আলোচিত

পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন বন্ধের নির্দেশের প্রভাব কতটুকু?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : উচ্চ আদালত রবিবার ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণন পাঁচ সপ্তাহের জন্য বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। সোমবার শুধু মিল্কভিটার ব্যাপারে আদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছে।

পাস্তুরিত দুধে অ্যান্টিবায়োটিক আর সিসা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই দুধে ক্ষতিকর উপাদান আছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য হাইকোর্ট পাঁচ সপ্তাহের জন্য ১৪টি প্রতিষ্ঠানের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। বিএসটিআইতে খোঁজ নিয়ে জানা যায় পাস্তুরিত দুধ উৎপাদনের জন্য এই ১৪টি প্রতিষ্ঠানেরই অনুমোদন আছে। তাই তাদের উৎপাদন বন্ধ হলে পাস্তুরিত দুধের উৎপাদনই বন্ধ হয়ে যায়।

রবিবার যে ১৪টি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় সেগুলো হলো: বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড (মিল্ক ভিটা),আফতাব মিল্ক অ্যান্ড মিল্ক প্রোডাক্ট লিমিটেড (আফতাব), প্রাণ ডেইরি লিমিটেড (প্রাণ মিল্ক), ব্র্যাক (আড়ং মিল্ক),আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ (ফার্ম ফ্রেশ),অ্যামেরিকান ডেইরি লিমিটেড (মু), বারো আউলিয়া ডেইরি (ডেইরি ফ্রেশ), ড্যানিশ ডেইরি ফার্ম লিমিটেড (আয়রান),ইছামতী ডেইরি লিমিটেড (পিউরা),ইগলু ডেইরি লিমিটেড (ইগলু), উত্তরবঙ্গ ডেইরি খামার (মিল্ক ফ্রেশ),জিহান মিল্ক অ্যান্ড ফুড প্রসেসিং,শিলাইদহ ডেইরি (আলট্রা মিল্ক) ও পূর্ব বাংলা ডেইরি প্রডাক্টস (আরওয়া)।

বাংলাদেশে প্রতিদিন মাথাপিছু দুধের চাহিদা ২৫০ মিলিলিটার হলেও মাথাপিছু দুধের প্রাপ্যতা ১৫৮ মিলিলিটার। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের এক গবেষণায় বলা হয়েছে দেশের বাজারে পাস্তুরিত দুধের সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী মিল্কভিটা।  তাদের মর্কেট শেয়ার ৫২.০৮ ভাগ। আড়ং-এর ২০.৮৩ ভাগ৷ তার পরেই প্রাণের অবস্থান ১০.৪২ ভাগ। এই তিনটি প্রতিষ্ঠানই মূলত পাস্তুরিত দুধের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের মোট মার্কেট শেয়ার ৮৩ ভাগেরও বেশি।

গবেষণায় আরো বলা হয়, দেশে তরল দুধের চাহিদা বছরে এক কোটি ৪০ লাখ মেট্রিক টন হলেও উৎপাদন হয় ৬০ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন। ঘাটতি রয়েছে ৭৯ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। আর উৎপাদিত দুধের ১০ ভাগের বেশি পাস্তুরিত নয় বলে জানান গবেষকরা।

ট্যারিফ কমিশনের হিসাব কয়েক বছর আগের তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে বলে ট্যারিফ কমিশনের উপ প্রধান ইউসুফ আলী মজুমদার জানান। তিনি বলেন, ‘‘এখন হয়তো পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। তবে আমার এটা করতে গিয়ে এই খাতের বড় সম্ভাবনা দেখেছি। কর্মসংস্থানের বড় একটা ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।”

উৎপাদনকারীরা বলছেন তারা এরইমধ্যে হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে রবিবার পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন স্থগিত রেখেছেন। ঢাকার বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায় রবিবার পাস্তুরিত দুধ বিক্রি হয়নি।

এদিকে মিল্কভিটা আপিলের আবেদন করলে চেম্বার জজ হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা ৮ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন। শুধুমাত্র মিল্কভিটাই আগামী আট সপ্তাহ পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রি করতে পারবে।

প্রাণ-এর পরিচালক (মার্কেটিং) কামরুজ্জামান কামাল জানিয়েছেন তারাও আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা রবিবার থেকে পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। তবে তিনি দাবি করেন, ‘‘আমাদের দুধ নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই আমরা সঠিক মান অনুযায়ী পাস্তুরিত দুধ উৎপাৎদন করি।”

তিনি জানান, ‘‘আমরা সবাই মিলে প্রতিদিন ১০ লাখ লিটার পাস্তুরিত দুধ বাজারে দেই। এর ক্রেতা শহরে বেশি৷” তিনি আরো বলেন, ‘‘এর ফলে প্রান্তিক খামারিরা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বেন।”

দুধ প্রয়োজন। কিন্তু তাতে আবার সিসা এবং অ্যান্টিবায়োটিকসহ ক্ষতিকর উপাদান। এই উভয় সংকট থেকে বের হওয়ার পথ কী? এর জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সদ্য সাবেক পরিচালক ও ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ‘‘পাস্তুরিত দুধ মোট উৎপাদিত দুধের সামান্য একটি অংশ। ১০ ভাগ হতে পারে। আর এই দুধে অ্যান্টিবায়োটিক এবং সিসা সাধারণত খামারি পর্যায়ে আসেনা। এটা পাস্তুরিত করার প্রক্রিয়ার মধ্যেই মেশে। সাত দিনে এর সমাধান করা সম্ভব। প্রতিষ্ঠানগুলো যদি তাদের মেশিন সংস্কার করে তাহলেই সমস্যা মিটে যাবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘‘তবে খামারিদের মনিটর করতে হবে। তারা কী খাবার খাওয়াচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ। মানবদেহের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক গরুকে দেয়া হচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে।”

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button