১৯৯২ বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের কাছে হার ভারতের
গাজীপুর কণ্ঠ, খেলাধুলা ডেস্ক : মাঠে খেলছিলেন বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মারা, প্রার্থনায় পুরো উপমহাদেশ! শুধু ক্রিকেট নয়, সব ধরনের খেলা মিলেই হয়তো এই প্রথম কোনো ম্যাচের ভারতের জয় কামনা করেছে পুরো উপমহাদেশ। দর্শকের ভূমিকায় থাকা বাংলাদেশ, পাকিস্তান কিংবা শ্রীলঙ্কা—সবার সেমিফাইনাল ভাগ্যই যে এ ম্যাচের ওপর নির্ভর করছে! ১৭৬ কোটি মানুষ অধ্যুষিত মানুষের প্রার্থনা কাজে আসেনি। ইংল্যান্ডের কাছে ৩১ রানে হেরে গেছে ভারত। ১৯৯২ বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের কাছে হারল ভারত।
৩৩৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে হলে রেকর্ড বইয়ের বেশ কিছু পাতায় ওলট-পালট আনতে হতো বিরাট কোহলির দলকে। বিশ্বকাপে রান তাড়া করে জেতার নতুন রেকর্ড লিখতে হতো, এজবাস্টনে পাঁচ বছর পর ইংল্যান্ডকে পরাজয়ের স্বাদও দিতে হতো। কোনোটিই পারেনি এ ম্যাচের আগ পর্যন্ত টুর্নামেন্টে অপরাজিত থাকা ভারত। ৫০ ওভার শেষে থেমেছে ৫ উইকেটে ৩০৬ রানে। ফলাফল, বাংলাদেশ-পাকিস্তানের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে সেমিফাইনালের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেল স্বাগতিকেরা। আর আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর চতুর্থ দল হিসেবে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে শ্রীলঙ্কার।
৪০ ওভার শেষেও মোটামুটি সমানতালেই রান তুলছিল ভারত। ডেথ ওভার শুরুর আগে ইংল্যান্ডের রান ছিল ২৪৫, ভারতের ২৩৪। পার্থক্যটা গড়ে দিয়েছে দুই দলের ডেথ ওভার বোলিং। ভারতের হয়ে যশপ্রীত বুমরা একা চেষ্টা করেছিলেন, আর ইংল্যান্ড এগিয়েছে ‘দশে মিলি করি কাজ’ নীতিতে। লিয়াম প্লাংকেট, জফরা আর্চার, আদিল রশিদ প্রত্যেকেই দুর্দান্ত বল করেছেন। কেন তাঁকে সময়ের অন্যতম প্রতিভাবান বোলার ভাবা হচ্ছে সেটি আরেকবার দেখিয়েছেন আর্চার। উইকেট পাননি একটিও, কিন্তু দারুণ নিয়ন্ত্রিত সব স্লোয়ারে বেঁধে রেখেছিলেন ভারতের রানের চাকা।
হার্দিক পান্ডিয়া-মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো হার্ডহিটার ব্যাটসম্যানদের একদমই হাত খুলতে দেননি ইংলিশ পেসাররা। একের পর এক স্লোয়ারে ঠিকমতো ব্যাটে-বলেই করতে পারছিলেন না ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। ক্রমাগত তৈরি করা চাপের কারণে অনেকটা বাধ্য হয়েই উইকেট দিয়ে এসেছেন পান্ডিয়া-পন্তরা। শেষ ৫ ওভারে যেখানে চার-ছয়ের ফুলঝুরি ছোটানোর কথা, সেখানে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা মারতে পেরেছেন মাত্র ৩টি চার ও একটি ছয়! শেষ ৩০ বলের মধ্যে সিঙ্গেলই নিয়েছেন ২০টি। এমন ব্যাটিং দিয়ে ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা ছিল না কোহলিদের।
ব্যাটিংয়ে নেমেও আজ তেড়েফুঁড়ে শুরু করতে পারেনি ভারত। প্রথম ১০ ওভারে দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন নতুন বলের দুই বোলার ক্রিস ওকস ও জফরা আর্চার। ওকস তো ছিলেন এক কথায় দুর্দান্ত, ৫ ওভারের প্রথম স্পেলে মাত্র ৮ রানের বিনিময়ে লোকেশ রাহুলের উইকেট তুলেছেন। ভারতও ১০ ওভার শেষে তুলতে পেরেছে মাত্র ২৮ রান। এখানেই অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে ভারত। প্রথম পাওয়ারপ্লেতে ৫০ এর কাছাকাছি রান তুলতে পারলেও শেষ দিকে জমে উঠতে পারত ম্যাচটা। ইংল্যান্ডের হয়ে সেরা বোলার ছিলেন দলে ফেরা প্লাংকেট। ১০ ওভারে ৫৫ রান দিয়ে পেয়েছেন ৩ উইকেট। ওকসও ছিলেন অসাধারণ। নিজের প্রথম তিন ওভারে তো কোনো রানই নিতে দেননি ভারতকে। ১০ ওভারে ২ উইকেট পেয়েছেন, রানও দিয়েছেন মাত্র ৫৮।
ভারতকে আশা দেখাচ্ছিল রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলির দ্বিতীয় উইকেট জুটি। ২৫.৫ ওভারে ১৩৮ রান যোগ করেছিলেন দুজন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ৬৬ রান করে আউট হয়েছেন বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম অধিনায়ক হিসেবে টানা পাঁচ ইনিংসে ফিফটি করা কোহলি। পাঁচ ফিফটির একটিকেও সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে না পারার বিষয়টা নিশ্চিতভাবেই ভাবাবে ভারত অধিনায়ককে।
ইংল্যান্ডের হয়ে যেমন সেঞ্চুরি করেছেন জনি বেয়ারস্টো, ভারতের হয়ে সেটা করেছেন রোহিত শর্মা। ব্যক্তিগত চার রানে আর্চারের বলে জীবন পাওয়া রোহিত ফিরেছেন এ বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরি করে। সাধারণত সেঞ্চুরির পরেই বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন রোহিত। তবে আজ সেটি হতে দেননি ওকস, ১০২ রানেই বাটলারের ক্যাচ বানিয়েছেন ভারতীয় ওপেনারকে।
তবে বেয়ারস্টোকে যে সমর্থন দিয়েছিলেন রয়-স্টোকস, এক কোহলি ছাড়া আর কারওর থেকেই সেটি পাননি রোহিত। ৩৩ বলে ৪৫ করে পান্ডিয়া চেষ্টা করেছিলেন বটে, তবে সেটা যথেষ্ট ছিল না মোটেও। পন্ত এবং ধোনিও চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে পারেননি। ধোনির ব্যাট থেকে ইনিংসের একমাত্র ছয়টি এসেছে একদম শেষ ওভারে, ততক্ষণে ম্যাচ ভারতের হাত থেকে বেরিয়ে গেছে। বিশ্বকাপে ১২ ম্যাচ পর গ্রুপপর্বে হারের স্বাদ পেল ভারত। সবশেষ ভারত বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে হেরেছিল ২০১১ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে।
আজকের জয়ে পাকিস্তানকে টপকে চারে চলে এসেছে ইংল্যান্ড। নিজেদের শেষ ম্যাচে (৩ জুলাই) নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারলেই সেমিফাইনালে চলে যাবে ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সে ক্ষেত্রে বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাবে এক ম্যাচ হাতে রেখেই।