টঙ্গী পাইলট স্কুলের লাগামহীন অনিয়ম দুর্নীতি: তদন্তে নেমেছে শিক্ষা অধিদপ্তর
বিশেষ প্রতিনিধি : ‘টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজে’র দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আশিকুল হক গত মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটিতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করতে ‘টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ’ পরিদর্শন করেন ।
তিনি জানান, প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষনিকভাবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য সময় চেয়েছেন। কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর এব্যাপারে বিস্তারিত জানানো যাবে।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা বোর্ডের কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করে না বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি গঠন ও অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধের দাবীতে গত সোমবার স্কুল প্রাঙ্গনে সমাবেশ করেন ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। সেখানে টঙ্গী থানা যুবলীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তার মোল্লাকে আহ্বায়ক ও টঙ্গী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শাহজাহান সিরাজ সাজুকে সদস্য সচিব করে ২১ সদস্যের অভিভাবক ফোরাম গঠন করা হয়।
অভিভাবকরা জানান, বিগত প্রায় ১০ বছর ধরে পূর্ণাঙ্গ কোন কমিটি ছাড়াই কথিত এডহক কমিটির নামে প্রতিষ্ঠানটিতে লুটপাট চালানো হচ্ছে। অস্বচ্ছ ও অবৈধ প্রক্রিয়ায় বিনা টেন্ডারে একাডেমিক ভবন নির্মাণসহ কোটি কোটি টাকার কাজ করা হচ্ছে। অধ্যক্ষ ও কথিত এডহক কমিটির বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানের মাঠে অসংখ্য দোকানপাট বসিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে বাজারে পরিণত করা হয়েছে। খেলার মাঠে আড্ডার জায়গা তৈরি করে দিয়ে ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকার যুব সমাজকে বিপদগামী করা হচ্ছে। মাঠের উত্তর পাশে ঝুঁকিপূর্ণ একতলা ভবনের ছাদে প্ল্যান বর্হিভূতভাবে দ্বিতল মার্কেট করা হচ্ছে। সেখানে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অগ্রিম হিসেবে মোটা অংকের টাকা নিয়ে কুক্ষিগত করা হচ্ছে। মসজিদ নির্মাণের নামে অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠানের পুকুর ভরাট করা হলেও এখনো সেখানে মসজিদ নির্মাণের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বরং পুরনো মসজিদ সংস্কার করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের মাঠ দখল করে অধ্যক্ষ ও তার ভাই যৌথ অংশিদারিত্বে চাইনিজ রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করেছেন।
প্রতিষ্ঠানটিতে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে তহবিল তসরুফ করা হচ্ছে। অনেক শিক্ষকই ক্লাশ নেন না। এমনকি ক্লাশ রুটিনে অনেকের নামও নেই এবং শিক্ষার্থীরাও তাদেরকে চিনেন না। তারা প্রতিষ্ঠানে না এসে মাস শেষে এক দিনেই হাজিরা খাতায় পুরো মাসের স্বাক্ষর দিয়ে বেতন ভাতা ভোগ করছেন। কলেজ শাখার ক্লাশ হয় সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। অথচ কলেজ শাখার অভিযুক্ত শিক্ষক আমজাদ হোসেন নিয়মিত বিকেলে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। কোন ক্লাশ রুটিনেও তার নাম নেই। তিনি কলেজ শাখায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান ১৯৯২ সালে। অথচ তিনি একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স ডিগ্রীর সনদ লাভ করেন ১৯৯৬ সালে। তার মত আরো অনেক শিক্ষকই কলেজ শাখায় একই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ লাভ করেছেন এবং আমজাদ হোসেনসহ কয়েকজন শিক্ষক একইসাথে স্কুল ও কলেজ শাখা থেকে দ্বৈত বেতন ভোগ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি, অনিয়ম ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে পদোন্নতি প্রদান ও প্রতিষ্ঠানটিতে মারাত্মক বেতন বৈষম্যেরও অভিযোগ রয়েছে। অধ্যক্ষ নিজেই প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে মাসিক এক লাখ ১০ হাজার এবং এমপিও বা সরকারি অংশের বেতন উত্তোলন করেন ৪২ হাজার টাকা। অর্থাৎ দেড় লাখ টাকার বেশি বেতন পান অধ্যক্ষ। তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগলাভের আগে প্রতিষ্ঠানটিতে তার এক সন্তানকে সাময়িকের জন্য ভর্তি করে বিশেষ আর্শিবাদপুষ্টে পরিচালনা কমিটির অভিভাবক সদস্য মনোনীত হন। প্রদর্শক জাফর আহমেদ প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে মাসে ২২ হাজার ও এমপিও থেকেও পান ২২ হাজার টাকা বা মোট ৪৪ হাজার টাকার বেতন। অথচ কলেজ শাখার একজন প্রভাষকও প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে মাসে ৯ হাজার টাকাও পান না। বর্তমান অধ্যক্ষ যোগদানের পর প্রতিষ্ঠানটিতে মাদকাসক্ত, বেয়াদব, অপেশাদার ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেও অভিভাবকরা অভিযোগ করেন। একজন শিক্ষককে ইতিমধ্যে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে (রিহাব) ভর্তি করা হয়েছিল বলেও অভিভাবকরা জানান।
এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দিন মিয়া এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কমিটিতে স্থান না পেয়ে অনেকে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।