গাজীপুর

পুলিশ হেফাজতে থাকা কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় এক কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্যসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা হয়েছে।

মঙ্গলবার গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের (বালিকা) তত্ত্বাবধায়ক তাসনিম ফেরদৌসী বাদী হয়ে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এই মামলার তিন আসামি হলেন নাঈম হাসান নামে এক যুবক, পুলিশের নায়েক সাইদুল ও নারী কনস্টেবল রোকসানা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক মওদুদ হাওলাদার বুধবার রাতে মুঠোফোনে বলেন, মামলার এজাহারে নাম থাকা আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, অপহরণ মামলার ভুক্তভোগী হয়ে ওই কিশোরী গত বছরের ১৬ এপ্রিল গাজীপুরের কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে আসে। পরে ২৫ জুলাই ওই কিশোরীকে ঢাকার আদালতে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশের নায়েক সাইদুল ও নারী কনস্টেবল রোকসানার কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় ওই কিশোরী আসামি নাঈম হাসানের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ায়। পরে ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। ওই কিশোরী সন্তানও প্রসব করে। পুলিশের সহযোগিতার কারণে আদালতের নিরাপত্তামূলক হেফাজতে থাকা অবস্থায় এই ঘটনা ঘটেছে।

গত ১৪ জানুয়ারি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এ প্রতিবেদন দিয়ে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র জানায়, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা ওই কিশোরী ২৭ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা।

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা অবস্থায় কীভাবে কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হলো- তা তদন্ত করে সমাজসেবা অধিদপ্তরকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।

ওই কেন্দ্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১২ জানুয়ারি প্রাথমিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়, কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা। পরে কিশোরীকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে আলট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়, সে ২৭ সপ্তাহ এক দিনের অন্তঃসত্ত্বা। পরে জিজ্ঞাসাবাদে কিশোরী সব খুলে বলে।

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কাছে দেওয়া কিশোরীর জবানবন্দিও আদালতে জমা দেওয়া হয়। সেখানে কিশোরী বলেছে, গাজীপুরের শিশুকেন্দ্র থেকে বাসে করে ঢাকার আদালতে হাজিরা দিতে যায় সে। তার সঙ্গে ছিলেন পুলিশের এক পুরুষ ও এক নারী সদস্য। ঢাকার আদালতে হাজিরা দিয়ে পাশের একটি রেস্টুরেন্টে সে খেতে যায়। সেখানে দেখা হয় কিশোরীর বাবার করা অপহরণ মামলার আসামির সঙ্গে। সেই আসামিকে প্রেমিক বলে দাবি করে ওই কিশোরী। পুলিশকে ওয়াশ রুমে যাওয়ার কথা বলে প্রেমিকের সঙ্গে নির্মাণাধীন খালি রুমে কথা বলে সে। একপর্যায়ে সেখানে প্রেমিকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে। এ বিষয়টি সে সবার কাছে গোপন রাখে।

মামলার কাগজপত্র বলছে, কাফরুল এলাকায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় গত বছরের ১৭ মার্চ বাড়ি থেকে কথিত প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যায় সে। পরে কিশোরীর বাবা ঢাকার আদালতে ওই যুবকের (২৬) বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। মামলার পর ১ এপ্রিল আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করে কাফরুল থানা-পুলিশ। একই দিন কিশোরীকেও উদ্ধার করে আদালতে হাজির করা হয়। মা-বাবার কাছে যেতে না চাওয়ায় আদালতের নির্দেশে কিশোরীকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিনে মুক্তি পান আসামি নাঈম হাসান।

কাফরুল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জিল্লুর রহমান কিশোরীর কথিত প্রেমিক ওই আসামির বিরুদ্ধে গত বছরের ৩১ মে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ঘটনার সময় কিশোরীর বয়স ছিল ১৬ বছর ৭ মাস ১৫ দিন। আসামির সঙ্গে তার বিয়ের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

 

আরো জানতে……….

কোনাবাড়ীর ‘শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে’ থাকা কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা!

 

সূত্র: প্রথম আলো

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button