কাজী আজিমউদ্দিন কলেজের ‘উপাধ্যক্ষ’ নিজেকে অধ্যক্ষ পরিচয় দিয়ে বেড়ান!
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : গাজীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কাজী আজিমউদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ নন এমন একজন শিক্ষক নিজেকে অধ্যক্ষ হিসাবে পরিচয় দিচ্ছেন। খোদ প্রশাসন থেকেই এই অভিযোগ ওঠেছে।
ঐতিহ্যবাহী এই কলেজের অধ্যক্ষ পদ খালি দুই বছর যাবত। বর্তমানে অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। উপাধ্যক্ষ হারুন-অর-রশিদ নিজে অধ্যক্ষ পদে প্রার্থী হওয়ায় সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক এ কে এম হুমায়ুন কবীর ভূঞাকে কলেজ পরিচালনা কমিটি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেন।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে হুমায়ুন কবীর থাকলেও সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন উপাধ্যক্ষ। এমনকি সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে তিনি নিজেকে অধ্যক্ষ হিসাবে পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছেন। গত ২৮ জুন কলেজ কেন্দ্রে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষা তদারকিতে এসে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেবেকা সুলতানা ধাঁধাঁয় পড়েন।
দুই দিন আগে অধ্যক্ষ পরিচয় দিয়ে যিনি কথা বলেছেন তাকে দেখছেন উপাধ্যক্ষের চেয়ারে। আর অধ্যক্ষের চেয়ারে ভিন্নজন (একেএম হুমাযুন কবীর)। উপাধ্যক্ষের প্রতারনা বুঝতে পেরে ওই কর্মকর্তা তাঁর (উপাধ্যক্ষের) নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিরস্কার করেন।
এ ঘটনার সূত্র ধরে এই প্রতিবেদক শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন সর্বত্র একই চিত্র। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এম, আবু ওবায়দা আলী বলেন, আমরাও ত জানি হারুন-অর- রশিদ কাজী আজিমউদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ। তিনি অধ্যক্ষ পরিচয় দিয়ে আমাদের সঙ্গে দাপ্তরিক কাজ-কর্ম করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করেন, একেএম হুমাযুন কবীর নামেই অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত)। অধ্যক্ষের পাশেই একটি চেয়ার সংরক্ষিত রেখে সেখানে বসে উপাধ্যক্ষ কলেজ চালান। অথচ উপাধ্যক্ষের আলাদা কক্ষ আছে।
অধ্যক্ষের ফাইল কেবিনেটের চাবি উপাধ্যক্ষ নিজের কাছে রেখেছেন। এমনকি নিজে প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও অধ্যক্ষ নিয়োগের আবেদনপত্রগুলো উপাধ্যক্ষ নিজের দখলে রেখেছেন। প্রকাশ্যে ওই সব আবেদনপত্র তিনি ঘাঁটাঘাঁটি করেন। এসব নিয়ে কোন শিক্ষক প্রতিবাদ করলে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দেন।
উপাধ্যক্ষের নিয়ম-নীতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন ও বেপরোয়া ভাবের চিহ্ন বহন করছে শিক্ষক হাজিরার খাতাটি। গত মে ও জুন মাসের হাজিরায় উপাধ্যক্ষ নিজের নাম সকলের উপরে লিখিয়ে তিনি তাতে স্বাক্ষর করেন। এটি শিক্ষকদের গোচরে আসলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক স্বাক্ষর দানে বিরত থেকে প্রতিবাদ জানান। পরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের হস্তক্ষেপে ফ্লুইড দিয়ে মুছে নাম সংশোধন করা হয়।
এছাড়া উপাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, নারী শিক্ষকদের নিয়ে অশালীন শব্দ প্রয়োগের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। নারী শিক্ষকদের সঙ্গে যে ভাষা উপাধ্যক্ষ ব্যবহার করেন তা ‘ইভ টিজিংয়ের’ পর্যায়ে পড়ে। একাধিক নারী শিক্ষক এ ব্যাপারে সদ্য সাবেক জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে মৌখিক অভিযোগ করেন। জেলা প্রশাসক ওই নারী শিক্ষকদের লিখিত অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য নারী শিক্ষকরা মান-সম্মানের কথা বিবেচনা করে আর আবেদন করেননি।