আলোচিত

ছোট-বড় হাজারো অপরাধে জড়িয়েও পুলিশের এক শাস্তি ‘সাময়িক বরখাস্ত’!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : হাজারো অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ পাওয়া যায় পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে। মাদক বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন, ছিনতাই, নির্যাতন, ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া, যৌন হয়রানি এমনকি ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগও রয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতরের বার বার কঠোর সর্তকতা, নির্দেশনার পরেও থেমে নেই পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অপরাধ কর্ম। তবে অপরাধ করে পার পায়নি তারা। এসেছে শাস্তির আওতায়। কিন্ত সেই শাস্তি অপরাধের তুলনায় খুবই নগণ্য।

পুলিশ সদস্যদের অপরাধ আর শাস্তি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বড় অভিযোগ প্রমাণিত হলে পুলিশ সদস্যদের যে বিভাগীয় শাস্তি দেওয়া হয় সেটা শুধুই ‘সাময়িক বরখাস্ত’।

তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে ১২ হাজার ৭৩৩ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শাস্তি নামমাত্র। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের এক শতাংশেরও চাকরি যায়নি। সাময়িক বরখাস্ত বা দূরে কোথাও পোস্টিংয়ে আটকে আছে পুলিশের যত অপরাধ।

অথচ পুলিশ প্রবিধান বলছে উল্টো কথা, পিআরবি-১৮৬১ (পুলিশ প্রবিধান) অনুযায়ী কোন পুলিশ সদস্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়ালে তার বিরুদ্ধে দুই ধরনের বিভাগীয় শাস্তির (লঘু ও গুরু) বিধান আছে। গুরুদণ্ডের আওতায় চাকরি থেকে বরখাস্ত, পদাবনতি, পদোন্নতি স্থগিত, বেতন বৃদ্ধি স্থগিত ও বিভাগীয় মামলা হয়। যেটা এই হাজারো অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দেখা যায় নাই বললেই চলে।

তবে ছোট অনিয়ম বা অপরাধের জন্য দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার, অপারেশনাল ইউনিট থেকে পুলিশ লাইন্স বা রেঞ্জে সংযুক্ত করে লঘুদণ্ড দেওয়ার যে বিধান রয়েছে সেই সংখ্যাটিই সিংহভাগ।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র বলছে, গত ৯ বছরে ১ লাখ ৫০ হাজারের কিছু বেশি পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নানা অপরাধে জড়ানোর অভিযোগ ওঠে। সত্যতা প্রমাণ শেষে, তাদের মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার ১৯১টি ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। কিন্ত সেই শাস্তির হাতেগোণা কয়েকজন ছাড়া বাকি সবারই বড় অপরাধের জন্য শাস্তি হয়েছে সাময়িক বরখাস্ত।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, অপরাধের ওপর ভিত্তি করে পুলিশের সদস্যদের শাস্তি হয়। বিভাগীয় শাস্তির ক্ষেত্রে সাধারণত দায়িত্বে অবহেলা, ক্ষমতার অপব্যবহার, অপেশাদার আচরণ, উৎকোচ গ্রহণ ইত্যাদি গুরুত্ব পায়। তাছাড়া গুরু অপরাধে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ারও বিধান আছে।

তবে এসব ঘটনায় পুলিশ নিয়ে কাজ করা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, পুলিশ ছোট অপরাধ করলে কোন কোন ক্ষেত্রে কিছু সময়ের জন্য তাদের কোথাও সংযুক্ত করা হয়। বড় অপরাধ করেও খুব কমসংখ্যক ঘটনায় পদাবনতি হয়, ইনক্রিমেন্ট কাটা পড়ে। কিন্তু পুলিশ বাহিনী থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা নেই বললেই চলে। সাধারণত সাময়িক বরখাস্ততেই আটকে থাকে তাদের ফাইল।

একই বিষয়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মাদ বলেন, একটা সংখ্যক পুলিশ সদস্য অপরাধে জড়িয়েছে, আবার তাদের শাস্তি হচ্ছে। এর মানে পুলিশ জবাবদিহিতার আওতায় আছে। সবসময় যে বড় শাস্তি হয় বিষয়টা এমন না। তবে বিভাগীয় শাস্তি হয় না এমন ঘটনাও নেই।

সাবেক আইজিপি আরো বলেন, পুলিশের ভাবমূর্তি উদ্ধারে পুলিশ বাহিনীকেই এগিয়ে আসতে হবে। তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলেই অপরাধ প্রবণতা কমবে৷

 

সূত্র: বার্তা টোয়েন্টিফোর

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button