনিয়োগ হয়েছে ৮ কোটি ১৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার। পরিশোধিত চিনি উৎপাদন করা হয় এ কারখানায়। আর সোনারগাঁও সিডস ক্রাশিং মিলস লিমিটেডে বিনিয়োগ হয়েছে ১ কোটি ৬২ লাখ ৮০ হাজার ডলার। এ কারখানায় উৎপাদিত ভোগ্যপণ্যের ৩০ শতাংশ ভারত ও নেপালে রফতানি করা হয়।

জানতে চাইলে মেঘনা গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সুমন চন্দ্র ভৌমিক বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা বেজার সঙ্গে সভা করেছি। এক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো অর্থনৈতিক অঞ্চলভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য যে প্রণোদনার ঘোষণা আছে, সেগুলো যদি তুলে নেয়া হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই ইকোনমিক জোন বাস্তবায়নের ওপর এর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অর্থাৎ প্রণোদনা উঠিয়ে নিলে অর্থনৈতিক অঞ্চল দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে যে সাড়া পাচ্ছে তা আর পাবে না। ফলে বিনিয়োগকারীরা অর্থনৈতিক অঞ্চলবিমুখ হবেন। বিনিয়োগের রিটার্ন যেখানে ভালো, সেখানেই তো বিনিয়োগকারীরা যাবেন।

সুবিধার অপব্যবহার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুমন চন্দ্র ভৌমিক বলেন, এ-সংক্রান্ত উত্থাপিত প্রশ্নগুলো একেবারেই অমূলক ও ভ্রান্ত। আমাদের যখন এনবিআর থেকে ডাকা হয়েছে আমরা বলেছি, অভিযোগটি যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে, তাহলে আমরা ব্যবসা ছেড়ে দেব। এ বিষয়ে আমরা শতভাগ নিশ্চিত। আমরা কোনো নন-কমপ্লায়েন্সের মধ্যে নেই। আমাদের ক্ষেত্রে এ-সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ব্যবসায় প্রতিহিংসাবশত কেউ এ ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করে থাকতে পারে।

জানতে চাইলে মো. হারুনুর রশিদ বলেন, কর সুবিধা দেয় এনবিআর তথা অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। পৃথিবীর সব অর্থনৈতিক অঞ্চলেই এ ধরনের সুবিধা দেয়া হয়। বিভিন্ন দেশের মধ্যে এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতাও দেখা যায়। অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্পপ্রতিষ্ঠান কম দামে পণ্য বিক্রি করতেও পারছে। অর্থাৎ এ ধরনের শিল্পের সুবিধা প্রকৃতপক্ষে পাচ্ছে ভোক্তারা। কাজেই কোনো সমস্যার বিষয় এখানে নেই। তাই সমাধানের প্রশ্নও নেই।

 

সূত্র: বণিক বার্তা

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button