আন্তর্জাতিক

আসাম থেকে ৩০ বাংলাদেশিকে বহিষ্কার

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের করিমগঞ্জের কর্মকর্তারা ৩০ বাংলাদেশি নাগরিককে সীমান্তের অন্য পারে বাংলাদেশের বিজিবির হাতে তুলে দিয়েছেন।

আসামের করিমগঞ্জ জেলা প্রশাসন বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ৩০ বাংলাদেশি নাগরিককে সীমান্তের ওপারে জকিগঞ্জে বিজিবির হাতে তুলে দেয়; যারা গত বেশ কয়েক মাস ধরে আসামের বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে আটক ছিলেন।

আসাম পুলিশ সূত্রে বিবিসিকে জানানো হয়, ‘ডিপোর্ট’ বা বহিষ্কার করা এই ৩০ জনের সবাই অবৈধভাবে ভারতে ঢুকেছিলেন।

আর সেই অপরাধে জেল খাটার পর বাংলাদেশে তাদের ঠিকানা ও পরিচয় যাচাই করেই এদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশের জকিগঞ্জ সার্কেলের পুলিশ কর্মকর্তারাও এই ডিপোর্টেশনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তবে আসামের কিছু রাজনীতিবিদ বলছেন, ২০-৩০ বাংলাদেশিকে ডিপোর্ট করা গেলেও লাখ লাখ কথিত বিদেশি নাগরিককে কখনই সে দেশে পাঠিয়ে দেয়া সম্ভব নয়।

গত মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই আসামের সুতারকান্দি সীমান্ত চেকপোস্ট পেরিয়ে ২১ বাংলাদেশি নাগরিককে সে দেশে ডিপোর্ট করা হয়েছিল। তার আড়াই মাসের মধ্যে এদিন করিমগঞ্জ থেকে আবার ৩০ বাংলাদেশিকে নিজের দেশে ফেরত পাঠানো হলো, যাদের মধ্যে ২৬ মুসলিম ও চারজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী।

তারা সবাই আসামের শিলচর, কোকরাঝাড়, গোয়ালপাড়া, তেজপুর বা জোড়হাটের বিভিন্ন বিদেশি ডিটেনশন সেন্টারে আটক ছিলেন।

অবৈধভাবে ভারতে ঢোকার দায়ে পাসপোর্ট আইনে তাদের ন্যূনতম ছয় মাসের মেয়াদে জেলও খাটতে হয়েছে।

তার পর বাংলাদেশ উপদূতাবাসের মাধ্যমে সে দেশে তাদের নাম-ঠিকানা যাচাই করেই আজ এই ডিপোর্টেশন সম্পাদিত হয়।

করিমগঞ্জ জেলার পুলিশপ্রধান মানবেন্দ্র দেবরায় জানিয়েছেন, এদিন (বৃহস্পতিবার) বেলা ১১টা নাগাদ করিমগঞ্জে পাসপোর্ট অ্যান্ড ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের (পিসিআইপি) মাধ্যমে এ বিদেশি নাগরিকদের আমরা সীমান্তের ওপারে জকিগঞ্জ বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিজিবির হাতে তুলে দিয়েছি।

‘এরা কেউ দুই বছর, কেউ বা হয়তো তিন বছর আগে বেআইনিভাবে ভারতে ঢুকেছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘পাসপোর্ট অ্যাক্টে কমপক্ষে ছয় মাস জেল খাটার পরও নানা কারণে তাদের ডিপোর্টেশনের প্রক্রিয়াটা আটকে ছিল।’

মানবেন্দ্র দেবরায় আরও বলেন, ‘আমরা যেটি করি, যখনই আমরা অবৈধ বাংলাদেশিদের ধরতে পারি এবং জেরার মুখে তারা স্বীকার করে যে তাদের আসল বাড়ি ধরা যাক মৌলভীবাজারের অমুক গ্রামে, তখনই আমরা স্থানীয় বাংলাদেশ মিশন ও বিজিবিকে সেই তথ্যটা জানাই।’

