আইন-আদালত

‘কিছু ওসি, ডিসি’ নিজেদের জমিদার মনে করেন: হাইকোর্ট

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : হাইকোর্ট বলেছেন, ‘কিছু কিছু ওসি, ডিসি আছেন, যাঁরা নিজেদের জমিদার মনে করেন। তাঁরাই সব, এমন ভাব দেখান। সবার কথা বলছি না, কিছু কিছু ওসি, ডিসি আছেন, এমন। অন্যান্য দেশেও যে নেই তা নয়, তবে আমাদের এখানে বেশি।’

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানের বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন চেয়ে করা আবেদনের শুনানিতে মঙ্গলবার বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব কথা বলেন। ওসি মোয়াজ্জেমের জামিন চেয়ে করা আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি বলে খারিজ করেন আদালত।

শুনানিতে আদালত আরও বলেন, ‘ভুক্তভোগী (নুসরাত) থানায় যাওয়ার পর তাকে সুরক্ষা দেওয়া হলে, হয়তো ঘটনা এত দূর যেত না। তিনি (ওসি) পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গত ১৬ জুন গ্রেপ্তার হন ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম। পরদিন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে তাঁকে হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনাল তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর গত ৩০ জুন জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন মোয়াজ্জেম, যার ওপর গতকাল শুনানি হয়।

আদালতে মোয়াজ্জেমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আহসান উল্লাহ, সঙ্গে ছিলেন সালমা সুলতানা। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মহিউদ্দিন দেওয়ান।

শুনানিতে মোয়াজ্জেমের আইনজীবী বলেন, যে ধারায় মামলা হয়েছে, তাতে সাজা মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন নয় যে তাঁকে জামিন দেওয়া যাবে না। তাঁর বয়স হয়েছে। কানে ফুটো আছে, কানে কম শোনেন। তাঁর হার্টেও সমস্যা আছে।

একপর্যায়ে আদালত বলেন, কানে কম শুনলে ওসি থাকেন কীভাবে?

তখন মোয়াজ্জেমের আইনজীবী বলেন, উনি পুলিশের লোক, সাময়িক বরখাস্ত। তবে জামিন পেলে পালিয়ে যাবেন না। তাঁর কাছ থেকে ভিডিওটি নিয়ে একজন সাংবাদিক তা ভাইরাল (ছড়িয়ে দেওয়া) করেন। এখন প্রচুর টিভি, সাংবাদিকদের সংখ্যাও বেশি। যেন তেলাপিয়া মাছ চাষের মতো অবস্থা।

একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘সাংবাদিকেরা সমাজের দর্পণ। তাঁরা না থাকলে সমাজের এসব ঘটনা এভাবে প্রকাশ পেত না।’

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, তাঁকে (ওসি) জামিন দেওয়া হলে সমাজে কী বার্তা যাবে?

ভিডিও ধারণ ও ভাইরালের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, পুলিশ কর্মকর্তার এমন দায়িত্বহীন কাজ আগে দেখা যায়নি। ভিডিওতে অশ্লীলতা আছে। অবান্তর প্রশ্ন করবে, মজা করবে? কী ভূমিকা পালন করার কথা আর ওসি কী করেছেন? দায়িত্ব বা ক্ষমতা থাকার পরও কেউ যদি সে কাজটি না করে, তা অবহেলা।

গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহানের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এর পাঁচ দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। নুসরাত তাঁর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানাতে সোনাগাজী থানায় যান। ওসি মোয়াজ্জেম নুসরাতকে আপত্তিকর প্রশ্ন করে বিব্রত করেন এবং তা ভিডিও করে ছড়িয়ে দেন। এ ঘটনায় ওসির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button