গাজীপুরজেলা প্রশাসন

‘অনুদানের চেক নিয়ে’ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুবাইয়া ইয়াসমিনের আবেগঘন স্ট্যাটাস

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : আমাদের মায়া-মমতা, আবেগ-ভালোবাসা সবই কমে গেছে। একই কাজ করে দু’একজন কাঁদলেও খুশিতে আটখানা অধিকাংশরা। এমন চিত্র ফুটে উঠেছে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুবাইয়া ইয়াসমিন তমার দেয়া আবেগঘন স্ট্যাটাসটি সরাসরি তুলে ধরা হলো।

‘কর্মরত অবস্থায় কোনো সরকারি কর্মচারী মারা গেলে তার পরিবারকে আট লাখ টাকার অনুদান দেয়া হয়। ডিসি অফিসের সাধারণ শাখা থেকে এই অনুদানের চেকগুলো বিতরণ করা হয়। আর গাজীপুর ডিসি অফিসে প্রায় ১০ মাস সহকারী কমিশনার (সাধারণ শাখা) হিসেবে কাজ করার সুবাদে অসংখ্য মানুষকে এই অনুদানের চেক বিতরণের অভিজ্ঞতা হয়েছে। অথচ অদ্ভুত লাগে, এ পর্যন্ত শুধুমাত্র একজন মাকে দেখেছিলাম তার মৃত মেয়ের অনুদানের চেক নিতে এসে মেয়ের জন্য হাউমাউ করে কাঁদছিলেন।

আর কোনো কোনো স্ত্রীর মুখে একটু চিন্তার ছাপ দেখা যায় ছেলেমেয়ে নিয়ে, বাকি জীবনের রুজি কীভাবে যোগাবেন সেজন্য, মৃত স্বামীর জন্য নয়। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখি, স্বজনরা বিশেষ করে স্বামী এবং সন্তানরা আট লাখ টাকার চেক পেয়ে খুশিতেই আটখানা হয়ে যায়, যার জন্য টাকাটা পাচ্ছে তার কথা ভেবে মন খারাপ করার সময় কোথায়?

সেদিন দেখি ১৮ বছরের এক মেয়ে এসেছে মৃত মায়ের চেক নিতে, কিন্তু তার ভাব আর খুশি দেখে মনে হচ্ছে ও (মেয়েটি) নিজের ডান্স কম্পিটিশনের প্রাইজ নিতে এসেছে! আসলে মানুষ এই স্বার্থের দুনিয়ায় কার জন্য এত কষ্ট করে? কার জন্য এত মায়া করে? সবাই তো শুধু তার লাভের অংশটুকুই বুঝে নিতে চায়। স্বার্থ ফুরালে কে তাকে মনে রাখে? এখানে আবেগ, ভালোবাসা, মায়ার জায়গাটা আসলে কোথায়? এ পৃথিবীতে কে থাকলো, কে গেল তাতে আদৌ কি কারো কিছু আসে যায়?

এই স্ট্যাটাসে অনেকেই তাদের মতো করে কমেন্টস দিয়েছেন। কমেন্টস এ জাহিদ ইমরান নামের একজন লিখেছেন,‘ঐ রকম ডান্স কম্পিটিশন ছেলেমেয়ে আর স্ত্রীর জন্য কত না দুর্নীতি করে গাড়ি-বাড়ি করে যাই, একমাত্র মা-ই তার সন্তানের জন্য আর্তনাদ করে। আর সেই মাকেই অনেক ছেলেমেয়েরা আজ খোঁজ রাখে না। স্বার্থের দুনিয়ায় কেউ কারো নয়।

শারমিন মিতু নামে একজন তার কমেন্টসে লিখেছেন, ‘ঠিক এই কথাটাই আম্মু বলেছিল, যখন আব্বুর পেনশনের টাকাটা তুলতে গিয়েছিল। আসলেই কীভাবে সম্ভব? আব্বুর পাওয়া টাকাটা আজো তুলি নি। কিন্তু দেখো যদি অভাব থাকতো কিংবা আব্বু অনেক দেনা করে যেত ঠিকই তুলতে হতো। আসলে দুনিয়ার নিয়ম এটা। মানুষ চলে গেলে কেউ-ই মনে রাখে না। আরেকটা ব্যাপার দেখলাম, মানুষ কীভাবে পারে, মরা মানুষের পেনশনের টাকায় ঘুষ দাবি করতে। এরা ভুলেই যায় কয়দিন পর এরাও মরবে এবং এদের বউ বাচ্চাও এই টাকা তুলতে আসবে। বিভিন্ন টেবিলে যে পরিমাণ অ্যামাউন্ট ঘুষ দিতে হয় একটা ফাইল ছাড়ানোর জন্য….! আগে শুনেছিলাম এখন বুঝছি। ইস- তুই যে কেন আমার এলাকায় থাকলি না, অন্তত যে টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে, তা এতিমখানায় দিতে পারতাম।

আবু জাহের সুমন লিখেছেন, ‘প্রিয়জন হয়েছি, সময়ের চাহিদায়। সবই ক্ষণিকের মায়া’।

 

সূত্র: মানবজমিন 

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button