সারাদেশে ৬ মাসে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ২০৪
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : সারাদেশে গত ছয় মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২০৪ জন নিহত হয়েছেন বলে মানবাধিকার সংস্থা-আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। আসকের প্রতিবেদনে গত ছয় মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।
সোমবার (১ জুলাই) সন্ধ্যায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের মধ্যে র্যাবের সঙ্গে ৫৯ জন, পুলিশের সঙ্গে ৯২ জন, ডিবির সঙ্গে ১২ জন, যৌথবাহিনীর সঙ্গে একজন, কোস্টগার্ডের সঙ্গে একজন ও বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২৮ জন নিহত হন। এছাড়া পুলিশের নির্যাতনে দু’জন ও গুলিতে দু’জন, বিজিবির গুলিতে তিন জন, পুলিশি হেফাজতে আত্মহত্যা করেছেন একজন এবং দুজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার ও র্যাব হেফাজতে অসুস্থ হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রতিবেদনের বিভিন্ন বিভাগের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিচে তুলে ধরা হলো:
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে অপহরণ বা আটক
পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ অনুযায়ী, সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ৯ জনকে আটক করেছে। এর মধ্যে পরবর্তী সময় দু’জন ফেরত এসেছেন এবং একজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এসব আটকের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
কারা হেফাজতে মৃত্যু
২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে কারা হেফাজতে মারা গেছেন ৩০ জন। এর মধ্যে কয়েদি ১০ জন এবং হাজতি ২০ জন।
রাজনৈতিক সংঘাত
রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ১৩৪টি। এতে নিহত হয়েছেন ৩০ জন এবং আহত হয়েছেন ১ হাজার ৫৩০ জন।
নারী নির্যাতন
এই সময়ের মধ্যে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা, ধর্ষণ ও হত্যা, পারিবারিক নির্যাতন, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, গৃহকর্মী নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপসহ নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটেছে।
যৌন হয়রানি ও সহিংসতা
যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১২৭ জন নারী। এর মধ্যে যৌন হয়রানির কারণে আট জন আত্মহত্যা করেছেন। প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিন জন নারী ও দু’জন পুরুষ নিহত হয়েছেন। এছাড়া হয়রানি ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন ১২৪ জন।
ধর্ষণ ও হত্যা
ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬৩০ জন নারী। এর মধ্যে ৩৭ জন নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন সাত জন। এছাড়াও ১০৫ জন নারীর ওপর ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে।
পারিবারিক নির্যাতন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৯২ জন নারী। এর মধ্যে ১৩৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আত্মহত্যা করেছেন ২৬ জন এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২৯ জন নারী।
যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতন
যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮৮ জন নারী। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩১ জন। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছেন ৫১ জনকে, যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন দু’জন নারী। এছাড়াও স্বামীর গৃহ থেকে বিতাড়িত হয়েছেন চার জন।
গৃহকর্মী নির্যাতন
মোট ১৫ গৃহকর্মী বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এছাড়া রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে পাঁচ জনের।
এসিড নিক্ষেপ
সারাদেশে গত ছয় মাসে ১১ জন নারীর ওপর এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
শিশু নির্যাতন ও হত্যা
দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশু হত্যা এবং নির্যাতনের সংখ্যা আশঙ্কাজনক। ছয় মাসে ৮৯৫ জন শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ১০৪ জন হত্যার শিকার হয়েছে, আত্মহত্যার শিকার হয়েছে ৪০ জন, নিখোঁজের পর একজন এবং বিভিন্ন সময়ে ১৭ শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছে ৪১ শিশুর।
ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন
হিন্দু সম্প্রদায়ের ২৮টি প্রতিমা ভাঙচুর, মন্দির-পূজামণ্ডপে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৯ জন। এছাড়ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ১৬টি বসতঘর ও চারটি দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন ৫০ জন।
সাংবাদিক নির্যাতন
গত ছয় মাসে ৫৫ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। এছাড়াও একজন সাংবাদিকের রহস্যজনক মৃত্যু এবং আরেকজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
সীমান্ত সংঘাত
সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে নিহত হয়েছে ২০ জন। এর মধ্যে ১৮ জন গুলিতে এবং শারীরিক নির্যাতন করে দু’জনকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন পাঁচজন এবং অপহরণের শিকার হয়েছেন ১৯ জন।
গণপিটুনি
সারাদেশে গণপিটুনির ঘটনায় মারা গেছেন ৩৬ জন।