‘তার পর বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ এনকোয়ারি করে যখন আমাদের জানান যে হ্যাঁ, ওই লোক আমাদেরই, তখন আমরা তাদের যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করি,’ বলেন করিমগঞ্জের পুলিশ সুপার।

এদিকে বাংলাদেশে সিলেট ডিভিশনে জকিগঞ্জ থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান হাওলাদারও এই ৩০ নাগরিককে হাতে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এই মানুষগুলোকে এখন নিজ নিজ অভিভাবকের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে বলেও তারা জানিয়েছেন।

সিটিজেনস রাইটস প্রোটেকশন কমিটি (আসাম) নামে একটি সংগঠন ওই রাজ্য থেকে অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর আন্দোলনে যুক্ত।

তারাও বলছে, রাজধানীর গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের একটি উপদূতাবাস চালু হওয়ার পর থেকেই কথিত বাংলাদেশিদের পরিচয় যাচাইয়ের কাজে অনেক গতি এসেছে।

সংগঠনের মহাসচিব সাধন পুরকায়স্থ জানাচ্ছেন, ‘এই অ্যাসিস্ট্যান্ট হাইকমিশন চালু হওয়ার পর থেকে এযাবত ১২৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো গেছে।’

তবে আসামে আসন্ন এনআরসি বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জি থেকে যাদের নাম বাদ পড়বে, সেই লাখ লাখ লোককে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো কিছুতেই সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিরোধী দল কংগ্রেসের মুখপাত্র ও শিলচরের সাবেক এমপি সুস্মিতা দেব।

তিনি বলছিলেন, ‘প্রথম কথা হলো- এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা এখনও বেরোয়নি। কাজেই আজকের এই ডিপোর্টেশনের সঙ্গে এনআরসির সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই।’

‘আর বাংলাদেশ তো বলেইছে, তারা যদি তদন্ত করে দেখতে পায় অমুক লোকটা তাদের দেশের কোনো গ্রামের, তা হলে তারা তাকে ফেরত নিতে রাজি আছে।’

‘কিন্তু এটা ২০ জন, ৫০ জন কি ১০০ জনের ক্ষেত্রে হয়তো ঠিক আছে।’ ‘সংখ্যাটা যদি ১০, ২০ বা ৩০ লাখ হয়, তা হলে কি ভেবেছেন বাংলাদেশ তাদের আদৌ ফেরত নেবে? কিছুতেই নয়!’

মিয়ানমার যেভাবে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফেরত নিতে গড়িমসি করছে, সেভাবেই বাংলাদেশও এই বিপুল পরিমাণ লোককে নিতে কিছুতেই রাজি হবে না বলে মিস দেবের দৃঢ় বিশ্বাস।

তিনি আরও জানাচ্ছেন, ‘তথ্য জানার অধিকারে সরকারকে প্রশ্ন করলে বা পার্লামেন্টের প্রশ্নোত্তরেই আপনি দেখতে পাবেন, গত পাঁচ বছর ধরে কিন্তু বছরে ১৫-২০ জনের বেশি লোককে বাংলাদেশে ডিপোর্ট করা সম্ভব হয়নি।’

‘আর যে লোকটা ধরা যাক পঁচাশি সালে অবৈধভাবে আসামে ঢুকে এখানেই ঘরসংসার করছে, সিলেটে যার কিছুই আর নেই, তাকে আপনি ফেরত পাঠাবেনই বা কীভাবে?’

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপির জাতীয় সভাপতি অমিত শাহ অবশ্য একাধিকবার বলছেন, এনআরসিতে যাদের নাম বাদ পড়বে তাদের বাংলাদেশেই ডিপোর্ট করা হবে।

বিজেপির প্রভাবশালী নেতা রামমাধবও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছেন, এনআরসি তালিকাভুক্ত না হলে তাদের আর কোথাও নয়, বাংলাদেশেই ফেরত পাঠানো হবে।

করিমগঞ্জ সীমান্তের এসব ছোটখাটো ডিপোর্টশনে তাদের সেই হুশিয়ারি কিছুটা বিশ্বাসযোগ্য শোনাতে পারে, এই যা।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button